শাকিল রেজা, মুজিবনগর
মেহেরপুরের মুজিবনগরে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় থেকে নাম বাদ যাওয়ায় জামাত আলী (৬৫) নামের এক মুক্তিযোদ্ধার শোকে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মরহুম এর পরিবার। মুক্তিযোদ্ধা জামাত আলী গত বুধবার সকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। মুক্তিযোদ্ধা জামাত আলী মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের আনন্দবাস দক্ষিণ পাড়ার মৃত জহর বিশ্বাস এর ছেলে। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেলেও পরিবারের অভিযোগ সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই শেষে সাক্ষি দেখাতে না পারায় প্রাথমিক পর্যায়ে জামাত আলীর নাম তালিকায় থেকে বাতিল করে দেয় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি। এই শোক সইতে না পেরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি গত ৩ তারিখে একটি তালিকা প্রকাশ করে। যেখানে জামাত আলীসহ ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম বাতিলের তালিকায় আছে। মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কোন কারণে সাক্ষি জোগাড় করতে না পারায় বাতিল হয় জামাত আলীর নাম। এটা নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে জামাত আলী। পরে গত বুধবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অবশ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে জামাত আলীর ছেলে রশিদুল ইসলাম জানান, আমার আব্বার কাগজপাতি সবই ঠিক আছে, কিন্তু স্বাক্ষী না থাকায় আমার আব্বা যাচায় বাছায় কমিটির সিদ্ধান্তে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ পড়ে। সেই শোক তিনি সহ্য করতে না পেরে স্ট্রোক করে মারা যান।
জামাত আলীর মেয়ে ফুলেশরী জানান, যাচাই বাছায়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে আমার আব্বার নাম বাদ যাওয়ার পর যখন ভাতার টাকা উঠাতে গিয়ে না পায় তখন থেকে টেনশন শুরু করে দেয়।
জামাত আলীর স্ত্রী মহিলা খাতুন জানান, আমার স্বামীকে টেনশন করতে ডাক্তার নিষেধ করেছিলো। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ায় আমরা অনেক বোঝানোর পরও তাকে বোঝাতে পারিনি। তিনি সব সময় টেনশন করতো। টেনশন করতে করতে মঙ্গলবার দিনগত ভোর রাতে সে স্ট্রোক করে মারা যায়।
মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন সরকারের কাছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, জামাত আলীর বিষয়ে সিদ্ধান্তটি কমিটির সিদ্ধান্ত, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নয়। রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিনি বেসামরিক গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মান করি এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়েছি। তবে উপজেলা কমিটি নাম বাতিল করলেও এটা চূড়ান্ত না। যারা বাতিল হয়েছে তারাও সম্মানী ভাতা পাবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা জামাত আলীর একাউন্টে কোন কারণে হয়ত ভাতার টাকা এসে পৌঁছায়নি। তবে অল্প সময়ের মধ্যে এসে যাবে। এছাড়াও যারা বাদ পড়েছে তাদের আপিল করারও সুযোগ আছে।