মেহেরপুর জেলার আমের সুখ্যাতি ও কদর রয়েছে দেশ জুড়ে। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে এবছর মেহেরপুরের আম,কাঁঠাল অন্যান্য দেশে চাহিদা না থাকায় জেলার অনেক যুবক আম ও কাঁঠাল বিক্রি করছেন অনলাইনে। অর্ডার করলেই ক্রেতাদের দ্বারে পৌঁছে যাচ্ছে সু-স্বাদু এ ফল। জেলার আম, কাঁঠাল সু-স্বাদু হওয়ায় দেশের রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় চাহিদার শেষ নেই। গেল কয়েক বছর আম ও কাঁঠাল ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে পাঠানো হতো। করোনাভাইরাসের কারনে এখানকার ব্যাবসায়ীরা এবছর ওই দেশ গুলিতে এবছর আম ও কাঁঠাল পাঠাতে পারেনি। ফলে মুল্য বিপর্যয় ঘটেছে ব্যাবসায়ী ও বাগানমালিকদের। এ-সুযোগে শিক্ষিত বেকার যুবকেরা অনলাইনের মাধ্যমে আম -কাঁঠাল বিক্রি করে আয় করছেন মোটা অংকের টাকা। কেমিক্যাল মুক্ত ফল বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পোঁছে যাচ্ছে ক্রেতাদের হাতে।
জেলায় উৎপাদিত আমের মধ্যে বোম্বাই, হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ ও আম রুপালির চাহিদা সবচেয়ে বেশি । মধু মাসের মধু ফল আম লিচু ও কাঁঠাল। বেশ কয়েকদিন আগে থেকে মেহেরপুরে লিচু বাজারজাত শুরু হলেও ১৪ মে থেকে বোম্বাই ও গুটি আমসহ সকল জাতের আম সংগ্রহের মধ্য দয়ে শুরু হয়েছে বাজারজাত। জেলা ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। অনাবৃষ্টির করণে আমের গুটি ঝরে গেলেও আমের ফলন হয়েছে ভালো। তারপরও ন্যায্য মূল্য পেলে সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে জানান বাগান মালিকরা।
জানাগেছে, মেহেরপুরের হিমসাগর আম দেশের সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু হওয়ায় ইউরোপ মহাদেশে ক্রমেই এর চাহিদা বেড়ে চলেছে। করোনার কারণে এবছরে বিদেশে আম রপ্তানি করা যায়নি। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন অঞ্চলেও মেহেরপুরের হিমসাগর আমের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। ফলে হিমসাগর আমের মাধ্যমে মেহেরপুর আমের জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা হিসেবে চিহিৃত হচ্ছে। তবে এটিকে ধরে রাখতে হলে সঠিক সময় আম বাজারজাত করতে হবে বলে জানান আম চাষিরা
কৃষি বিভাগ বলছে এ মৌসুমে প্রায় ৯৮ ভাগ গাছেই মুকুল আসে। জেলার ৩ উপজেলায় ছোট বড় গাছ মিলে প্রায় ২ হাজার ৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। যা থেকে ৫০হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কাঁঠালের বাগানের কোনো পরিসংখ্যান নেই জেলা কৃষি অফিসে। তবে জেলায় যে পরিমান কাঁঠাল গাছ রয়েছে তা অনেক বেশি। জেলার চাহিদা পুরনের পাশাপাশি চলে যায় বিভিন্ন জেলায়। আমের পাশাপাশি কাঁঠালের স্বাদ কোনো অংশে কম নয়। নিরাপদে আম ও কাঁঠাল বাজারজাত করণে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বাগান মালিকর হাসানুজ্জামান হিলন জানান, প্রচন্ড খরতাপে এবার একটু আগেই গাছের আম পুষ্ট হয়েছে। ফলে অন্য মৌসূমের তুলনায় এবার কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে আম সংগ্রহ। আগামী একমাস ধরে বাজারে পাওয়া যাবে মেহেরপুর জেলার আম। প্রতিমন হিমসাগর আমের মুল্য ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা। অন্যান্য আমের দাম একটু কম। তবে কাঁঠালের ফরণ ভাল। বাহিরের জেলায় চাহিদাও ভাল।
আম সংগ্রহকারি শ্রমিক নাজমুল হোসেন ও মোমিনুল ইসলাম জানান, পনের দিন আগ থেকেই আম সংগ্রহ ও বাজারজাত শুরু হযেছে। এবার আম ও কাঠালের স্বাদ অনেক ভাল। গেল বছর যারা আম ও কাঁঠাল কিনে ছিলেন তারা এবছরও চাহিদা দিয়েছেন। অনলাইনে অর্ডার করছেন। আমরা সেভাবেই আম ও কাঁঠাল ক্যারেট করে কুরিয়ারে পাঠাচ্ছি।
জেলার আম ব্যাবসায়ী বাবলু কাশেম জানান, করোনার কারনে পরিবহন চলছে না। জেলার বাহিরে আম নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। বাহিরের জেলায় বেশির ভাগ আম বিক্রয় হয় ফুটপাতে। এখন তো সেটাও হচ্ছে না। তাই আম বিক্রির কৌশল নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পন্থায়।
অনলাইনের মাধ্যমে আম বিক্রির সাথে জড়িত বিডি ম্যাংগ্রোভ ডট কমের পরিচালক ব্যাবসায়ী সালাউদ্দিন জানান, আমরা বিভিন্ন ভাবে দেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় অবস্থানকারি পরিচিত ব্যাক্তিদের সাথে যোগাযোগ করছি। তারা আমাদের অর্ডার করছেন। আমরা কয়েকবছর ধরে অনলাইনে আম ও কাঁঠাল বিক্রি করছি তবে এবছর চাহিদা অনেক বেশি।
তিনি আরো আমরা তাদের কাছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম ও কাঁঠাল পৌছে দিচ্ছি। তাছাড়া মেহেরপুরের হিম সাগার জাতের আমের চাহিদা দেশে অনেক বেশি। এব্যাবসায় তার সাত জন শিক্ষিত বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন যুবক তাদের ফেসবুক ওয়ালেও ব্যাবসা করছেন। মেহেরপুরের আরো একজন অনলাইনের সফল ব্যাবসায়ী রুপম জানান, আমরা আম সংগ্রহ থেকে শুরু করে ক্যারেটে প্যাকিং পর্যন্ত লাইভের মাধ্যমে ক্রেতাদের দেখানো হয়। ফরমালিন কিংবা কোনো প্রকার কেমিক্যাল ব্যাবহার হয়না। তাই এখানকার ব্যাবসায়ী ও ফলের প্রতি মানুষের ধারনা ভাল। আমরা এই বিশ্বস্ততাকে ধরে রাখতে চাই।
মেহেরপুরের এক কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিনই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় প্রচুর আম ও কাাঁল যাচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কুরিয়ারের ওপর নির্ভর করছে ক্রেতা বিক্রেতারা।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান,পরিপক্ক ও কেমিক্যাল মুক্ত আম ও কাঁঠাল ভোক্তাদের ক ছে নিরাপদে পৌঁছে দেবার লক্ষে কৃষি বিভাগ কাজ করছে । বাগান মালিক,ব্যাবসায়ী ও শ্রমিকদের সতর্ক করা হয়েছে কোনো প্রকার কেমিক্যাল স্প্রে না করার জন্য। এবিষয়ে আমাদের মনিটরিং টিম কাজ করছে প্রতিনিয়ত।