এম এফ রুপক:
সোহাগ ও তীথি দু-জনই বেশ ভালো বন্ধু। সোহাগের বাড়ি মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামে ও তীথির বাড়ি মেহেরপুরের মল্লিক পাড়ায়। পড়াশুনার পাশাপাশি যৌথভাবে শুরু করেছে অনলাইনে পন্য বিক্রির ব্যবসা। নাম দিয়েছে “কি নিবেন”। বছর খানেক হলো তাদের এই অনলাইন ব্যবসা। ফ্যাশান, ঘরোয়া পন্য, বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক, মধু, খাটি গরুর দুধ, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পন্য অনলাইনের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে পৌছে দিচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। এক বছরে বেশ সাড়া পেয়েছে। “কি নেবেন ডট কম” নামের ওয়েব সাইট ও ফেসবুক পেজ এর মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্ডার নেয় সোহাগ, তীথি। করোনাময় এক বছরে প্রায় ৫ লাখ টাকার বিভিন্ন পন্য বিক্রি করেছে তারা। মেহেরপুর ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা অর্ডার পাচ্ছে। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পন্য পৌছে দিচ্ছে গ্রাহকদের দোর গোড়ায়। ঘরে বসে পছন্দের পন্য পেয়ে খুশি সাধারণ গ্রাহকরাও। সোহাগ, তীথি উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি “আজকের ভালো কাজ” নামের একটি সেচ্ছাসেবি সংগঠনও পরিচালনা করে।
সোহাগ ও তীথির মত মেহেরপুরের হোটেল বাজারের মাহামুদা খাতুনও শুরু করেছেন অনলাইনে ব্যবসা। গৃহীনি মাহমুদা খাতুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে বিক্রি করেন নারীদের আকর্ষনীয় বিভিন্ন পোশাক। দোকানের পাশাপাশি ক্যাশ অন হোম ডেলিভারিও দিচ্ছেন মেহেরপুর সহ বিভিন্ন জেলায়। কখনো পোশাক কিনে আবার কখনো নিজেই ডিজাইন করে তৈরি করে বিক্রি করছেন তিনি। করোনাকালে বেশ সাড়া পেয়েছেন মাহামুদা। তিনি জানান, স্বামী, ছেলে নিয়ে বেশ ভালোই আছি। পরিবারের সহযোগীতাই নিজেই গড়ে তুলেছি এই শপিং সেন্টার। এতে নিজেরও যেমন ভালো সময় যাচ্ছে তেমনি নারীরাও যে সংসারের হাল ধরতে পারে সেটাও দেখাতে পারছি।
২০১৬ সালের পরে থেকে দেশে ই-কর্মাস ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হতে শুরু করেছে। ২০১৭ সালে ই-কর্মাস বাজারের আকার ছিল ৮৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন টাকা। ২০১৮ সালের শেষে গিয়ে দাঁড়ায় ১০৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন টাকা, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ই-কর্মাসের আকার ছিল ১৩১ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন টাকা।
দেশে ই-কর্মাসের বাজার বেশ ভালো আকার ধারণ করেছে গত বছরের মার্চের শেষের দিকে শুরু হওয়া করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে। করোনা প্রতিরোধে মানুষ চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় বাসায় বসে অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে পণ্য কেনাকাটা শুরু করে।
বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মহামারির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। করপোরেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ভয়াবহ এ মহামারি প্রভাব ফেলেছে ব্যক্তিপর্যায়ে। চাকরির বাজারেও এখন ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা অনেক ক্ষুদ্র-মাঝারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় মেহেরপুরের বিভিন্ন পোশাকের দোকান শুরু করেছে অনলাইনে পোশাক বিক্রি।
মুজিবনগরের ফ্যাশান পয়েন্ট তেমনি একটি পোশাকের দোকান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “ফ্যাশন পয়েন্ট” নামের একটি পেজ খুলে শুরু করেছেন পোশাক বিক্রি। নতুন পোশাকের ছবি পোষ্ট করে গ্রাহকদের কাছ থেকে মোবাইলের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে পৌছে দিচ্ছেন বাড়িতে। ফ্যাশান পয়েন্টের মালিক আসাদুজ্জামান তুকা জানান, করোনার মহামারির সময় কাস্টমার পাচ্ছিলাম না ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। লক ডাউন থাকায় নিজেও দোকান খুলতে পারছিলাম না। এমন অবস্থায় ফেসবুক পেজ খুলে পোশাকের ছবি পোষ্ট করতে লাগলাম। সেটা দেখে কাস্টমাররা বেশ সাড়া দিলো। এর পর থেকে দোকানের পাশাপাশি অন লাইনেও পোশাক বিক্রি করি।
মেহেরপুরের আরও একটি পোশাকের দোকান হচ্ছে “ড্রেস পয়েন্ট”। সাইফুল ইসলাম মিঠু মালয়েশিয়া দির্ঘদিন থাকার পর দেশে এসে শুরু করেছেন পোশাক বিক্রির কাজ। তিনি ফ্যাশান পয়েন্ট এর মত ফেসবুক পেজ খুলে অনলাইনের মাধ্যমে পন্য বিক্রি করেন। কুরিয়ারের মাধ্যমে মেহেরপুরের বাইরে পোশাক পৌছে দিচ্ছেন।
এছাড়াও “শখ অনলাইন শপ” নামের মেহেরপুর মল্লিক পাড়ায় রয়েছে একটি অনলাইন শপিংসেন্টার। নতুন করে শুরু হওয়া এই অনলাইন শপটি ইতিমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।
এ বিষয়ে মেহেরপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, বর্তমান বিশ্ব ও মানব সম্প্রদায় আজ এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে পার হচ্ছে। কোভিড-১৯-এর কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে এবং লম্বা সময় ধরে কর্মযজ্ঞে স্থবিরতা বিরাজ করেছে। কর্মহীনতার জন্য পরিবারের আর্থিক উপার্জন কমে যাচ্ছে। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের খাপ খাইয়ে নিতে অনলাইন ব্যবসা বেশ সম্ভাবনাময়। করোনার তৈরি হুমকি থেকে কর্মের নতুন সুযোগ এই ই-কর্মাস।