দেয়ালে গজিয়ে ওঠা বটগাছের শেকড় বাকড়ে গ্রাস করেছে গোটা মসজিদ। দেয়ালের আস্তরণ আর ইট খসে পড়েছে। কিন্তু পরিত্যক্ত দেয়ালে তৎকালীণ কারুকার্য খচিত নকশাঁ তৈলহীন মাটির প্রদ্বীপের মতো জলছে। মসজিদটির চিহ্ন বিলুপ্ত প্রায়।
এখন আর কেউ উপাসনার জন্য সেখানে যায় না। জ্বীন ভূতের বসবাস ভেবে একা সাহস করে কেউ সেখানে যেতে না পারায় সেটির সংস্কার কাজও হয়নি। ফলে মসজিদটি এখন ধ্বংসের পথে।
এতক্ষণ যে মসজিদটির কথা বলছিলাম সেটি মেহেরপুরের গাংনীর করমদি গ্রামের গোসাইডুবি মসজিদ। মসজিদের অবশিষ্টাংশ বুকে আগলে রেখেছে বিশাল আকৃতির এক বটবৃক্ষ। মসজিদটির পুরতন অবয়ব ধরে সংস্কারেরর দাবী স্থানীয়দের।
যতদূর জানা যায়, ১৮৬৪ সালে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার করমদি গ্রামের হাজি দশরাত বিশ্বাস মসজিদটি নির্মাণ করেন। পায়ে হেঁটে হজ্ব করার পর ধর্মীয় উপাসনার জন্য মসজিদটি নির্মানের পর মসজিদটির আশে পাশে গড়ে ওঠে বসতি। তার মৃত্যুর পর মসজিদটি দেখভাল করার কেউ ছিল না।
অন্যদিকে জ্বীন পরীর আছর হতে পারে এমন গুজবে এবং হনুমানের অত্যাচারে ওখানকার বসতিরা অন্যস্থানে চলে যান। এতদসংলগ্ন এলাকায় জনবসতি না থাকায় নির্মাণের পর থেকেই মসজিদটি সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ ও ভগ্ন অবস্থা বিরাজ করে। মসজিদটির দেয়ালে গজিয়ে উঠে একটি বটগাছ। গাছটি বিশাল আকৃতি ধারণ করে।
বটের শেকড় চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে মসজিদটি অস্তিত্ব বিলীন করে ফেলে। বিশাল আকৃতির বটবৃক্ষের নেমে যাওয়া বওয়ার ফাক দিয়ে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে মসজিদের কিছু অংশ। তার আশপাশে পড়ে আছে পাহাড়ি দৃশ্যের মাটির ভিটা।
বংশ পরম্পরায় হাজি দশারতের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে কফিল উদ্দীন বিশ্বাস ওই এলাকা দেখাশোনা করতেন। কফিল উদ্দীন বিশ্বাসের মৃত্যুর পর ছেলে আব্দুৃল জলিলের নামেই মসজিদ এলাকা স্থানটি এখন স্থাপনার নায়ক মৃত দশারত এঁর নাতি ছেলে আব্দুল জলিলের বটতলা নামে পরিচিত।
এলাকাবাসিরা জানান, গোসাইডুবি মাঠের ভিতরে মসজিদটি তৈরী করায় তার নাম দেয়া হয় গোসাইডুবি মসজিদ। সন্ধ্যার পর আর ওই গাছের নিকট দিয়ে কেউ মাঠে যায় না। মসজিদটির কাছে গিয়ে দেখা গেছে, চুন সুরকীর গাথুনী ও আস্তরন খসে পড়লেও এর গায়ে যে কারুকার্য খচিত নকশাঁ ছিল তা বিলীন হয়ে যায় নি। মসজিদটি এখন আর সংস্কার করাও পথ নেই।
কয়েক বছর পর কাগজ কলমে গোসাইডুবি মসজিদ থাকলেও এর অস্তিত্ব খুঁজে পাবে না ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তবে ভূত প্রেতের ভয়ে এলাকায় মানুষ যেতে এখনো ভয় পান। স্থানীয় প্রবীণদের মুখ থেকে শোনা যায়, মেহেরপুর জেলার এটিই প্রথম মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদটি সংস্কার করে এর অস্তিত্ব ধরে রাখার দাবী করেন স্থানীয়রা।
