অতি লোভে তাঁতী নষ্ট। একথার প্রমান মিলেছে গাংনীর সব্জী গ্রাম সাহারবাটি এলাকার কৃষকদের ভাগ্যে। শীতকালিন আগাম ফুল কপি ও বাঁধা কাপিতে অতিমাত্রায় কিটনাশক, রাসায়নিক সার ব্যবহার এবং কয়েকটি কোম্পানির কিটনাশক মিশিয়ে ককটেল তৈরি করে ফসলে স্প্রে করে এখন দিতে হচ্ছে খেসারত।
জমির ফুল কপি ও বাঁধা কপিতে পচন ধরায় চলতি মৌসুমে বড় ধরনের লোকসানের মুখে এখানকার কৃষকরা। আগাম শীতকালিন বাঁধা কপি ও ফুল কপির জমিতে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। ফলে উৎপাদিত কপি জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। আর ফুল কপির ওজন প্রত্যাশিত না হওয়ায় বাজরে বিক্রি করতে গিয়ে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের।
বাঁধা কপি ও ফুলকপি বাজারে বিক্রি করে পরের আবাদে যাবেন তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন জেলার কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এবার ২ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। যার বেশিরভাগই ফু
লকপি ও বাঁধা কপি ।
জেলার গাংনী উপজেলার সাহারবাটি, নওয়াপাড়া, কালিগাংনী, গাঁড়াবাড়িয়া, সদর উপজেলার কুতুবপুর, উজলপুর, কুলবাড়িয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের বিস্তির্ণ মাঠে আগাম শীতকালিন সব্জী আবাদ।
এজেলার উৎপাদিত সব্জী জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিনই ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক সবজি চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
সবজির আবাদ করে ভাগ্যের পরিরবর্তন ঘটিয়েছেন এখানকার কৃষকেরা। তবে এবারের চিত্রটা একটু ভিন্ন। আগাম ফুলকপি ও বাঁধা কপির চাষে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে চাষিদের।
গাংনী উপজেলার নওয়াপাড়ার গ্রামের কৃষক মুকুল হোসেন জানান, চলতি মৌসূমে তিনি সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে আগাম বাঁধা কপির চাষ করেছেন। এখন জমি থেকে কপি উত্তোলনের সময়। কিন্তু জমিতে কপি বল তৈরি হবার সময় পাতা শুকিয়ে পচন ধরছে। ফলে আর বল বড় হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা জমিতে কপির এ অবস্থা দেখে আর কিনতেও চাচ্ছেন না। যেখানে বাজরে বিঘা প্রতি বাঁধা কপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দরে। সেখানে এক বিঘা জমির কপি বিক্রি করে ১০ হাজার টাকাও উঠছে না। সার, কিটনাশক ও তেলের উর্দ্ধগতির বাজারে এ দামে কপি বিক্রি করে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
সাহারবাটি গ্রামের কৃষক মিলন হোসেন জানান, তিন বিঘা জমিতে বাঁধা কপির আবাদ করেছিলাম। সার, কিটনাশক, তেল ও জমির লিজ খরচ ধরে বিঘা প্রতি জমিতে বাঁধা কপি উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সেখান কপি বিক্রি করে অর্ধেক টাকাও উঠছে না।
একই গ্রামের কৃষক রিপন আলী বলেন, তিন বিঘা জমিতে শীতকালীন আগাম ফুলকপির আবাদ করেছিলাম। কিন্তু অন্যবারের তুলনায় এবার জমিতে কপি হচ্ছে খুবই ছোট। ফলে ফলনও কম হচ্ছে। বাজার বিঘা প্রতি জমির ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। এ দামে কপি বিক্রি করে আসল টাকা উঠানোয় দায় হয়ে পড়ছে। কৃষি বিভাগ থেকে কোন ধরনের পরামর্শও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগও করেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন মাঠের বাঁধাকপি ও ফুলকপির এই অবস্থার সৃষ্টির জন্য কৃষকরাই দায়ি। তারা ফলন বেশীর আশায় অতিমাত্রায় কিটনাশক ও সার ব্যবহার করছেন কৃষকেরা।
এছাড়াও কয়েকটি কোম্পানির কিটনাশক মিশিয়ে ককটেল তৈরি করে ফসলে স্প্রে করছেন। ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জমি থেকে কাঙ্খিত মাত্রায় ফলন পেতে হলে কৃষকদের সুষম মাত্রায় সার ও কিটনাশক প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন তিনি।