সরকারি যানবাহনেও নিয়ম মেনে হর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না। যার যার ইচ্ছে মত গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করছেন। আর হর্নের বিকট শব্দে অতিষ্ঠ লাখ লাখ মানুষ। এ বিষয়ে প্রশাসনও কার্যকরি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না । তবে আশার বাণি শুনিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার।
সরেজমিনে মেহেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র ড. শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কের সামনে প্রধান সড়কে দাঁড়িয়ে দেখা যায়- ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক, লেগুনা, নসিমন-করিমন, মটর সাইকেলে কারো এ্যাম্বুলেন্সের, কারো ট্রাকের, কারোবা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির হর্ণ লাগানো।
এসব হর্ণ বাজিয়ে দ্রæত গতিতে চলছে ছোট ছোট যানবাহন। কেউ পথ না ছাড়লে তাকে দেয়া হয় হুমকি ধামকি। দ্রæতগতিতে শহরের মধ্যে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত মেহেরাব হোসেন হোটেল বাজার থেকে মহিলা কলেজ মোড়ে যাবে। মটর সাইকেলে ট্রাকের হর্ন বাজিয়ে সামনে জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। সামনে থেকে বুঝার উপায় ছিল না যে মটর সাইকেলের হর্ন বাজানো হচ্ছে না মালবাহী ট্রাকের। তার সামনে থাকা বেশিরভাগ ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক, মোটর সাইকেল পেছনে ট্রাক মনে করে তাকে পথ দিচ্ছিল। কারণ তার মটর সাইকেল থেকে ট্রাকের হর্ন বাজানো হচ্ছিল।
শহরের প্রাণকেন্দ্রে নগর উদ্যানের সামনে জানতে চাইলে মেহেরাব বলেন- ভাই রাস্তায় যানজট লেগেই আছে তাই ট্রাকের হর্ণ লাগিয়েছি যাতে সহজে বের হওয়া যায় অনেকের আগে।
সুফলও পাওয়া যায়। এ হর্ণ শুনলে সামনের মানুষ ও যানবাহন পথ ছেড়ে দেয়।
ট্রাকের হাইড্রোলিক হর্ন মানুষের অনেক ক্ষতি হয় তাছাড়া এ হর্ণ ব্যবহার করা আইনত অপরাধ তার পরও আপনি কেন এ হর্ণ লাগিয়েছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, অনেকে মটর সাইকেলে এ্যাম্বুলেন্সের হর্ন লাগায় আবার অনেকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও পুলিশের গাড়ির হর্ণ ও মিউজিক বাজায় তখন শব্দ দুষণ হয় না, আমার এটায় আপনার সমস্যা মনে হলো? পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন- এই হর্ণ বাজানো অপরাধ জানি।
আইন অমান্য করায় আমার সর্বচ্চ জরিমানা হবে ১শ টাকা। কিন্তু কেউ তো জরিমানা করেনা। মটর সাইকেল ছাড়াও এখন বাই সাইকেলেও তো এমন হর্ণ লাগানো হচ্ছে। মেহেরপুর শহরে চলাচলকারী অন্তত ৪০ভাগ মোটর সাইকেলে এমন ভিন্নধর্শী হর্ণ ব্যবহার হচ্ছে।
রাতের নীরবতাকেও ফালাফালা করে ঢুকে পড়ছে মটর সাইকেলে লাগানো ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ির হর্ণ। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ কারো মাথাব্যথা নেই মোটর সাইকেলে ট্রাক, ফায়ার সার্ভিস, এ্যাম্বুলেন্সের হর্ণ লাগানো বিষয়ে।
বরং ক্ষমতাসীন দলেরও কেউ কেউ এই হর্ণ ব্যবহার করছেন। এরা শব্দদূষণের কোনও সময়সীমাও মানছেনা। আইন অনুযায়ি হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এসব জায়গায় জোরে হর্ন বাজানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও সেই নিয়মও মানা হচ্ছেনা।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার সজিব উদ্দীন স্বাধীন জানান- বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী কোনো এলাকায় ৬০ ডেসিবেল মাত্রার বেশি শব্দ হলে সেই এলাকা দূষণের আওতায় চিহ্নিত হবে।
৬০ ডেসিবেল শব্দ মানুষের সাময়িক শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে এবং ১০০ ডেসিবেল শব্দে চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে। বিষয়টি দেখবালের দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার। মেহেরপুর জেলা মটর যান পরিদর্শক সালাউদ্দীন প্রিন্স জানান হর্ণ সরকারের পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সের নিজ নিজ শব্দের হর্ণ আছে। এগুলো অন্যকোন পরিবহনে ব্যবহার নিষিদ্ধ।
মেহেরপুরের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী বলেন- মেহেরপুরে না থাকলেও বেশ কয়েকটি জেলাতে বিচার বিভাগের গাড়িতেও ট্রাকের হর্ণ বাজানো দেখেছি। পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির হর্ণ অন্য কোন গাড়িতে লাগানো বা বাজানো আইনত দÐনীয়।
গাড়ির কাগজপত্র ও ফিটনেসের পাশাপাশি এসব হর্ণ বাজানো বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গণিও এসব হর্ণ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেয়ার উপরোক্তি বাণি শুনিয়ে বলেন- কিছু উঠতি যুবক এসব হর্ণ বাজিযে সাপের মতো একিয়ে বেকিয়ে মোটর বাইক চালায়। এরাই পথ দূর্ঘটার অন্যতম আরও একটা কারণ।
-নিজেস্ব প্রতিবেদক