জীবন বাজি রেখে যে সকল বীর সন্তানরা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, যাদের আত্মত্যাগের কারণে আমরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি। বিশ্বে বাংলাদেশ নামের একটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। তারাই জাতির শেষ্ঠ্র সন্তান।
মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে যতটুকু জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে যারা অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন, তারা কখনোই সনদ কিংবা সরকারি কোন সুবিধা পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন না। দেশে পরাধীনতার শৃঙ্খলা থেকে মুক্ত করতেই তারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে যখন দেশদ্রেীহী, রাজাকার, রাজাকারের সন্তানরা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য আবেদন করেন তখন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তা মেনে নিতে পারেন না। তা নিরসন করার জন্য যখন তারা দাবি তোলে, তাদের সেই আর্তনাদ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনও মাথাব্যাথা দেখা যায় না।
গতকাল বুধবার মেহেরপুর প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে ‘মেহেরপুরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ে তালিকা বহির্ভূতদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধারা স্মারকলিপি প্রদান’ করেছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। মেহেরপুর সদর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইকে কেন্দ্র করে এঘটনা ঘটেছে।
স্মারকলিপিতে মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করে বলেছেন, জামুকা কর্তৃক প্রদত্ত অন-লাইনে আবেদনকারীদের তালিকাভুক্ত মেহেরপুর সদর উপজেলায় ৪৮৯ জনের যাচাই-বাছাই এর কাজ ইতোমধ্যে তথাকথিত বিতর্কিত কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়নি। জামুকা কর্তৃক প্রদত্ত জিডি নম্বরসহ তালিকা বহির্ভূত কয়েকজন ব্যক্তিকে এমনকি রাজাকারের সন্তানসহ তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর জন্য জামুকা কর্তৃক ২০১৭ সালের বিধি-বিধান/নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এমনকি সাক্ষাৎকারকারীগণ অরিজিনাল সনদ না দেখিয়ে নকল ফটোকপি প্রদর্শন করেছেন। আমরা এর নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সাথে সাথে জামুকা কর্তৃক প্রদত্ত জিডি নম্বর সহ তালিকা বহির্ভূত ব্যক্তিদের কে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর অপচেষ্টা বন্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
স্মারকলিপির প্রথমেই তারা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটিকে বিতর্কিত বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ কমিটি বাতিলের দাবিতেও ইতোপূর্বে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনও করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি অনুয়ায়ি জেলা প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। যা অত্যন্ত দু:খজনক। তখন ব্যবস্থা নেওয়া হলে হয়তো নতুন করে তালিকা বহির্ভূতদের সাক্ষাতের বিষয়ে স্মারকলিপি দিতে হতো না।
স্মারকলিপিতে তারা আরও দাবি করেছেন, রাজাকারের সন্তানও নাকি মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য যাচাই বাছাই কমিটির কাছে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। যে আবেদন তারা করেছেন তা জামুকার পরিপত্র অনুসারে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। নির্ধারিত সময়ের পরে নতুন করে আবেদন করার কী বিধান আছে তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলতে পারবেন? তবে বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
যে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কারণে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, স্বাধীন দেশে বুকভরে নি:শ্বাস নিতে পারছি, আসুন তাদের কথাগুলো একটু বোঝার চেষ্টা করি। অমুক্তিযোদ্ধা, ভুয়া, রাজাকার, রাজাকারের সন্তান যারা আবেদন করেছেন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য (মুক্তিযোদ্ধারা তাদের দাবিতে যেভাবে বলেছেন)। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি আমলে নিয়ে ওই সকল আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
পরিশেষে, বর্তমান সরকার জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা, ভাতা বৃদ্ধি, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর নির্মাণ সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা চালু করেছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জমি আছে ঘর নেই এমন অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে বীর নিবাস নামের বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছেন। যার কাজ চলমান রয়েছে।
যদি আজ ভুয়া, অমুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা বনে যান, সরকারের এসকল সফল উদ্যোগ, ওই সকল লোভাতুর মানুষদেরকেই কেবল সুবিধা দেবে। বঞ্চিত হবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা।