আকতারুজ্জামান, গাংনী:
মেহেরপুরে নানা কারনে দিনদিন বাড়ছে নারী শ্রমিকের সংখ্যা। কৃষি থেকে শুরু করে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে নারীদের ভুমিকা বাড়ছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাদের কর্ম ক্ষেত্র হিসেবে অধিকাংশ নারীরাই ঝুকে পড়ছেন কৃষিতে। মাটি কাটা, কচু তোলা, আলু তোলা, মরিচ তোলা ধান লাগানো ইত্যাদি কাজে নারীদের অংশ গ্রহন লক্ষ্যনীয়।
শুধু তায়ই নয় বিভিন্ন ছোটখাটো কারখানাতেও নারীদের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়া মত। এতে একদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে এ জেলার কৃষির ও শিল্পের উন্নয়ন ও অগ্রগতি , অন্যদিকে অভাব গ্রস্থ সংসারের হাল ধরছেন নারীরা। তবে একজন পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করেও চরম মজুরী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তারা। নারী শ্রমিকদের মজুরী বৈষম্য ও কর্মক্ষেত্রে নানা সমস্য থাকলেও সরকারি -বেসরকারি ভাবে বৈষম্য দুরীকরনের নেই তেমন কোন উদ্যোগ।
পেশাগত ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকরা নানা বঞ্চনা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়তই। পাচ্ছে না অধিকার, নেই নিরাপত্তা। তবুও তারা জীবিকার তাগিদে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। একজন পুুরুষ শ্রমিক সকাল ৮ টা থেকে কাজ করেন দুপুর ২ টা পর্যন্ত। তাকে বর্তমানে মজুরী দেয়া হয় ৪শ থেকে ৫শ টাকা। একই কাজে নারী শ্রমিকদের দেয়া দেড় থেকে দুই’শ টাকা। এ ব্যাবস্থার পরিবর্তন হয়নি দির্ঘদিনেও।
শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার্থে বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে শ্রম আইন প্রণয়ন করেন। শ্রম আইনের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য একটি আইন হচ্ছে ‘নারী শ্রমিকদের ৬ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য ডে-কেয়ার, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করাতে হবে মালিক পক্ষ থেকে। এই আইনের প্রয়োগ নেই।
নানা সমস্যা মেনে নিয়েই নারী শ্রমিকরা কাজ করে আসছেন। দেশের বড়বড় শহরের শিল্পকল কারখানাতে এ আইনের কিঞ্চিত সুবিধা পেলেও মফঃস্বল এলাকায় এ আইন বা নারী শ্রমিকদের বিষয়ে মালিক পক্ষ একেবারেই উদাসীন। মেহেরপুর জেলাতে নারী শ্রমিকদের মধ্যে অধিকাংশই স্বামী পরিত্যত্ত্বা বিধবা। আবার কেউ কুমারী বা কিশোরী। নানা সমস্যার কারনে স্বামী সংসারে টিকতে না পেরে স্বামীর সাথে ছাড়াছাাড়ি হয়ে গরিব পিতার সয়সারে বোঝা হচ্ছে অনেক নারী। মেহেরপুর জেলায় শিল্প কারখানা না থাকায় পিতা-মাতার অভাবের সংসারে জীবন জীবিকার তাগিদে নারীরা এখন কৃষি কাজের দিকে ঝুকছেন।
কৃষিতে নারীদের অংশ গ্রহন শ্রমিক সংকট দুর করেছে। বিভিন্ন ব্যাবসা বানিজ্যের মধ্যে পুরুষেরা নিয়োজিত থাকায় একসময় পুরুষ শ্রমিক সংকট হয়ে পড়ছেছিল। নারীদের অংশ গ্রহনে সে সংসট দুর হয়েছে। মালিকপক্ষরা সে সুযোগে নারী শ্রমিকদের ঠকাচ্ছে। দেখারও কেউ নেই,বলারও কেউ নেই।
নারী শ্রমিকরা কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে হোচট খাচ্ছেন উল্লেখ করে নারী শ্রমিক নুরী বেগম বলেন, নারীরা সব জায়গায় হয়রানি হচ্ছে। মালিক পক্ষ থেকে কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদেরকে নিয়ে যে সব উন্নয়ন মূলক কাজ করছেন তার পাশাপাশি তিনি যদি মফঃস্বল এলকায় নারী শ্রমিকদের দিকে একটু নজর দেন তাহলে কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের যে বৈষম্য, নির্যাতন এসব বন্ধ হবে
নারী শ্রমিক ছকিনা বেগম বলেন, নারীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে নারীরা সব সময় অবহেলিত। আমরা সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও ন্যায্য মুজুরি পাচ্ছিনা। আমরা চাই সরকার আমাদের পাশে দাড়িয়ে মজুরি বৈষম্য দুর করুক।
গাড়াবাড়িয়া গ্রামের নারী শ্রমিক রওশনারা জানান,নারীরা আট ঘন্টার জায়গায় বারো ঘন্টা শ্রম দিচ্ছে। তারপরে সংশ্লিষ্ঠ মালিকগন আমাদের ঠকাই।
অতিরিক্ত কোন সুযোগ সুবিধা পায় না। এসব বিষয় নিয়ে মালিকদের সাথে কথা বলতে গেলে শ্রমিকরা ভয় পায়। তাদের কাজ থেকে বাদ দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।
মেহেরপুর জেলায় নারী শ্রমিকের কোনো পরিসংখ্যান জানাতে পারেনি সরকারি বা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান। কারো কাছেই কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে এর নির্ধারিত একটি পরিসংখ্যান থাকা উচিৎ বলে মনে করছেন নারী মুক্তি নিয়ে কাজ করছেন এমন কিছু এনজিও সংস্থা।
এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাাসিমা খাতুন বলেন, আমাদের মেহেরপুর জেলা একটি কৃষি প্রধান জেলা। কৃষি ব্যাতিত এ জেলায় আর কোন কর্ম ক্ষেত্র নেই, তাই কৃষিতে নারীদের অংশ গ্রহন প্রসংশনীয়। পুুরুষের সমান শ্রম দিয়ে তারা মজুরী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এটা কারো কাম্য নয়। সরবকারি বা বেসরকারি ভাবে নারীদের নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের আরো সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিৎ।
মালিক পক্ষের মধ্যে বৈষম্য নিয়ে কথা বলা দরকার এ বিষয়ে আমাদের করনীয় অব্যাহত থাকবে।
প্রতিবছর শ্রমিক দিবস আসে। র্যালি, আলোচনা সভা পালিত হয়। কিন্ত নারী শ্রমিকদের কাঙ্খিত অধিকার অধরা থেকে যায়। নারী শ্রমিকদের দাবী পুরুষের পাশাপাশি নারীদের পারিশ্রমিক সমান করা হোক। মজুরীসহ নানা বৈষম্য দুরীকরনে সরকারিভাবে ব্যাবস্থা নেয়ার দাবী ভক্তভোগী নারী শ্রমিকদের।