মেহেরপুরে আগাম জাতের গ্রীষ্মকালীন নাসিক জাতের পেঁয়াজ চাষে সফলতা পেয়েছেন কৃষক। এবছর জেলাজুড়ে দুই হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। পেঁয়াজের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে মুলা ও পালংশাক আবাদ করে অল্প খরচে বেশি লাভ করছেন।
নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করায় ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা কম দামে ক্রতারা পেঁয়াজ কিনতে পারছেন।
কৃষকরা বলছেন ভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হলে এবং ন্যায্য দাম পেলে লাভবান হবেন তারা। আর কৃষি বিভাগ বলছেন, গ্রীষ্মকালীন আগাম জাতের পেঁযাজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। খুব শিঘ্রই নতুন পেঁয়াজে দাম সাশ্রয় হবে। মেহেরপুর একটি সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুরের মাঠ জুড়ে গ্রীষ্মকালীন নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। এযেন সবুজের সমারোহ। গেল বছর পেঁয়াজের ভালদাম পেয়ে এবছরে আগাম জাতের গ্রীষ্মকালিন পেঁয়াজ আবাদ করেন অধিকাংশ কৃষক। সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে পেঁয়াজ চারা রোপন করে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে উঠতে শুরু করেছে। প্রতিবিঘা জমিতে ৬০ থেকে ৬৫ মন পেঁয়াজ হবে বলে আশা কৃষকদের। বর্তমান বাজারমুল্য পেলে খরচের তিনগুণ টাকা লাভ হবে এমন প্রত্যাশা কৃষকদের।
জেলা কৃষি অফিসের ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা আশরাফুন্নেসা জানান, মেহেরপুর জেলার তিনটি উপজেলা বিভিন্ন মাঠে এবছর নাসিক ৫৩ জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে। উক্ত জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হবে প্রায় ৪৮ হাজার ২০০ টন । এক কাঠা জমিতে সাড়ে তিন থেকে ৪ মন পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ার আশা চাষিদের। যা জেলার চাহিদার প্রায় তিনগুন। জেলার মানুষের চাহিদা পুরুন করে বাকি পেঁয়াজ যাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বৃহত্তম জেলায়।
কৃষকদের পেঁয়াজের চাষে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা করছে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন।
গাংনীর জুগিন্দা গ্রামের পেঁয়াজ চাষি সাহারুল ইসলাম, ফয়েজ উদদীন, আব্দুল কাদের বলেন, আমরা এর আগে কখনও গ্রীষ্মকালীন নাসিক- ৫৩ জাতের পেঁয়াজের আবাদ করিনি। স্থানীয় পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির কৃষি অফিসারের পরামর্শ পেয়ে এবছর গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ করতে বিনামূল্যে সার,বীজ,জমি প্রস্ততকরনের জন্য নগদ অর্থ প্রদান করেছিলেন। পেঁয়াজ অনেক ভাল হয়েছে। ফলনও ভাল হচ্ছে। বাজারে নতুন পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জমি থেকে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকা কেজি।
আমাদের জেলায় কমবেশি বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়। গেলবছর দুএকজন কৃষক গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ করে লাভবান হয়। এবছর পেঁয়াজের আবাদে ঝুকেছেন অনেক কৃষক। একই সাথে পেঁয়াজের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে মুলা ও পালং শাক আবাদ করেছেন চাষিরা।
মুজিবনগর গ্রামের কৃষক আক্কাস আলি ও মুক্তার মুনসি বলেন, এক বিঘা জমিতে দুই কেজি পেঁয়াজের বীজ বপন করতে হয়। প্রতি কেজি পেঁয়াজের বীজের দাম ২ হাজার টাকা। আমাদের পেঁয়াজের বীজ,সারসহ বিভিন্ন উপকরণ বিনামূল্যে প্রদান করে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পরিচালিত পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি। পেঁয়াজের সাথে সাথি ফসল হিসেবে মুলা ও পালংশাকের বীজ বপন করেছিলাম। দুই সপ্তাহ পর মুলা ও পালংশাক বিক্রি করে ভাল টাকা আয় হয়েছে।
সদর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের কৃষক আব্দুল আলীম বলেন,গেল বছর দশ কাঠা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। এবছর দেড় বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ করেছি। একই জমিতে লালশাকের বীজ বুনে ছিলাম। লালশাক আগে বিক্রি করেছি। এখন পেঁয়াজ বিক্রি করছি। দাম ভাল পাচ্ছি। বিক্রি শেষে খরচের দেড়গুণ টাকা লাভের আশা আছে।
পিএসকেএস এর কৃষি কর্মকর্তা জুয়েল বিশ্নাস বলেন, সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কৃষি খাতের আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পিকেএসএফ এর অর্থায়নে অনেক কৃষকদের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করতে প্রদর্শনী দেয়া হয়। পেঁয়াজের আবাদ অনেক ভাল হয়েছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: ইমরান হোসেন বলেন, মেহেরপুর জেলার মাটিতে সব ধরনের আবাদ হয়। জেলার আবহাওয়া সব আবাদের উপযোগী। পেঁয়াজের আবাদের জন্য জেলার খ্যাতি রয়েছে। গ্রীষ্মকালীন নাসিক- ৫৩ জাতের পেঁয়াজ এবছে অনেক ভাল হয়েছে। বাজার নতুন এই পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় পেঁয়াজের দাম এখন ক্রেতাদের নাগালে। আমরা সব কৃষকদের সহযোগীতা অব্যাহত রেখেছি, পাশাপাশি স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা পিএসকেএস কৃষকদের চাষাবাদে নানা ধরনের সহযোগীতা করে কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ করছে।