মেহেরপুর শহরের বড় বাজারে অবস্থিত সিদ্ধেশ্বরী কালি মন্দির। মন্দিরটিকে স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলীরা জেলার কেন্দ্রীয় মন্দির হিসেবে গণ্য করে। জেলার সর্ব প্রাচীন মন্দির বলে এই মন্দিরটি স্বীকৃত হলেও এর স্থাপনকালের সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি।
তবে ধারণা করা হয় রাজা গোয়ালা চৌধুরী কিংবা তার পরবর্তী বংশধরেরা এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু মন্দিরের দেওয়ালে লেখা আছে বাংলা ১৩৩২ সালে নিত্য গোপাল সাহার স্ত্রী পাচু বালা দাসী মন্দিরটি নির্মাণ করেন। মন্দিরের ভিতরে স্থাপন করা হয়েছে বালা দাসীর মূর্তি। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানী হানাদার ও তাদের দোসররা এই মন্দিরে আক্রমণ করে এবং বালা দাসীর মূর্তিটি ধ্বংস করে দেয়।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলীরা পুনরায় মূর্তি স্থাপন করে নিয়মিত পূজা অর্চনা চালু করে। প্রতি বছর এখানে কালীপূজা, দূর্গাপূজা ও সরস্বতীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। বৈশাখ মাসের শেষ সংক্রান্তিতে এই মন্দিরকে ঘিরে বৈশাখ সংক্রান্তির মেলা বসে। বৈশাখ সংক্রান্তি মেলার আগের জৌলুস এখন আর নেই। তবে নিজ ও সমাজের মঙ্গল কামনাতে প্রতিবছর এই মন্দির প্রাঙ্গনে চলে পাঠা বলিদান।
বড়বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শ্রী শঙ্কর বিশ্বাস বলেন,থব্রিটিশ আমল থেকেই এই মন্দিরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের হিন্দু ধর্মাবলীরা পুজা অর্চনার জন্য আসত।এখনো বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল সহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকেও পুজা করতে মানুষ আসে এই মন্দিরে পুজা দিতে।’
মেহেরপুরের সিদ্ধেশ্বরী কালি মন্দিরের সেবাইত পুরোহিত শ্রী তপন বন্দোপাদ্ধায় ১৯৮৯ সাল থেকে পুরোহিতের দায়িত্ব পালন কীছেন। তিনি বলেন,থ অবিভক্ত ভারতের একটি প্রসিদ্ধ মন্দির এই সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির। ভারত ভাগের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তেহট্টের বেতায় নামক স্থানে মেহেরপুরের সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের একটি শাখা চালু করে ওখানকার ধর্মপ্রাণ হিন্দু ধর্মাবলীরা। বেতায়ের সেই মন্দিরের সকল কার্যক্রম মেহেরপুর সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের সাথে সমন্বয় করে একই সময়ে একই রীতিতে করা হয়।
‘তিনি আরোও বলেন, ১৯৭১ সালে বালা দাসীর মূর্তিটি ভেঙে গেলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলীরা পুনরায় মন্দিরের ভিতর বালা দাসীর ভাঙ্গা বিগ্রহ স্থাপন করে। ২০০৪ সালে মন্দির কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে বালা দেবীর বিগ্রহ ভৈরবে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।’