মেহেরপুর পৌর সভার সাবেক মেয়র ও মায়ের হাসি ক্লিনিকের মালিক মোতাচ্ছিম বিল্লা মতুসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে খুলনা বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন সাংবাদিক মাহাবুব চান্দু।
আজ রবিবার খুলনা বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক কনিকা বিশ্বাস পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুষ্টিয়াকে আগামী ২ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন। এর আগে গত ২৯ আগষ্ট মামলাটি আমলে নিয়ে গতকাল ১০ সেপ্টেম্বর মামলার আদেশের দিন ধার্য করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, মেহেরপুর পৌর সভার সাবেক মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু, মায়ের হাসি ক্লিনিকের ম্যানেজার সাইফুল বাহার স্বাধীন, ইন্টার্ন চিকিৎসক মতুর ছেলে মুত্তাকী বিল্লাহ সাফিন, মায়ের হাসি ক্লিনিকের পার্টনার শামীম হাসান সোহাগ, সহযোগী তোহিদুল ইসলাম লিয়ন, শোমিক ব্রো ও এসএম মেহেরাব হোসেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৩/২৫(১)(ক)/২৫(১)(খ)/২৫(২)/২৯/৩১/৩৫ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে। এর আগে বাদী মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করলে মামলাটি আমলে নিয়ে প্রথমে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন এবং পরে মামলাটি নথিজাত করেন। বাদী ন্যায় বিচারের স্বার্থে খুলনা বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্ত হন।
মামলার এজাহারে জানা গেছে, বাদি মাহাবুব চান্দু ২০ বছর যাবৎ সাংবাদিক পেশায় নিযুক্ত। বর্তমানে তিনি মেহেরপুর জেলা প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক ও স্থানীয় দৈনিক মেহেরপুর প্রতিদিন পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ইতিপূর্বে তিনি জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, প্রতিদিনের সংবাদসহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে সুনামের সাথে মেহেরপুরে সাংবাদিকতা করেছেন।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তার বেশ সুনাম আছে। তার প্রকাশিত সংবাদের মধ্যে অনেক সংবাদ আদালত আমলে নিয়ে স্বপ্রণোদিত মামলা করেছেন এবং ভুক্তভোগীরা সুফল পেয়েছেন। বাদী মেহেরপুর প্রতিদিনের অনুসন্ধানী কাজে গত ২৪ জুলাই সকাল ১১টা ৫৩ মিনিট থেকে দুপুর ১টা ১৬ পর্যন্ত মেহেরপুর সরকারী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ও জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে অনুসন্ধান মুলক কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
আসামী মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতুর মেয়ে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এর চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত থাকাতে তিনি খবরটা জেনে ক্ষিপ্ত হন। তারপর মায়ের হাসি ক্লিনিকের মালিক হিসেবে তিনি মেহেরপুর প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদককে আনুমানিক ২টা ২৫ মিনিটের দিকে মোবাইলে হুমকি দিয়ে বলেন তোমরা কি বারেখা হয়েছো, তোমাদের দাঁত ভেঙ্গে দিব, ৫০টা চাঁদাবাজির মামলা দিব বলে হুমকি দিয়ে ফোন কেটে দেন। এ বিষয়ে ২৬ জুলাই মেহেরপুর সদর থানাতে একটি জিডি হয়, যার নং ১৩৯১।
পরবতির্তে আসামী মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু তার মালিকানাধীন মায়ের হাসি ক্লিনিকের ম্যানেজার আসামী সাইফুল বাহার স্বাধীনকে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সদর থানা মেহেরপুর বরাবর বাদীর নামে একটি মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ লিখে থানায় অভিযোগটি জমা না দিয়ে মায়ের হাসি ক্লিনিক আইডি থেকে পোষ্ট করে। পরে মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতুর ছেলে মুত্তাকী বিল্লাহ শাফিন তার ফেসবুকে নামধারী সাংবাদিক লিখে শেয়ার করে।
মুত্তাকী বিল্লাহ শাফিনের পোস্টে গিয়ে আসামী তৌহিদুল ইসলাম লিওন বাদী সম্বদ্ধে কৃষ্ণ নগরী, ভাত পেতনা, চাঁদাবাজী, ৫টা বউসহ ইত্যাদি মানহানি কর কথা লিখেছেন। সে আরো বলে জেল খেটে দেশে ফিরে এখন বড় সাংবাদিক হয়েছে”। আসামী সৌমিক ব্রো কমেন্টস করে বলেছেন, “আমি থাকলে শালাকে ওন স্পট হিট করে তোর ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে রাখতাম”।
আসামী শামিম হাসান সোহাগ ও মেহেরাব হোসেন অপি মিথ্যা বিষয়কে শেয়ার করে লাইক দিয়ে অপপ্রচারে সহায়তা করেছে। আসামীরা একই বিষয় একাধিকবার সোসাল মিডিয়ায় প্রচার করে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে ভাইরাল করেছে।
আসামী মেহেরাব হোসেন অপি একটি অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল মেহেরপুর নিউজ ডটকম পোর্টালের ফেসবুক পেজ থেকে মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতুর মিথ্যা অভিযোগটি লাইভ প্রকাশ করে এবং নিজ আইডিতেও শেয়ার করে ভাইরাল করে। আসামীদের মিথ্যা অপপ্রচার করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে এবং অনুসন্ধানী ও সুস্থ ধারার সাংবাদিক গোষ্টীর পথ রুদ্ধ করেছে বলে বাদী অভিযোগ করেন।
মামলায় বাদীর পক্ষে খুলনার সিনিয়র আইনজীবী ইকবাল আহমেদ, মিঠু চন্দ্র বসাক আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেন। বাদী পক্ষের আইনজীবীরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক মাহাবুব চান্দুর বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবজীর অভিযোগ তোলায় গত ৩০ জুলাই মেহেরপুরের সাংবাদিক সমাজ জেলা প্রসাশকের কার্যালয়ের সামনে একটি মানববন্ধনও করে।