মেহেরপুরের গণপূর্তের নির্বহী প্রকৌশলী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নিতীর অভিযোগ উঠেছে। অজ্ঞাত ক্ষমতার বলে নিজের মত করে অফিস পরিচালনা করেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবিটি রেখেছেন অফিসের এক কোণায়।
খেয়াল খুশিমত অফিসে আসা যাওয়া করেন, কারনে-অকারনে সরকারি গাড়ি ব্যাক্তিগত কাজে ব্যবহার করা ও ২০১৮-১৯ সালের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজের নামে সরকারি টাকা লুটপাট সহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত জাকির হোসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন, হাতে গোনা কয়েকটি ঠিকাদারের সঙ্গে আতাত করেই এসকল দূর্নীতিতে মত্ত হয়ে উঠেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জাকির হোসেন।
খোজ নিয়ে জানা যায়, জাকির হোসেন ঝিনাইদহে কর্মরত থাকা অবস্থায় একটি অভিযোগের কারনে তাকে ওএসডি করা হয়েছিল। ৬ মাস ওএসডি থাকার পর পুনরায় চাকরি ফিরে পাই জাকির হোসেন। এসময় তাকে ঢাকার হেড অফিসে বদলি করা হয়। পরে মেহেরপুর গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন।
বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, মেহেরপুর গণপূর্ত বিভাগে যোগদানের পর থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জাকির হোসেন ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এস্টিমেটর) আনোয়ারা খাতুনের সহায়তায় একের পর এক অফিশিয়াল অনিয়ম, দুর্নীতি করেই চলেছেন।
এখানে যে যার মতো করে অফিসের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রাপ্ত অভিযোগ অনুযায়ী, মো: জাকির হোসেন ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের কাজগুলো অধিকাংশ না করেই ভুয়া বিল তৈরি করে ঠিকাদারীর হিসাব ছাড়াও আনোয়ারা খাতুনের তৈরি এস্টিমেটের মাধ্যম তিনি প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এস্টিমেটর) আনোয়ারা খাতুন দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর যাবৎ মেহেরপুর গণপূর্ত বিভাগে চাকরিরত আছেন। সেই সুবাদে সবকিছুই তার নখদর্পণে।
এস্টিমেটর আনোয়ারা খাতুন, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আজমুল, বিভাগীয় প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: জামাল উদ্দিন, বিভাগীয় হিসাব রক্ষক মো: হারুনুর রশীদের বিরুদ্ধে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের ৫৫ লক্ষ টাকার কোন কাজ না করেই আত্মসাৎ করেছেন এমন অভিযোগ পাওয়া যায়।
অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৮-০৫-১৭ ইং তারিখে এ অভিযোগের ভিত্তিতে অডিট আসলে ৫৫ লক্ষ টাকা ছাড়াও ৯ লক্ষ ৪৯ হাজার ৫৫০ টাকা আইবি ভাড়া বাবদ বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পান। অনিয়ম গুলো বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে মিটিয়ে আবারও পূর্বের মতই দূর্নীতিতে লিপ্ত হন বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জাকির হোসেনের সঙ্গে ।
এ বিষয়ে আনোয়ারা খাতুনের সাথে যোগাযোগের জন্য গণপূর্ত অফিসে গেলে তার কক্ষে তালা লাগানো দেখতে পাওয়া যায়। তালা লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে একজন বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসে আসলে উনি আসেন, না আসলে আসেন না। দুর্নীতির সকল বিষয় গুলো ম্যানেজ করেই আরও বেপরোয়া হয়ে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের কাজগুলোর মধ্যে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তিনতলার বিশেষ মেরামত কাজ, ৬০০ বর্গফুট বিশিষ্ট কোয়াটারের বিশেষ মেরামত কাজ, হাসপাতালের অভ্যন্তরে সেনিটারী মেরামত কাজ।
মেহেরপুর জেলা কারাগারের মহিলা কয়েদি ভবনের ভিতর এবং বাইরের মেরামত ও সেনেটারী কাজ, কারাগারের অভ্যস্তরে গড়াই ও ভৈরব ভবনের ফ্যান পরিবর্তন সহ অন্যান্য ভবনের বৈদ্যুতিক মেরামত কাজ।
