মেহেরপুরকে সমৃদ্ধ করতে মেহেরপুর প্রতিদিনকে বেশি বেশি ভূমিকা রাখতে রাখতে হবে। জেলার শিক্ষা,শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ ও উন্নয়ন তুলে ধরে পথ্রিকাটিকে গণমানুষের মুখপাত্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দৈনন্দিন সংবাদের পাশাপাশি অনুসন্ধানমুলক সংবাদ পরিবেশন করে পাঠকের হৃদয়ে ঠায় করে নিতে হবে। জেলার উন্নয়ন অনিয়ম দুর্ণীতি, কৃষি, শিক্ষা সার্বিক বিষয় তুলে আনারও তাগিদ দেওয়া হয়।
মেহেরপুর প্রতিদিনের সপ্তম বর্ষে পদার্পন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব মতামত তুলে ধরেন জেলার বিশিষ্টজনেরা।
গতকাল বুধবার (২৭ মার্চ) মেহেরপুর প্রতিদিনের সভাকক্ষে এই আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মেহেরপুর প্রতিদিনের প্রকাশক ও আনিশা গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি এমএএস ইমন আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।
পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাহাবুব চান্দুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্পাদক ইয়াদুল মোমিন।
আলোচনা সভায় মেহেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মহা: আব্দুস সালাম বলেন, মেহেরপুরের শিক্ষা সংস্কৃতি কৃষ্টি কালচার ধারণ করে মেহেরপুর প্রতিদিন ছয় বছর পার করে আজ ৭ বছরে পা রেখেছে, এই শুভক্ষণে অভিনন্দন শুভেচ্ছা ও জানাচ্ছি। নানাধরণের প্রতিকুলতা পার করে আজ মেহেরপুর প্রতিদিন এখন আলোর পথে পৌছেছে। ইলেক্ট্রিনিক মিডিয়ার যুগে কাগজের চাহিদা কমে গেছে। কিন্তু তার পরেও কাগজের পত্রিকার চাহিদা রয়ে গেছে। আজ যুগের পরিবর্তন হয়েছে। আমরা সর্বহারাদের সেই যুগ থেকে আলোর পথে এসেছি। যে ছেলেটি রাতে বিছানা থেকে হারিয়ে যেতো সকালে পত্রিকার মাধ্যমে তার লাশের খবর পেতাম। সেই দুর্বিষহ অবস্থা এখন আর নেই। সেখান থেকে আমরা এখন অনেকদুর এগিয়ে এসেছি।
পৃথিবীর বড়বড় দেশগুলোতে এখন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া একটি যায়গায় পৌছেছে। সেখানে মানুষ কাগুজে পত্রিকা আর পড়তে চাইনা। কিন্তু পক্ষান্তরে দেখা গেছে কাগুজে পত্রিকা আগের যায়গাই আছে। আমরা যতই পার করিনা কেনো প্রয়োজনীয়তা আমাদের সবকিছু রয়ে গেছে। প্রকাশনার শুরুতে মেহেরপুর প্রতিদিন আমাদের সমাজের দর্পণ হিসেবে এসেছিল। আজকের বাস্তবতায় এই পত্রিকাটি ঠিক সেই যায়গায় আছে। মেহেরপুরকে সমৃদ্ধ করতে মেহেরপুর প্রতিদিনকে বেশি বেশি ভূমিকা রাখতে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সমাজে বড় বাধা মাদক, জঙ্গিবাদ ক্যসিনো। তারপরেও এগিয়ে যেতে হবে। সকল প্রকার দূর্ণীতি, অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। মেহেরপুরের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে হবে। এছাড়া জেলার সঙ্গীত, নাট্য, যাত্রাসহ নানাদিক তুলে ধরতে হবে, যাতে আগামীতে পত্রিকাটি জেলার মানুষের মনের অভাব দুর করে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর হাসানুজ্জামান মালেক বলেন, সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতা খুব গুরত্বপূর্ণ কাজ। এটি সহজ কোনো কাজ নয়। এখানে অনেক কিছুই জানার আছে। কিন্তু আমরা নানা কারনে সেটি ধরে রাখতে পারিনি। ন্বাধীনতা উত্তরকালে এজেলাতে অনেক বিজ্ঞজন সাংবাদিকতা করে গেছেন। সাপ্তাহিক মুজিবনগর, পরিচয়, পশ্চিমাঞ্চল ও দৈনিক মেহেরপুর পত্রিকা প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু নানা কারনে সেগুলো টিকে থাকতে পারিনি। সেখানে মেহেরপুর প্রতিদিন নানা ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করে আজ সপ্তম বর্ষে পা রেখেছে।
