প্রতি বছরের মত এবারও কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকায় যেতে প্রস্তুত হচ্ছেন মেহেরপুরের শতাধিক পেশাদার ও অপেশাদার মৌসুমি কসাই।
গরু, ছাগল, উট কিংবা অন্যান্য পশুর হাড় মাংস কাটাসহ মাংস সাইজ করার কাজে ব্যবহৃত, দা, বটি, ছুরি, চাপাতি, কুড়াল বা অন্যান্য ক্ষুদ্র অস্ত্রগুলি সানিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ও কাঠের গোলাকার কাঠ (স্থানীয় ভাষা খেইটি) প্রস্তুত করেছেন কসাইরা।
তবে, পেশাদার কসাইয়েরা তাদের হেলপার হিসেবে একজন বা দুজন অপেশদার কসাইকেও সাথে নিয়ে থাকেন। আগামীকালকেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন বলে জানিয়েছেন কসাইরা।
ঢাকায় একদিনের কসাই হিসেবেই যাবে এলাকার পেশাদার ও অপেশাদার কসাইরা, বললেন গাংনীর গোপালনগর গ্রামের কসাই খোকন। তিনি বলেন এরা সবাই ঢাকার বুকের একদিনের কসাই।
এলাকাতে সারাবছর বিভিন্ন ক্ষুদ্র পেশার সাথে জড়িত থাকলেও তারা ঢাকায় মাংস তৈরীর কাজ করেন কোরবানীর দিনে। এরা একদিনের কসাই হলেও তাদের আয় কিন্তু কম নয়, দুই থেকে তিনজনের দল এক দিনে আয় করেন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। কখনো কখনো তার চেয়ে বেশীও হয়, বাড়তি হিসেবে।
গাংনীর উত্তরপাড়া এলাকার কসাই সোহাগ হোসেন, মারুফ আহম্মেদ বলেন, ঢাকার মানুষ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের কোরবানি দেওয়ার জন্য গরু, ছাগল, উট দুম্বা প্রস্তুত রাখে। কোরবানির পশুকে কষ্টা না দিয়ে এবং পশুর শরীরে চামড়া ভুলেও না কেটে সঠিক সাইজের মাংস প্রস্তুত করতে তাদের প্রয়োজন হয় প্রশিক্ষিত কসাইয়ের। এসময় চাহিদা বেড়ে যায় এসব কসাইদের। ফলে বাড়ে পারিশ্রমিক।
চৌগাছা গ্রামের কসাই সাহেব আলী ও কালাম শাহ বলেন, প্রতি বছরই কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে এই এলাকা থেকে আমরা শতাধিক কসাই ঢাকাতে যায়। এসময় কিছু অপেশাদার বা মৌসুমি কসাইদেরও সাথে নিয়ে থাকি আমরা। ঢাকাতে ঈদের দিন কোরবানির পশু জবাইয়ের সংখ্যার তুলনায় পেশাদার কসাইয়ের সংখ্যা কম হওয়ায় এসব মৌসুমি কসাইদেরও চাহিদাও থাকে আকাশচুম্বি।
এবার আমরা পশুর দাম অনুযায়ী পারিশ্রমিকও নির্ধারণ করে রেখেছি। পশুর দামের পাঁচ ভাগের এক ভাগ হবে কসাইয়ের মজুরি। এ দাম সকাল থেকে দুপরের আগ পর্যন্ত। এর পর বেলা যত বাড়বে ততই কমবে তাদের মজুরি। পশুর দাম অনুযায়ী হাজারে ২০০টাকা পারিশ্রমিক নেবো।
শিশিরপাড়া গ্রামের কসাই মহির উদ্দীন বলেন, ঢাকার বেশীর ভাগ মানুষ ঈদের আগেই যার যার পছন্দ অনুযায়ী কসাই ঠিক করে রাখেন। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সবাই চান ঈদের নামাজের পরপরই কোরবানী সেরে ফেলার। তাই কসাইয়ের চাহিদা সকালের সময়টায় বেশীই থাকে। কসাইয়ের দর বা পারিশ্রমিক নির্ভর করে কখন পশু জবাই হবে তার উপর।
অনেকদিন ধরে কসাইয়ের কাজ করেন গাংনী শহরের প্রশিক্ষিত কসাই আরিফ হোসেন। ঈদের সময়ে তাদের কদর ও মজুরি অনেক বেড়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, কোরবানির দিন সকাল থেকেই আমাদের ব্যস্ততা শুরু হয়। সকালে কেউ গরু জবাই ও কাটাকাটি করতে চাইলে তাদের মোট পশুর দামের ওপর প্রতি হাজারে ২০০ টাকা দিতে হবে।
এ টাকায় একজন কসাই গরু জবাই থেকে শুরু করে চামড়া ছাড়ানো, হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে তা ছোট করে কাটা, হাড়গুলো ছোট ছোট করে কেটে দেয়া, নাড়িভুঁড়ি পরিষ্কারসহ একেবারে সব কাজ করে দেবে। তিন থেকে চার মণ মাংস হবে, এমন একটা গরুর জবাইয়ের কাজ দুই জন কসাই এক ঘণ্টায় শেষ করতে পারেন বলেও জানালেন তিনি।
কসাই ইনতাজুল ইসলাম জানান, মেহেরপুর সদর উপজেলার বারাদী, আমঝুপি, কইরাডাঙ্গা, শ্যামপুর, উত্তর শালিকা, গাংনীর চেংগাড়া, সাহারবাটি বামন্দীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক কসাই এই ঈদ মৌসুমে যান ঢাকাতে। তারা একদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ইনকাম করেই বাড়ি ফেরেন। কোরবানির আগের দিন পর্যন্ত হাট থেকে গরু কিনে গেরহস্তের বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দেওয়া এবং তাদের খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত করান। তাতে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা পারিশ্রমকও পান।