মেহেরপুরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ সহকারি পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক ও অফিস সহকারি ফাহাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের নানা ধরণের হয়রানি ও পাসপোর্ট প্রতি বিভিন্ন অংকের উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন এক ভুক্তভোগী গ্রাহক। একই অভিযোগের অনুলিপি দুদক কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে একটি অনলাইনে পাসপোর্ট অফিসের হয়রানি ও অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর মুখ খুলতে শুরু করেছে গ্রাহকরা। তারা নানা অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ, পাসপোর্ট অফিসে টাকা-পয়সা ছাড়া হাতও মুখ কিছুই চলেনা অফিস সহকারি ফাহাদের। স্থানীয় কিছু দালালের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সাধারন মানুষের কোন মূল্যই নেই তার কাছে। উপরি টাকা দিয়ে দালালের কাছে পাসপোর্টের কাগজ দিতে হবে না হয় অফিসের কাউকে দিতে হবে। অনেকে লিখেছে কারো এক হাজার টাকা লেগেছে। আবার অনেকে লিখেছেন পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি যেন মহাউৎসবে পরিণত হয়েছে। এর লাগাম ধরার যেন কেউ নাই।
অফিস প্রধান উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক সম্প্রতি মেহেরপুর পাসপোর্ট অফিসের যোগদান করেছেন। যোগদানের পর থেকে অনিয়ম দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভুগীদের।
গ্রাহকদের আরো অভিযোগ,অফিস সহকারী ফাহাদুর ও তার নিয়োগকৃত কতিপয় দালালের কব্জায় বন্দি হয়ে পড়েছে মেহেরপুর পার্সপোর্ট অফিস।
গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের ইসমাইল হোসেন ফেসবুকে লিখেছেন , তিনি পাসপোর্ট করার জন্য মেহেরপুর অফিসে গেলে প্রথমদিন একটি ত্রুটি ধরে সংশোধন করতে বলে ফাহাদ ওরফে রাজু।
সেই ত্রুটি সংশোধন করে আবার পাসপোর্ট অফিসে গেলে নতুন করে আরেকটা ত্রুটি ধরে আবেদন ফেরত দেয়। এভাবে দিনের পর দিন ঘুরিয়ে তারপর আবেদন জমা নেয়। আবেদন জমা নেওয়ার পর একদিন পরে ফিঙ্গার নেন। অথচ যারা টাকা দিচ্ছে দূর্ভোগ ছাড়াই আবেদন ও ফিঙ্গার দিনেই নেয়া হচ্ছে।
ষোলটাকা ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা আনোয়ার পাশা ফেসবুকে কমেন্ট করেছেন ফাহাদ ওরফে রাজুর কথা মত অফিস চলে।
বামুন্দীর ব্যবসায়ী চপল বিশ্বাস লিখেছেন, তিনি ১১শত টাকা ঘুষ দিয়ে পাসপোর্ট করেছেন। গাংনী পোষ্ট ই সেন্টার লিখেছেন পাসপোর্ট অফিসে চলে ভুতের খেলা।
এইচ কবির লিখেছেন, অনিয়ম দুর্নীতি চলছে চলবে, থামানোর লোক নেই। আলমগীর হোসেন লিখেছেন, টাকা না দিলে আবেদনে নানা ভুল ধরে ফেরত দেবে।
সেলিম হোসেন লিখেছেন, দেখার কেউ নেই টাকা ছাড়া ফাইল ধরেনা। গ্রাহকরা এমন মন্তব্য করলেও ব্যবস্থায় নেয়া হয়নী অভিযুক্তদের।
এ দিকে সরকারী মোবাইল ফোন থাকলেও সহকারী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক যোগদান করার পর থেকে বন্ধ থাকে।
এ বিষয়ে অফিস সহকারী ফাহাদুর বলেন, আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগের কথা বললেন তা সঠিক নয়। আমি সব সময় চেষ্টা করি সাধারন মানুষকে ভালো সেবা দিতে। কিছু কিছু সাংবাদিক আছে তাদের কথা মত কাজ করে দিতে হয়। তা না করলে অনেক কটু কথা শুনতে হয়। কিছু দিনে আগে এ নিয়ে কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। আমার উপর ক্ষোভ প্রকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিত্তিহিন অভিযোগ দিয়েছে।
তবে গ্রাহক হয়রানি বিষয়ে একজন অফিস স্টাফ জানান, হেড অফিসের নির্দেশে আবেদনকারীদের প্রথমে রোহীঙ্গা তালিকায় আছে কিনা সেটি সনাক্ত করা হয়। যে কারণে তাদের একটু বিলম্ব হয়। তারপর তাদের ফিঙ্গার নেওয়া হয়। তবে মেহেরপুরে এ পর্যন্ত কোন রোহীঙ্গা সনাক্ত হয়নি বলেও তিনি জানান।
উপ সহকারি পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মাস খানেক হলো এ অফিসে যোগদান করেছি। এখনো পর্যন্ত অফিসের সব স্টাফদের ভালো করে চিনতেই পারিনি। এর মধ্যে অনিয়ম ও টাকা লেনদেনর অভিযোগ করা হচ্ছে। যা আমার জন্য খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তারপরও যদি আমার স্টাফদের কেউ এর সাথে জড়িত থাকে তবে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি ফোন বন্ধ থাকে আপনার এর জবাবে তিনি বলেন, অফিসের মোবাইলটি হারিয়ে গেছিল। সরকারি সিম উঠাতে বেশ কিছুদিন সময় লেগেছে তাই বন্ধ ছিল। আজ (মঙ্গলবার) থেকে খোলা রয়েছে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মো: আতাউল গনি বলেন, হয়রানির ও অনিয়মের বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।