এম এফ রুপক/ ফয়সাল আহমেদ:
হাসপাতাল আছে, আছে যন্ত্রপাতি, ঔষধ সরবারহ হচ্ছে নিয়মিত, আছে চিকিৎসক, আছে নার্স-আয়াসহ কর্মকর্তা কর্মচারী। শুধু নেই কাক্সিক্ষত চিকিৎসা সেবা। জেলা শহর থেকে শুরু করে নিভৃত পল্লী পর্যন্ত সবখানেই অভিন্ন অবস্থা। চিকিৎসকের বদলে নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়াসহ দালালরা নানা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। হাসপাতালে প্রশাসনিক বিভাগ তৎপর থাকলেও থামানো যাচ্ছে না তাদের। সরকারি স্বাস্থ ব্যবস্থার অবহেলার সুযোগে প্রাইভেট ক্লিনিক ও চিকিৎসকের অযথা টেস্ট করানোর প্রবণতাকে পুজি করে এ জেলার অধিবাসিদের প্রতিদিনই চিকিৎসার নামে গলা কাটা হচ্ছে।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের জন্য আছে আর্কষণীয় ও লোভনীয় কমিশন। সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করাতে পারলেই শতকরা ৪০ ভাগ কমিশন যায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বা দালালদের পকেটে।
তেমনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার নামে রোগী পাঠানোর বিনিময়ে পেয়ে থাকেন একই কমিশন। এ কমিশন বাণিজ্যের কারণে চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে বহুগুন। “যত টেস্ট তত কমিশন” এ নীতিতেই চলছে চিকিৎসা বাণিজ্য। কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হবে সেটাও বলে দেন চিকিৎসক। সরকারি হাসপাতালের একশ্রেণীর চিকিৎসকের সহায়তায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের যথেষ্ট টেস্ট-বাণিজ্য চলছে বছরের পর বছর। ডায়াগনস্টিক প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিটিস্ক্যান ৪ হাজার টাকা, এমআরআই ৪/৫ হাজার টাকা, প্রায় ২ শত ধরনের রক্ত পরীক্ষা ২শ’ থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি পরীক্ষা ৪/৮ হাজার টাকা, এফএনএসি (ফাইন নিডল এসপাইরেশন সাইটোলজি) ১ হাজার টাকা, হিস্টো ৬শ’/ ১ হাজার টাকা। এছাড়ও ইকো, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ আছে অনেক জটিল পরীক্ষা। শুধু কমিশনের আশায় প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে রোগীদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে টেস্টের লিস্ট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক জানান, অনেক দেখা যায় কোন হার্টের রোগীর ইসিজি করলেই যথেষ্ট, কিন্তু তার সাথে বা প্রথম বারেই ইকো করার জন্য প্রেসক্রাইব করেন চিকিৎসক। এক্ষেত্রে এক পরীক্ষায় একজন চিকিৎক ৮শ টাকা কমিশন পাবে।
গত বুধবার সকালে চিকিৎসা নিতে আসা ইয়াজ্জদীন আলী (৬৫) জানান, হাটুতে ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলাম। ছোট কাগজে দুইটি এক্সে, একটি রক্ত পরীক্ষা ও ডায়বেটিস পরীক্ষা দিয়েছে। আমার কাছে অতো টাকা নেই বাপু। সামনের দোকান থেকে কিছু ব্যথার ঔষধ নিয়ে বাড়ি যাবো।
এছাড়াও হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টিভদের অত্যাচারতো আছেই। নিদিষ্ট ব্যান্ডের ঔষধ প্রেসক্রাইব করার জন্য নিয়মিত উপঢৌকন দিয়ে থাকেন তারা। রোগীর চিকিৎসকের রুম থেকে বেরোনোর সাথে সাথে হুমড়ী খেয়ে পড়ে নিজেদের কোম্পনীর ঔষধ প্রেসক্রাইব করেছে কিনা দেখার জন্য। আবার তথাকথিত ডাক্তার চেম্বারের নিজস্ব ফার্মেসি থেকেই রোগীদের বেশি মূল্যে ঔষধ কিনতে বাধ্য করা হয়।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মখলেছুর রহমান জানান, হাসপাতালকে দালাল মুক্ত করার জন্য কতৃপক্ষ কঠর ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা হাসপাতালের নিরাপত্তা ও দালাল মুক্ত করার জন্য পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে হাসপাতালে রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসেবা দেওয়া হচ্ছে।
রোগীদের সাথে নার্স ওয়ার্ড বয়ের অর্থ বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা এখানে বিনা বেতনে চাকরি করে তাদেরকে আমরা নিজস্ব ফান্ড থেকে কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। সেই সাথে অফিস চলাকালীন সময়ের বাইরে ডাক্তারদের তো অন্য জায়গায় রোগী দেখার সুযোগ দিয়েছে সরকার। সে ক্ষেত্রে কোন বাঁধা নেই।