মেহেরপুরের ৯৩ টি ইটভাটায় নির্বিচারে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর এসব ইটভাটায় কাঠ পোড়াতে বসানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ ‘স’ মিল।
সদর উপজেলার মেহেরপুর-কাথুলি রাস্তার পাশেই এআরবিসিসহ জেলার বিভিন্ন ইটভাটায় বসানো হয়েছে অস্থায়ী ‘স’ মিল। আইন ও সরকারি বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করেই আবাদি জমির পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়কারী এসব ভাটা ও ‘স’ মিল। এসব ভাটায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি জমির উর্বর মাটি। গাছ ও জমির উর্বর মাটি উজাড়ের মাধ্যমে পরিবেশ ধ্বংসের প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেনা ।
আরো অভিযোগ রয়েছে, ইটভাটাগুলোতে এসব জ্বালানি কাঠ যাচ্ছে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগান থেকে। ইটভাটায় গাছের ছোট ছোট ডালপালা বা পাতা ব্যবহার হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মোটা মোটা গাছ করাত দিয়ে কেটে ছোট ছোট টুকরা করে ইটভাটার চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে।
মেহেরপুর-কুষ্টিয়া রাস্তার পোড়াপাড়া নামক স্থানে পাশাপাশি ৪টি ইটভাটায় বসানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ স’মিল। প্রশাসনের নাকের ডগায় রাতদিন সমানতালে ভ্রাম্যমাণ ‘স’ মিলে চলছে কাঠ ফাড়াই। এখানে মোটা মোটা কাঠের গুলি জড়ো করে চেরাই করা হচ্ছে।এসব ইটভাটা শতশত বিঘা আবাদি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ ভাটায় স’মীল বসিয়ে উজাড় করা হচ্ছে গাছপালা। অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
অবৈধ ‘স’ মীলের মালিক ছাতিয়ান গ্রামের হানিফ বলেন, আমার মোট ৩টি ‘স’ মীল রয়েছে। প্রতিটি ‘স’ মিলে ৫/৬ জন করে শ্রমিক কাজ করেছন। প্রতি শ্রমিকের মজুরী এক হাজার টাকা। তিনি বলেন, প্রতিদিন একটা ‘স’ মিলে ৪০০ মন কাঠ ফাড়াই করা হয়।
‘স’ মিলের শ্রমিক আক্তার হোসেন মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, প্রতি মন কাঠ চেরাই করেত ২২ টাকা করে নেওয়া হয়।
ইটভাটার একজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেহেরপুর প্রতিদিনিকে বলেন, ৪ লাখ ইট তৈরি করতে ভাটায় ২০ থেকে ২২ দিন সময় লাগে। এতে প্রায় ৩৫ হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হয়।
এব্যাপারে একজন ভাটার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, গাংনী-ধানখোলা রোডে পরপর ৪টি, মালশাদহ-হাড়িয়াদহ রোডে ৩ টি ইটভাটা রয়েছে। এরা সবাই কাঠ ও খড়ি পোড়ায়। প্রায় ভাটায় স’মিল বসিয়ে কাঠ ফাড়ায় করা হয়।
এআরবিসি ইট ভাটার মালিক রবিউল ইসলাম, দিপু ও জিয়ারুলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
প্রায় অর্ধশত বিঘা আবাদি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে এআরবিসি এটাভাটা। আর সেখানেই ‘স’ মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন ফাড়াই করা হচ্ছে প্রতিদিন শতশত ট্রাক গাছের গুড়ি। মেশিনে ফাড়ায় করে এসব কাঠ ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে।
তবে, ভাটা মালিকরা মেহেরপুর প্রতিদিনিকে জানান, কিছু কিছু কাঠ ভাটায় পোড়াতে হয়। এদিকে ইটভাটায় ট্রাক্টর দিয়ে মাটি টানার ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত গ্রামীণ রাস্তাগুলোর বেহাল দশা। এসব ইট ভাটার গাড়ি চলাচলের কারনে রাস্তার এমন অবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসি।
কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আতাউর রহমান বলেন, অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাদের ভাটায়ও অভিযান চলবে, এবং অবৈধ ইট ভাটার মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।