হরতাল-অবরোধে মেহেরপুরে পর্যটন, আবাসিক হোটেল ও হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে স্বাধীনতার পূন্যভূমি মুজিবনগর ও কৃষিনির্ভর মেহেরপুরে আবাসিক হোটেলগুলোতে অতিথি কমে যাওয়ায় এই মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতেও ভোক্তার অভাব দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরতাল-অবরোধের কারণে মুজিবনগরে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। সেখানে শতাধিক প্রান্তিক ব্যবসায়ী পর্যটকের অভাবে তাদের ভাসমান দোকান গুটিঁয়ে রেখেছে। একই সঙ্গে কমেছে ব্যবসাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সভা, সমিতি ও সেমিনার। যার ফলে হোটেল ব্যবসায় মন্দাভাব নেমে এসেছে। শহরের অন্যতম রেস্তোরাঁ ‘লা-ভোগ’ এই শীতের শুরু থেকেই বিভিন্ন সেমিনার, ছোট ছোট পার্টির অনুষ্ঠানে মুখর থাকতো। সেখানে সেসব অনুষ্ঠানও বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আনোয়ারুল হক কালু জানান ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত সভা, সেমিনার, জন্মদিবস পালনের অনুষ্ঠান কমে গেছে। অবরোধে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারে আশঙ্কায় হোটেল রেস্তোরাঁতে কেউ অনুষ্ঠান করতে চাচ্ছেনা। ফলে তাদের ব্যবসায় এতটাই ধ্বস নেমেছে যে- স্টাফদের বেতন বন্ধ হবার উপক্রম। মুজিবনগর পর্যটন এলাকায় ব্যক্তি উদ্যেগে গড়ে উঠেছে ‘অনন্যা’ ও ‘মনোরমা’ নামের দুটি মিনি চিড়িয়াখানা। মনোরমা চিড়িয়াখানার মালিক হাসানুজ্জামান লাল্টু জানান- পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে মুজিবনগর। পর্যটক না পাওয়াতে চিড়িয়াখানার কর্মরত লোকবলের বেতন হয়তো বাকী রাখা যাবে কিন্তু প্রাণীদের খাবারের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে ধার দেনা করে।
আবাসিক হোটেলগুলোতে গত ১০দিন কোন রুমে অতিথি মেলেনি। কৃষি নির্ভর মেহেরপুর জেলা থেকে বিভিন্ন ধরণের সবজি সংগ্রহে ঢাকা, চিটাগাং, বগুড়া, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ মেহেরপুরে আসেন। মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পর্যটন এলাকায় এই সময় প্রতিদিন দেশ বিদেশের মানুষের ঢল নামে। তাঁরা মাঝারি মানের আবাসিক হোটেলগুলোর প্রধান গ্রাহক। কিন্তু এখন তাঁদের আসাও বন্ধ রয়েছে। বুধবার মুজিবনগর পর্যটন আম্রকাননে গিয়ে দেখা যায় পসরা সাজিয়ে বিভিন্ন ধরণের সামগ্রি বিক্রেতারা তাদের পন্য রিক্সা ভ্যানে গুটিয়ে পলিথিনে ঢেকে রেখেছে। সেখানে তাদের কোন বিক্রেতার দেখা মেলেনি। জেলা শহরের আবাসিক ‘সোহান গেস্ট হাউজ’ মালিক ওবায়দুর রহমান জানান, গত দশদিনে গেস্ট হাউজে কোন অতিথি আসেনি। হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার না হলে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল ও স্টাফদের বেতন দিতে হবে পুঁজি ভেঙ্গে। শহরের অন্যতম আবাসিক হোটেল ‘ফিন টাওয়ার’ এর একই অবস্থা অতিথি সংকটে।
ভোক্তা সংকটে ‘গ্রিণ ফুড’ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। মেহেরপুর জেলা শহরের অন্যান্য হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে প্রতিদিন দুপুর ও রাতের খাবারের অতিথিও কমে গেছে বলে জানা গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা হরতাল অবরোধ প্রত্যাহারের বিকল্প পথে যাবার জন্য দাবি জানিয়েছে।