শাকিল রেজা, মুজিবনগর:
দুই ভাই নিজের সংসার ও একমাত্র বোন স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ছোট ভাই খুদির সড়ক দুর্ঘটনায় চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে নি;স্ব হলেও প্রতিবন্ধী হয়ে জীবনাযাপন করছেন। অসহায় ভাই-বোনরা খোঁজ না নিলেও তাঁকে ছাড়তে পারেনি মমতাময়ী মা হালিমা খাতুন। ছেলের চিকিৎসার জন্য জমি জিরাত বিক্রি করেও ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে পারেননি অসহায় মা। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে অবশেষে ঠাঁই হয়েছে একটি নোংরা ডোবার পাাশে।
নিচে বাশের মাঁচা ও উপরে বস্তা দিয়ে জীর্ণ ঘর বানিয়ে সেখানে বসবাস করছেন বৃদ্ধা মা ও ছেলে। অসহায় এ গল্পটি মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার নাজিরা কোনা গ্রামে। শায়েস্তা খাঁন নামের এক জনের করুণায় মা ও ছেলের ঠাই হয়েছে সেখানে।
সরকারী ভাবে অসহায়দের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় পূনর্বাসন করা হচ্ছে। কিন্তু অসহায় এই বৃদ্ধা ও তার প্রতিবন্ধী ছেলের ভাগ্যে জোটেনি তেমন কিছুই। সমাজসেবা অধিদফতর বয়স্ক ভাতার কার্ডের টাকা ও প্রতিবেশিদের সাহায্যের টাকায় কোনরকম খেয়ে দেয়ে দিন কেটে যাচ্ছে তাদের।
সরেজমিনে গিয়ে মা হালিমা খাতুন ও ছেলে খুদির সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের জীবনের করুণ কাহিনি।
হালিমা খাতুন জানান, তার স্বামি অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ছেলে ও এক মেয়ে তার। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট খুদি। মেয়েটির বিয়ে হয়ে সে শ্বশুড় বাড়ি চলে গিয়েছে। ছেলে দুটো নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বৃদ্ধা মা ও প্রতিবন্ধী ভাইয়ের কোন খোঁজ রাখেনা তারা।
ছোট ছেলেটিই তার মায়ের দেখাশুনা করতো। কিন্তু কয়েক বছর আগে সে মাঠে কাজ করতে যেয়ে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। ঠিকমত চলাফেরাও করতে পারে না। সারাদিন শুয়ে শুয়ে তার দিন কাটে। তার নামে ভিটা জমিসহ যেটুকু জমি ছিলো সব কিছুই বিক্রি করেছেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু তাতেও তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন নি। ভিটা জমি, ঘরবাড়ি শেষ করে এখন নি:স্ব।
সহায়সম্বল বলতে ছেলের কাছে মা আর মায়ের কাছে ছেলে। পরে তাদের এই কষ্ট দেখে গ্রামের শাঁয়েস্তা খান নামের একজন ব্যাক্তি তার জায়গায় থাকার একটু ব্যবস্থা করে দেন। শাঁয়েস্থা খানের দেওয়া আশ্রয়ে তাদের একটু মাথা গোঁজার ঠাই হয়েছে। বৃদ্ধ মায়ের বয়স্ক ভাতার কার্ডের টাকায় ও প্রতিবেশিদের দেওয়া দানের টাকা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনানিপাত করছেন মা ও ছেলে।
স্থানীয় মুজিবর খানঁ বলেন, এদের এত কষ্ট দেখে আমাদেরও খুব খারাপ লাগে। আমরাও গরীব, তাই পারিনা তাদের ভালোভাবে সাহায্য করে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে। যে যেমন পারে তেমনভাবে সাহায্য করে তাদের কোনরকম আহারটা জুটিয়ে দিচ্ছে। আমরা চাই সরকারের উর্ধতন কর্তিপক্ষ তাদের প্রতি সুদৃষ্টি দিয়ে তাদের বসবাসের একটা ব্যাবস্থা করে দিক।
জমিরা মালিক শাঁয়েস্তা খান বলেন, তাদের এই কষ্টের কথা জানতে পারার পর আমার জায়গায় তাদের থাকার কথা বলি। তারপর তারা সেখানে চারিদিকে বাশের ব্যাড়া দিয়ে ঘিরে মাথার উপর বস্তা দিয়ে বসবাস করছে। তাদের মত একজন অসহায়ের পাশে দাড়াতে পেরে আমি নিজের কাছে ভাল লাগে। কিন্তু এভাবে তাদের কতদিন চলবে। তবে সরকার যদি তাদের পূনর্বাসন করে দিত তাহলে তাদের জন্যে খুবই ভালো হত।
এতে তারা একটু সুখের মুখ দেখতে পারবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: উসমান গনি ‘মেহেরপুর প্রতিদিন’ কে বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের পূর্নবাসন করে দেবার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। তাদের মা ও ছেলেকে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।