করমদি গ্রামের আবু জাফর জানান, আমরা গল্পে শূনেছি,জেলার এটি প্রথম মসজিদ নামে খ্যাত। যেহেতু এর অস্তিত্ব এখনো বিলীন হয়ে যায়নি,তাই সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া উচিৎ।
করমদি জামে মসজিদের ঈমাম মোঃ খাদিমুল ইসলাম বলেন, কয়েকশ বছরের পুরাতন জরাজীর্ণ এই মসজিদটি সংস্কারের জন্য স্থানীয়দের উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। মসজিদটি পুণঃসংস্কার করা হলে প্রচলিত ভূত প্রেতের যে কুসংস্কার আছে দির্ঘদিন যাবত তাও দুর হবে। মানুষ শুন্য এলাকায় আবারও মানুষ চলাচলে সাহস যোগাবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য তোহিদুল ইসলাম জানান,ভিন্ন জেলার মানুষ গোসাইডুবির মসজিদ দেখতে আসেন। কিন্তু স্থানীয়দের মধ্যে অনেক ভয় রয়েছে। ওই এলাকায় একা কেউ যেতে পারেনা।
মসজিদটি জেলার ঐতিহাসিক মসজিদ হিসেবে সরকারি উদ্যোগে সংস্কার করা হলে পুরাতন মসজিদটি যেমন সৌন্দর্য ফিরে পাবে,তেমনী এলাকার মানুষের মধ্যেকার আতংক আর ভয়ের অবসান হবে।
তেঁতুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস জানান, মসজিদটি সংস্কারের জন্য এলকাবাসী উদ্যোগ নিলে আমি আমার ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগীতা করব।
তবে চেষ্টা বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হলে বিভিন্ন দপ্তরের নজরে আসবে । তাহলে সরকারি ভাবেও এটি হয়তো সংস্কার কিংবা সংরক্ষণের ব্যবস্থা হতে পারে। তাছাড়া জ্বীন ভুতের ভয়ে এলাকার মানুষ ওই দিকে আর যায় না তাই সংস্কারের উদ্যোগ নেইনি।
গাংনী উপজেলা ইসালামীক ফাউন্ডেশনের তদারক কর্মকর্তা (সুপারভাইজার) মনিরুর ইসলাম জানান, ২০০৫ সালের দিকে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনায় জেলার ঐতিহাসিক মসজিদ হিসেবে প্রস্তবনা চেয়েছিল।
মেহেরপুর জেলার একমাত্র ঐতিহাসিক মসজিদ হিসেবে সংস্কারের জন্য গোসাইডুবি মসজিদটি সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, এপর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। আস্তে আস্তে হয়তো এক সময়কার এই মসজিদ খাতা কলম, ও মেহেরপুরের ইতিহাসে থাকবে বাস্তবে তার অস্তিত্বের দেখা মিলবেনা।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম জানান, মেহেরপুর জেলার ইতিহাসে গোসাইডুবি মসজিদের নাম উল্লেখ রয়েছে। মসজিদের অনেক কাঠামো এখনও টিকে রয়েছে আমি স্থানীয়দের মুখে শুনেছি। তবে মসজিদটি আমার উপজেলার মধ্যে অবস্থিত। সংস্কারের জন্য আমি চেষ্টা করব।
মেহেরপুরে কর্মকর্তা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক একেএম শাহিন কবীর জানান, মেহেরপুর জেলার একটি ঐতিহাসকি মসজিদ হিসেবে অনেক পরিচিত করমদি গ্রামের গোসাইডুবি মসজিদ। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আমার আগের অফিসারগণ সুপারিশ করে গেছেন। আমিও আমার দপ্তরকে বিষয়টি জানাব।