মানুষ যখন কোনো কষ্টে পড়ে তখন হতাশ হয়ে যায়। অথচ কোরআনে কারীমের ভাষা অনুযায়ী কষ্ট হলো আসন্ন সুখের ভূমিকা।
কষ্ট এলেই হতাশ হওয়া যাবে না। কারণ কষ্ট এসেছে মানে সামনে আপনার জন্য আনন্দ অপেক্ষা করছে।
একজন মা যখন সন্তান জন্ম দেয় তখন তার যে পরিমাণ কষ্ট হয় তার থেকে বেশি সে শান্তি ও সুখ অনুভব করে, যখন সন্তানটি জন্ম নেয়।
মা তার সব কষ্ট ভুলে যায় যখন সে তার সন্তানের চেহারা দেখতে পায়। আমরা যখন কষ্টে থাকি তখন মনে মনে বলি, হে আল্লাহ, শুধু আমাকেই দেখলেন? সব অভাব অনটন শুধু আমাকেই দিলেন? কী পেরেশানি দিলেন যে তা যাচ্ছেই না।
মানুষ জানে না যে এই কষ্ট আসা মানে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য কত সুখ রেখে দিয়েছেন। মেরাজ আমাদেরকে এই শিক্ষাই দেয় যে কষ্টের পরে সুখ আছে।
মনে করুন আপনার গায়ে একটা সুই বিঁধলো। তাহলে ধরে নিবেন আপনি এই সুই বিঁধার কারণে যেই কষ্ট পেয়েছেন, সুই উঠিয়ে ফেললে তার থেকে দ্বিগুণ আনন্দ পাবেন।
মানুষের কষ্টের মাত্রা যতটুকু, তার বিপরীতে আনন্দের মাত্রা হয় দ্বিগুণ। আর এই কথাটাই মেরাজ আমাদেরকে শেখায়।
রাসুলে পাকের (সা.) সবচেয়ে কষ্টকর দিন ছিলো তায়েফের ময়দানে। একদিন আয়েশার (রা.) কামরায় হুজুর পাক (সা.) শুয়ে ছিলেন।
তিনি যখন পাশ ফিরলেন তখন আয়েশা (রা.) হুজুরের পিঠের হাড্ডিগুলোর কড়মড় শব্দ শুনতে পেলেন।
আয়েশা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রাসুল, আপনার হাড্ডিতে শব্দ হচ্ছে কেন? তখন হুজুর বললেন, তায়েফের লোকেরা আমার একটি হাড্ডিকেও আস্ত রাখেনি।
হুজুর পাক (সা.) সারা জীবনে এত শারীরিক কষ্ট কোথাও পাননি। এমন কি উহুদের যুদ্ধেও না। এত শারীরিক কষ্ট তিনি পেয়েছিলেন তায়েফের ময়দানে। মানসিক কষ্টও পেয়েছেন তায়েফের ময়দানে। মক্কা থেকে বিতাড়িত হয়ে তিনি তায়েফে গিয়েছিলেন।
এদিকে হুজুরের বিবি খাদিজা (রা.) ও চাচা আবু তালিব মারা গেলেন। হুজুরের সাহসের ভিত্তি ছিলেন খাদিজা।
আবু তালিব তো হুজুরের এমন এমন সাহায্যে করেছেন, যা কোনো মুসলমানও করতে পারেনি। যদিও তিনি মুসলমান হননি। কিন্তু সর্বাবস্থায় হুজুরের খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন।
মক্কায় আবু তালিবের একটা সম্মান ও প্রভাব ছিলো। যার কারণে অন্যরা হুজুরকে বেশি কিছু বলতে পারতো না। আবু তালিবের মৃত্যুতে তারও পরিসমাপ্তি ঘটলো।
হুজুর (সা.) পিতা হারিয়েছিলেন জন্মের আগে। তবুও তত কষ্ট অনুভব করেননি। যতটা মা ও চাচা হারানোর কারণে অনুভব করেছিলেন। যার কারণে ওই বছরকে আমুল হুজুন বা দুঃখের বছর বলে অভিহিত করা হয়।
এত কষ্ট সহ্য করার কারণেই আল্লাহ তায়ালা পুরস্কার হিসাবে তার জন্য মেরাজের ব্যবস্থা করে দেন। নিজের দিদারে হুজুরকে ধন্য করেন। ওই মিরাজেই হুজুরকে (সা.) তোহফা হিসাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ দেয়া হয়েছিল।
আল্লাহ যেমন বড় তার উপহারও তেমন বড়। সুতরাং যত কষ্টই আসুক, মনে করবেন সামনে আল্লাহর মেহেরবানি আসছে।
আজ বড় আফসোস লাগে এ কথা ভেবে, আগে মুসলমানরা আত্মহত্যা করতো না। আর এখন মুসলমানদের ছোট ছোট শিশুরাও আত্মহত্যা করে।
এই দোষ আমাদের। আমরা তাদেরকে বাঁচতে শেখায়নি। আমরা তাদের জীবনকে আমলি জীবন বানাতে শিখায়নি। যার ফলে সমাজে আত্মহত্যা বাড়ছে।
আমাদেরকে মিরাজের ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। যত দুঃখ কষ্টই আসুক, কখনো হতাশ ও বিচলিত হওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, দুঃখের পরেই সুখ আছে।