মেহেরপুর জেলা গণপূর্ত স্টাফ ইয়ার্ডের মধ্যে অবস্থিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী বাসার রান্নাঘরের ও বাউন্ডারির মেরামত, মেহেরপুর জেলা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন গণপূর্ত নিজস্ব কোয়াটার এ টাইপ ও বি টাইপ বিশিষ্ট কোয়াটারের ছাদে রুফিং কম্পাউন্ড চিলেকোঠার বিশেষ মেরামত কাজ, গেজেটেড ডরমেটরি বাউন্ডারি ওয়াল ও ড্রেনের কাজ, বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন গেজেটেড ডরমেটরি ভবনের রং এর কাজ, গেজেটেড ভবনের কোয়াটার ১০০০ বর্গফুট ভবন ২ এর ভিতরে এবং বাইরে সিভিল ও সেনেটারি ফিটিংস ফিক্সিং রং এর কাজ।
এ কাজগুলোর মধ্যে অধিকাংশ কাজই না করে বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। কিছু কাজ ঘষামাজা করে সম্পূর্ণ বিল তুলে নিয়েছেন।
২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বিভিন্ন ধরণের কাজ দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ভুয়া বিল তোলা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও অফিসের প্রিন্টার, আইবির আসবাবপত্র ও স্টেশনারি বিভিন্ন মালামাল সবকিছু নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেই ক্রয় করেন।
এগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে কেনার কথা থাকলেও নামমাত্র ঠিকাদারের নামে ও এস্টিমেটর আনোয়ারা খাতুনের সহযোগীতায় কোটেশন করে বিল তুলে নিচ্ছেন নিজেই।
গণপূর্ত ভবনের পাশে আম বাগান টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি না করে ফল ভোগ করা, তাগাদা সত্তে¡ও এখনও আইবি ভাড়া বাবদ ৯ লক্ষ ৪৯ হাজার ৫৫০ বকেয়া আদায় না করা এবং রেজিস্টারে যথাযথভাবে তা সংরক্ষণ না করায় সরকার লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
ইতোমধ্যে মেহেরপুর কোর্ট এলাকায় একটি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ মডেল মসজিদটিও রেহায় পাইনি দুর্নীতির কবল থেকে। মসজিদের ভিত্তি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের রড। পরে মসজিদে নিম্নমানের রড ব্যবহারের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তা সরিয়ে নেওয়া হয়।
মেহেরপুর মুজিবনগর কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক ভবনের ভিতর ও বাহির রং করণের কাজ, ফুল বাগানের গাইড ওয়াল ও গ্রিল রং করণ কাজ, শৌচাগার-পাঠাগার-পাম্প হাউজ মেরামত কাজ, মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উত্তর-পশ্চিম কোন সীমানা প্রাচীর নির্মাণ।
এসকল কাজের নামমাত্র কাজ করে মোটা অংকের বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। মেরামত দেখিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে বিল ভাউচার দাখিল করেও টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। একই তারিখে নিজস্ব অফিসের স্টেশনারী ক্রয়ের ৩টি ভাউচার দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকার বিল প্রদান দেখানো হয়েছে। এছাড়াও স্বজনপ্রীতি এবং হাতে গোনা কয়েকজন ঠিকাদারদের কাজ দেওয়ার অভিযোগ তো আছেই। সব মিলিয়ে উনি মেতে উঠেছেন দুর্নীতির মহাখেলায়।
কাজ না হওয়া দপ্তরগুলোর প্রধানরা জানান, প্রতিষ্ঠান গুলোতে কোন কাজই করা হয়নি, আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দের তুলনায় সামান্য ঘষামাজা করেই কাজের নামে টাকা উঠিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তারা হতবাক। তারা অবিলম্ব দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর দূর্নীতির ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে মেহেরপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জাকির হোসেন অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ উঠেছে সেগুলো মিথ্যা। আমি এরকম কোন দুনীর্তির সাথে জড়িত না। এসময় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি অফিসের কোনায় কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন , অফিসের ডেকোরেশনের কাজ করার জন্য ছবি দুইটি কোনায় রাখা হয়েছে। এমন অবস্থায় অফিসের ছবি নিতে চাইলে তিনি বাধা দেন।
-মর্তুজা ফারুক রুপক