মুক্তিযোদ্ধাদের কটুক্তি ও অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেওয়ায় মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসকে উভয় পদ থেকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
বৃহস্পতিবার সকালে জেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদ প্রাঙ্গন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে গিয়ে সেখানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধন শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। সবশেষে জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচী শেষ কেরেন।
স্মারকলিপিতে মুক্তিযোদ্ধারা জানান, আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসের পিতা মরহুম আব্দুর রহমান খলিফা একজন রাজাকার ছিলেন। তার ভাইয়েরা এখনও জামায়াতের রাজনীতি করেন। রাজাকারের ছেলে কখনো আওয়ামী লীগ হতে পারে না। আওয়ামী লীগের আড়াল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনাবোধকে ধ্বংস করছেন তিনি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মী কারোর সাথেই ভাল আচরণ করেন না, শুধু গালি আর হুমকি দেন। আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ভগ্নিপতি। যার ফলে কেউ কোন প্রতিবাদের ভাষা খুজে পান না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করলে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।
কর্মসূচী বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা খাজা নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সাবেক সহকারি জেলা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম, গোলাম হোসেন, পিরোজপুর ইউনিয়ন কমান্ডার ইদ্রিস আলী, মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যাংকার জিল্লুর রহমান, সাবেক থানা কমান্ডার নজরুল ইসলাম, সাবেক জেলা ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল আজিজ, মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি হারুনুর রশিদ, সাবেক উপজেলা কমান্ডার আবুল কাশেম।
মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আপনি রাজাকারের ছেলে। দ্রুত চেয়ারম্যানের চেয়ার ছাড়েন নচেৎ টেনে হেঁচড়ে নামানো হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা কেই ভিজিএফ’র চাল বা কম্বল নিবেন না।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ বলেন, বাবলু বিশ^াসের নাম উচ্চারণ করতেই ঘৃণা লাগে। অবিলম্বে তাকে জেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। বাবলু বিশ্বাসের বাবা ছিলেন একজন অস্ত্রধারী রাজাকার।
সাবেক উপজেলা কমান্ডার আবুল কাশেম বলেন, বাবলু বিশ্বাস মরহুম ছহিউদ্দিনের জামাই ভাবতে লজ্জা হয়। তিনি কিভাবে রাজাকারের ছেলের সাথে তার মেয়েকে বিয়ে দিলেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেনকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, পারিবারিক মন্ত্রী না হয়ে মেহেরপুরের মানুষের মন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করেন।
তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের দেখলে নাক শিটকান। চরিত্র বদল করেন। নচেৎ আপনাদের বিরুদ্ধেও মাঠে নামবো। শেখ হাসিনা আমাদের অভিভাবক তার কাছে অভিযোগ দিতে একটুও সময় লাগবে না। আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম বলেই আপনি সোনার পালঙ্কে শুয়ে আছেন।
খাজা নাজিম উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, রাজাকার স্বাধীনতা বিরোধীদের আওয়ামী লীগের কোন জায়গা নাই। এটা শেখ হাসিনার কথা। সেই হিসেবে বাবলু বিশ্বাসের বহিস্কার এখনই করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলীর কুলখানী ও দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস তার বক্তব্যে তিন জন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে চোর ও অশ্রাব্য ভাষায় কটুক্তি করেন। এই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ করে সেই অনুষ্ঠানের খাবার না খেয়ে অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করেন।
মেপ্র/ইএম