বিয়ে মানেই মহাধুমধাম আর অনেক মানুষের সমাগম। অথচ এ মহাসমাগম আর আনন্দ-আয়োজনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনাভাইরাস। তবে, কোভিড-১৯কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রযুক্তি। ভারতে এক বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় দুই হাজার অতিথি অংশগ্রহণ করবে। এমন খবরে চক্ষু চড়কগাছ। দুই হাজার অতিথির ওই আয়োজন হবে মেটাভার্সে। মেটাভার্সেই নিজেদের বিয়ের বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন ভারতের তামিলনাড়ুর যুগল।
দীনেশ শিবকুমার পদ্মাবতী এবং জনগণন্ধিনী রামস্বামী তাদের বিয়ের ভার্চুয়াল সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করছেন। স্বঘোষিত ‘পটারহেডস’ বা হ্যারি পটারের ভক্ত হিসাবে এ জুটি হগওয়ার্টস থিমের পার্টি বেছে নিয়েছেন যেখানে আমন্ত্রিত অতিথিরা ফোন, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপের মাধ্যমে হাজির হবেন। পদ্মাবতী বলেন, ‘মহামারির কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষ নিয়ে শারীরিক উপস্থিতিতে ঐতিহ্যগত আয়োজন সম্ভব নয়।’ ‘কাজেই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, মেটাভার্সেই না হয় এটি হয়ে যাক!’
শুভলগ্ন ঠিক হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম রোববার। ওই দিন সূর্যাস্তের সময় চেন্নাই থেকে প্রায় পৌনে তিনশ কিলোমিটার দূরে বরের বাড়ি কৃষ্ণগিরিতে সাতপাকে বাঁধা পড়বেন দীনেশ শিবকুমার পদ্মাবতী এবং জনগণন্ধিনী রামস্বামী। দীনেশ পেশায় আইআইটি মাদ্রাজের প্রকল্প সহযোগী। আর জনগণন্ধিনী সফটওয়্যার ডেভেলপার। ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আত্মীয়দের সামনে অবশ্য শারীরিক উপস্থিতিতেই সম্পন্ন হবে এ বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। মূলত মেটাভার্স হচ্ছে এমন একটি ডিজিটাল দুনিয়া, যেখানে ব্যবহারকারী অংশগ্রহণ করতে পারবেন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং ডিভাইস থেকে। চেন্নাই থেকে প্রায় পৌনে তিনশ কিলোমিটার দূরে তামিলনাড়ুর কৃষ্ণগিরি জেলার রামস্বামীর গ্রামে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আত্মীয়দের সামনে অবশ্য শারীরিক উপস্থিতিতেই এ বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে।
কিন্তু পরে, এ দম্পতি তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লগইন করবেন, যার নকশা, উন্নয়ন এবং সার্ভারে জুড়ে দিতে প্রায় দেড় লাখ ভারতীয় রুপি ব্যয় হয়েছে। এক ঘণ্টার এ অনুষ্ঠানে নবদম্পতিকে দেখা যাবে তারা অতিথিদের স্বাগত জানাচ্ছেন। আর যারা ওই আয়োজনে ভার্চুয়ালভাবে যোগ দেবেন, তারাও তাদের অবতারদের চেহারা এবং পোশাক ঠিক করে নিতে পারবেন পছন্দসই। একদিকে যারা বিয়ের আয়োজনে হাজির থাকতে পারছেন না, তারা যেমন সংবর্ধনায় যুক্ত হতে পারবেন, তেমনি এ ডিজিটাল উদযাপনের আরেকটি সুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, পরপারে থেকেও অভ্যাগত অতিথিদের সন্তানের বিয়েতে আশীর্বাদ করতে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন কনে রামস্বামীর প্রয়াত বাবাও। এজন্য তার একটি ত্রিমাত্রিক অবতার তৈরি করেছেন দীনেশ। জানিয়েছেন, ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার সুবাদে গত এক বছর ধরে ইথেরিয়াম মাইনিং করার ফাঁকে মেটাভার্সে বিয়ের আয়োজনের বন্দোবস্ত করেন তিনি। পদ্মাবতী বলেন, ‘গত এপ্রিলে আমার শ্বশুর মারা যান। আমি তার একটি ত্রিমাত্রিক অবতার তৈরি করছি। তিনি আমাদের আশীর্বাদ করবেন।’