প্রথম আলোর সাংবাদিক সামসুজ্জামান শামসকে আটকের জেরে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে যখন নিন্দার ঝড় বইছে ঠিক সেসময়ে মেহেরপুরের মুজিবনগরে সংবাদ প্রকাশের জেরে তিন সাংবাদিককের নামে মানহানি মামলা করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মুজিবনগরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করেন মুজিবনগরের বাগোয়ান ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুর রাকিব। মামলায় আসামি করা হয়েছে জবাবদিহির মুজিবনগর প্রতিনিধি শাকিল রেজা, মাথাভাঙ্গার মুজিবনগর প্রতিনিধি শেখ শফি এবং সময়ের সমিকরণের মুজিবনগর প্রতিনিধি সোহাগ মণ্ডলকে।
গত ২৫ মার্চ ঢাকা থেকে প্রকাশিক জবাবদিহি, চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিক মাথাভাঙ্গা ও সময়ের সমিকরণে সাংবাদিকদের নাম ভাঙিয়ে টিসিবি পন্য নিলেন ইউপি সদস্য রাকিব’ শিরোনামসহ ভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের জের ধরে তিনি ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবী করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তিনি এ মামলা করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে বিজ্ঞ বিচারক পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বাদীর অভিযোগ, আসামীরা মানহানীকর, মান সম্মানহানীকারী ব্যক্তি। তিনি একজন একজন সমাজপতি এবং স্থানীয় ইউ.পি সদস্য এবং তিনটি স্কুলের সহ- সভাপতি। তিনি বাগোয়ান ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। এছাড়াও তিনি ১৫টি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত বলে দাবী করেছেন।
তিনি এজাহারে আরো উল্লেখ করেছেন, আসামীরা তার মান সম্মানের ক্ষতি করার জন্য যে কোন সময় যে কোন স্থানে কটূক্তি ও কুরুচি কথাবার্তা বলে বেড়াচ্ছে। আসামীরা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মহলে চাঁদাবাজী করে এবং নিরীহ লোকজনের মান সম্মানের ক্ষতি করে। বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড ঢোলমারী ও রতনপুর, বল্লভপুরে ও বাগোয়ান ওবায়দুল ইসলাম (সোনার) আম বাগানে কম মূল্যে টিসিবির মালামাল বিক্রয় করা হচ্ছিল। আমি কখনো টিসিবি’র মালামাল ক্রয় না করা সত্ত্বেও আসামীরা সংবাদ প্রকাশ করে।
যে সংবাদের কারণে মানহানি মামলা তা পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো
মুজিবনগরে সাংবাদিকদের নাম করে টিসিবি’র পণ্য উত্তোলন করেছে ইউপি সদস্য রকিব হোসেন। শুক্রবার সকালে বাগোয়ান গ্রামে টিসিবি পণ্য বিতরন চলাকালীন সময়ে কার্ড না দিয়ে সাংবাদিকদের নাম করে ৫টি পণ্য উত্তোলন করেন তিনি। অথচ সেই পণ্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করা হয়নি। পরে সাংবাদিক সোহাগ মন্ডলসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা সেখানে গেলে সাংবাদিকদের নামে ইউপি সদস্য রকিব হোসেন ৫ জনের জন্য টিসিবি পণ্য নিয়েছেন বলে জানান টিসিবি’র ডিলার রিপন আলী। ইউপি সদস্যের এমন কর্মকান্ডে নিন্দা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। এছাড়ার দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়ে থেকেও পণ্য না পাওয়া এবং স্বজনপ্রীতি করে লাইনের বাইরে পণ্য দেওয়ার অভিযোগও অনেকের। অভিযোগ রয়েছে, টিসিবি’র পণ্য নিতে আসা কার্ডধারী নিম্নআয়ের সাধারন মানুষ ভোর রাত থেকে লম্বা দীর্ঘ লাইনে সারাদিন দাড়িয়ে থেকেও পাচ্ছে না একটি পণ্য। যাদের কিনা এই পণ্যটি খুবই প্রয়োজন। বেশি টাকা দিয়ে তেল, চিনি কেনার সক্ষমতা তাদের নেই।
তবুও নিম্নআয়ের ব্যাক্তিদের মিলছে না পণ্য। অথচ পিছন দিক দিয়ে পণ্য পার হচ্ছে অন্যদের হাতে। টিসিবি পণ্য কিনতে আসা নাছিরন নেছা জানান, দোকানে তেল চিনি কিনতে অনেক টাকা লাগে। কিন্তু এখানে সেটা ন্যায্য মূল্যে পাচ্ছি। তবে এখানে পণ্য নিতে এসে সেই ভোর রাত থেকে লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হয়। তারপরেও কিছু কিছু দিন পণ্য না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। আরেকজন পণ্য ক্রেতা জানান, এর আগেরবার টিসিবি পণ্য নিতে এসেছিলাম। সারাদিন লাইনে দাড়িয়ে থাকার পর পণ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় বাসায় চলে গিয়েছিলাম। আজকেও এসেছি, সকাল থেকে লাইনে দাড়িয়ে আছি। কিন্তু পাশে থেকে মানুষ এসে ২/৩টা করে টিসিবি’র পণ্য নিয়ে যাচ্ছে।
টিসিবি’র পণ্য নিতে আসা কার্ডধারী নিম্নআয়ের সাধারন মানুষ ভোর রাত থেকে লম্বা দীর্ঘ লাইনে সারাদিন দাড়িয়ে থেকেও পাচ্ছে না একটি পণ্য। যাদের কিনা এই পণ্যটি খুবই প্রয়োজন। বেশি টাকা দিয়ে তেল, চিনি কেনার সক্ষমতা তাদের নেই। তবুও নিম্নআয়ের ব্যাক্তিদের মিলছে না পণ্য, অথচ পিছন দিক দিয়ে পন্য পার হচ্ছে অন্যদের হাতে।
টিসিবি’র ডিলার রিপন আলীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, রকিব মেম্বার সাংবাদিকদের নামে ৫টি পণ্য নিয়ে গেছে। পরে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে আসলে তাদের কাছ থেকে জানতে পারি তারা পণ্যের নেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না। একজন জনপ্রতিনিধি এধরণের প্রতারণা করে পণ্য নিয়ে যাবে ভাবতে পারিনি।
এবিষয়ে জানতে রকিব মেম্বারের ০১৯৭১৯০১২১০ নম্বরে যোগাযোগ করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।