তিনি বলেন, অনলাইনের যুগে প্রিন্ট পত্রিকা আজ হুমকির মুখে। প্রিন্ট পত্রিকা প্রকাশ এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেহেরপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে। কিন্তু নানা কারনে আমরা ধরে রাখতে পারিনি। সাহষ সংগ্রাম সংকল্পের পথ ধরে পত্রিকাটি এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এই জেলাতে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে।জেলাতে অনেকের টাকা পয়সা আছে। কিন্তু সেসব লোক অন্য যায়গায় খরচ করতে অভ্যস্ত। সাহষ, সম্পৃতি, সম্পর্কের সাথে অনেক দুর এগিয়ে যাবে এবং সমাজকে বদলে দেওয়া ও পরিবর্তন করাসহ সামাজিক, ভ্রাতিক, শিল্প, সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রত্যয় নিতে হবে।
জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম রসুল বলেন, মেহেরপুর প্রতিদিন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে থাকে। ভয় করলে হবেনা, সাহষিকতার সাথে আগামীতে পত্রিকাটি তাদের স্বকীয়তা ধরে রাখবে। মেহেরপুর প্রতিদিন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে মানুষের মন জয় করেছে। আগামীতেও বস্তুনিষ্ঠ, সত্য সংবাদ পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করবে।
মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, হাটিহাটি পাপা করে মেহেরপুর জেলাসহসহ আশেপাশের জেলাগুলোতেও যায়গা করে নিয়েছে পত্রিকাটি। পত্রিকাটি আগামীতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলবে, দেশের উন্নয়ন তুলে ধরবে, শিক্ষা সংস্কৃতি তুলে ধরবে ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলবে।
তিনি বলেন, সততা ও সাহসিকতার সাথে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ তুলে ধরে। পত্রিকার মাধ্যেম মেহেরপুরের হারিয়ে যাওয়া বিষয়গুলো তুলে ধরবে এছাড়া জেলার উন্নয়ন তুলে ধরবে।
তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে অশুভ একটা ছায়ার মধ্যে পড়ে আছে। এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করবে এই প্রত্যাশা করছি।
বিশিষ্ট কবি ও প্রাবান্ধিকগাজি রহমান বলেন,মেহেরপুর প্রতিদিন অনেকটাই পরোয়া না করে চলে। মেহেরপুর প্রতিদিন শীরদাঁড়া খাড়া করে চলার প্রবনতা ধরে রেখেছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ডোন্ট কেয়ার মনভোব লক্ষ করা যায় পত্রিকাটির মধ্যে।
আমরা কেউ বিদ্যাসাগর বা নজরুল হতে পারবোনা। তবে, তাদের অনুকরণ করতে পারবো।
মেহেরপুর প্রতিদিনের প্রকাশক এমএএস ইমন বলেন,জনগনের মুখপাত্র শ্লোগান নিয়ে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জনপ্রিয় পত্রিকায় পরিণত হয়েছে মেহেরপুর প্রতিদিন। মেহেরপুর প্রতিদিন তিলে তিলে ছয় বছর পার করেই আজকের এই অবস্থানে পৌছেছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সূতিকার মেহেরপুর জেলার পত্রিকা প্রকাশের পথচলা শুরুটায় ছিল নানা জটিলতা। তিনি বলেন এখন মিডিয়া ইমেজ নাই বললেই চলে। এখন ফেসবুকে পেজ খুলেই সাংবাদিক হয়ে যাচ্ছে। মেহেরপুর প্রতিদিন মেহেরপুরে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সততা ও সাহসিকতার সাথেই মেহেরপুর প্রতিদিন এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন হোটেল আটলান্টিকা, অনলাইন জুয়াসহ নানা অসঙ্গতি তুলে ধরায় অনেকে হোঁচট খেয়েছে তারা। মেহেরপুর প্রতিদিন তার স্বকীয়তা বজায় রেখে মেহেরপুরে একটি বিপ্লব ঘটাবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরবে। ভালোবাসা ও পাশে থাকার জন্য জেলার সকল শ্রেনী পেশার মানুষকে অনুরোধ করেন।
সিনিয়র সাংবাদিক রফিক উল আলম বলেন, শুরু থেকে মেহেরপুর প্রতিদিন অত্যন্ত সাহষিকতার সাথে সংবাদ পরিবেশন করে আসছে। তারা কোনো সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে ঝোল টানাটানি করেনা। পত্রিকাটি আগামীতে দূঢ়তার সাথে এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা করেন তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন অব আব্দুল মালেক বলেন, মেহেরপুর প্রতিদিনের সকল দৈনতা কাটিয়ে আগামীতে স্ব মহিমায় এগিয়ে যাবে।