মেহেরপুরে আলুর দাম না পাওয়ায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কয়েক’শ আলু চাষী। বিঘা প্রতি ৫-১০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষীদের। কৃষি বিভাগের হিসেবে প্রতিবছর আলু চাষ করেন প্রায় ৮০ লাখ কৃষক। এ বছর বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে আলু চাষীদের। যারা আলু আবাদ করছে, সবার এখন লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। জমি থেকে বাজার পর্যন্ত বিঘা প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে চাষীদের । আলুর দামে এ বেহাল অবস্থার কারণে হতাশ কৃষকেরা। তবে সরকার যেহেতু আলু মজুদ করে না, সেহেতু আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের সরাসরি ভূমিকাও নেই।
এসব কারণে প্রায় সব আলু চাষীরা এবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। আলুর দাম মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। পাইকারি বাজারে কৃষকেরা প্রতি কেজি আলু বিক্রি করছেন মাত্র ৮ থেকে ১২ টাকা দরে। যেখানে তাদের বীজ কিনতেই খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাকালিন সময়ে আলুর দাম বেশী হওয়ায় লাভের আশায় বেশী দামে বীজ কিনেছি। অতিরিক্ত সরবরাহ ও চাষের কারণেই আলুর বাজারদর এতটা কমে গেছে। যার ফলে তারাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এদিকে আলুর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার পাশাপাশি কোল্ড স্টোরেজ বা হিমাগারের সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগও নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।
মেহেরপুর আশরাফপুর গ্রামের আলুচাষী আহসান আলী এ মৌসুমে প্রতি বিঘায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকারও বেশী খরচ করে সাড়ে ৭ বিঘা আলু চাষ করেছি। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে পরিবহণ খরচ বাদ দিয়ে মণ প্রতি দাম পাচ্ছি মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। অর্থাৎ, কেজি প্রতি পাইকারি ১০-১২ টাকার চেয়ে সামান্য কম-বেশী। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি আলুর দাম একটু বেশী করে বাজারজাত করে দিত তাহলে আমরা চাষীরা ক্ষতি থেকে বেচে যেতাম।
সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের আলুচাষী হাফিজুর রহমান ও আশাদুল ইসলাম বলেন, গতবছর আলুর চাষ করেছিলাম। গড়ে প্রায় ১ হাজার টাকা মণে আলু কিনেছিলেন তিনি এবং লাভও হয়েছিল। কিন্তু এবছর বেশী দামে বীজ সরবরাহ হওয়ায় আলুর চাষে তারা লোকসানে পড়ছেন। এখন সরবরাহ হয়ে গেছে বেশী আর দাম হয়ে গেছে কম। আলুচাষী শামীম হোসেন বলেন, করোনার সময় আলুর দাম বেশী থাকায় সেই প্রভার বীজের উপর পড়ে। সেই সাথে লেবার খরচ বেশী পড়ে যায়। এতে অনেক টাকা বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে আলু চাষে। আমরা যদি ভালো দাম পেতাম তবে হয়তো ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারব।
পাইকারি আলু ব্যবসায়ী রিপন আলী জানান, কৃষকদের মতো পাইকারি ব্যবসায়ীরাও কম দামে আলু কিনে তারাও লোকসানে পড়ছেন। প্রতি কেজি ২০ টাকা করে কিনলে ১৫ টাকায় বিক্রয় করতে হচ্ছে আবার ১৫ টাকাই কিনলে ১০-১২ টাকাই ঢাকার পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। এতে পরিবহণ খরচসহ তাদের মোট যে খরচ হচ্ছে, তাতে বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদেরও।
মেহেরপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ স্বপন কুমার খাঁ জানান, মেহেরপুরের মাটি অনেক উর্বর। চলতি বছরে আলুর আবাদ অনেক বেশী হয়েছে। জেলায় ১২৭৫ একর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের ১২৪০ একর আলুচাষ হয়েছিল। এবার বেশি আলু চাষ করা হয়েছে। তবে বাস্তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারে দাম ভালো থাকায় আলু চাষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে বাজার মনিটিরিং করা হচ্ছে।