সু-স্বাদু আর রসে ভরপুর আমের কথা উঠলেই চলে আসে মেহেরপুরের হিমসাগর আমের কথা। জেলায় বেশ কয়েকটি জাতের আমের চাষ হয়ে থাকে, তার মধ্যে হিমসাগর, ল্যাংড়া, আমরুপালি, বিশ্বনাথ ও ফজলি এই কয়টি আম জেলার সুখ্যাতি বয়ে নিয়ে এসেছে। শুধু দেশে নয়, মেহেরপুরের আম এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বাগানমালিকরা বলছেন সম্পুর্ণ বিষমুক্ত ও কোন প্রকার কেমিক্যাল ছাড়াই হিমসাগরসহ সব আম দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছেন, আমের মুকুল আসা থেকে শুরু করে আম বাজারজাত করা পর্যন্ত সকল প্রকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বাগান মালিকদের।
মেহেরপুর জেলায় চলতি বছরে ২ হাজার ৩৪০ হেক্টর আম বাগানে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার মেট্রিকটন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে হিমসাগর আমের বাগান রয়েছে ৭০০ হেক্টর জমিতে। চলতি সময়ে ৪০ মেট্রিক টন হিমসাগর আম রপ্তানি করার সম্ভাবনা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে। দেশের চাহিদা পুরুনের পাশাপাশি সরকারি ঘোষনা অনুযায়ী আম সংগ্রহ এবং বাজারজাত করতে সংগ্রহের জন্য প্রস্তত করেছে মেহেরপুরের আমচাষিরা ।
আম বাগান মালিক আব্দুর রহিম জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর অনুকুল আবহাওয়ায় হিমসাগর আমের কাংখিত ফলন হয়েছে। বিশেষ করে মেহেরপুরের হিমসাগর আমের চাহিদা অন্যান্য আমের চেয়ে অনেক বেশি। আমাদেও জেলায় তেমন ঝড় ঝাপটা না হওয়ায় প্রতিটি আমগাছ আমে নুইয়ে পড়েছে। ফলন যেমন ভাল হয়েছে তেমনিভাবে আমরা একেবারেই কেমিক্যাল ও কীটনাশকমুক্ত আম উৎপাদন করেছি। যা আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হবে। তবে বিদেশেও বিক্রির জন্য উন্মুক্ত বাজার তৈরী করতে পারলে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হবে বলেও আশা করেন তিনি।
বাগান মালিক সাজাহান আলী জানান, এবছর আমের বাম্পার ফলন পেয়েছি। সযত্নে আম বাজারজাত করার জন্য প্রস্তত রয়েছি। আশা করি ন্যায্য মুল্য পাব। তবে ন্যায্য মুল্য না পেলে লোকসান হবে। বিশ্ব বাজারে মেহেরপুরের আমের বাজার তৈরী করে চাষিদের আম চাষে উৎসাহি করার জন্য কৃষি বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
আমের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মেহেরপুরের হিমসাগর আম যখন বাইরের জেলায় বিক্রি করতে যায় তখন অনেক কদর থাকে এই আমের। অনেকেই জানেন মেহেরপুরের আম মানেই বিষ ও ক্যামিক্যাল মুক্ত।
মেহেরপুরের আমের কথা শুনলে অন্যান্য জেলার আমের আগেই মেহেরপুরের আম আগে বিক্রি হয়ে যায়। এবার তিনি বিভিন্ন বাজারে আম নিয়ে ব্যবসা করবেন বলে জানিয়েছেন এবং বাগান মালিকদের সাথে আম কেনা বেচার কথা পাকা করছেন। সরকারি নিধারিত সময়ে তিনি আম বাজারজাত করার চেষ্টা করছেন।
আমের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, আমাদের মেহেরপুর জেলায় এখনও আম সংগ্রহ শুরু হয়নি। তবে অনেক গাছের আম পাকা শুরু হয়েছে। গাছ থেকে পাকা আম পড়ে নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু বাজারে নিয়ে যেতে পারছিনা। তবে আম গাছে আম দেখে সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারণ করার আনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক-শংকর কুমার মজুমদার জানান, জেলায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর আমের অনেক ভাল ফলন হয়েছে। জেলায় ২৩৪০ হেক্টর আম বাগানে প্রায় ৪০থেকে ৪৫ হাজার মেট্রিকটন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বিশেষ করে জেলার হিম সাগর আমের অনেক খ্যাতি রয়েছে। হিমসাগর আম ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশে এবার রপ্তানি করা হবে। সে লক্ষে ইন্টারন্যাশনাল ভার্জিনিয়াটেক, গ্লোবাল ট্রেড লিংক, গ্রীনগ্লোবাল, বিএইচ ট্রেডার ও নাফিজা এন্টারপ্রাইজসহ বেশ কয়েকটি রপ্তানি কারক প্রতিষ্ঠান আম ক্রয় করতে আগ্রহপ্রকাশ করেছে। আম ক্রয়ের লক্ষে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি আম বাগান তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে। গত বছরেও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হিম সাগর আম রপ্তানি করেছিল। এবছরেও তারা আমের চাহিদা দিয়েছেন।
আমরা আশাকরি মেহেরপুরের হিমসাগর, লাংড়া ও আমরুপলি শুধু দেশেই নয়,বিদেশেও খ্যাতি বয়ে আনবে। সেই সাথে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।