মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের কনসালটেন্ট সোনিয়া আহমেদের দায়িত্ব অবহেলায় প্রসুতির গর্ভে শিশু মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ সময় উত্তেজিত রোগীর স্বজনদের সাথে চিকিৎসক ও নার্সদের বাকবিতণ্ডা, হাতাহাতি এবং মৃত শিশুর পিতা রনিকে হাসপাতালের একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগও উঠেছে।
এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) মোখলেছুর রহমান পলাশকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছে । তদন্ত কমিটিকে ২ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। মৃত শিশুটির পিতার বাড়ি মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামে।
রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে জানান, গত বৃহস্পতিবার (০১ জুন) সকাল ৬টার দিকে রিতা খাতুন ওরফে মিতুকে সন্তান প্রসব করানোর জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথম দিকে রোগীর অবস্থা ভাল থাকলেও পরবর্তীতে শিশুটির হার্টবিট পাওয়া যায় না। দুই দিন ধরে রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও গাইনি কনসালটেন্ট ডা. সোনিয়া আহমেদ একবারও রোগী দেখতে আসেননি। শুক্রবার রাতে অবস্থা খারাপ হওয়ায় রোগীর স্বজনরা রোগীকে হাসপাতালের পাশে অবস্থিত এ্যাপোলো নার্সিং হোম নামের একটি ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রোপাচার করান এবং শিশুটি মৃত ভূমিষ্ট হয়। এরপরপরই রোগীর স্বামী রনিসহ স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে হাসপাতালে ছুটে যান।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এ ঘটনার সময় আমরা ওয়ার্ডেই ছিলাম। শিশুটির পিতা ওয়ার্ডে এসে জানতে চেয়েছিল কি ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের স্টাফরা কেউ কিছু না বলাতে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ডাক্তার ও নার্সরা তাকে ঘরে আটকে রেখে মারধর শুরু করে। মারধর ও চিকিৎসা অবহেলার বিষয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক মনজুরুল হাসান বলেন, ‘রোগীর কোন চিকিৎসার গাফিলতি হয়নি। যারা অভিযোগ করছে তাদের কোন প্রকার মারধরও করা হয়নি।’
কর্তব্যরত নার্স শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমাদের ম্যাডামের অনুমতি আছে বাচ্চার হার্ট বিট না পেলে আল্ট্রাসনোগ্রাফী করাতে হবে। আল্ট্রাসনোগ্রাফী রিপোর্ট যখন আমরা পাবো তখন ইমারজেন্সি ডাক্তারকে জানাবো।’ বাচ্চা মারা গেলে দায়ভার কে নেবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাচ্চা মারা গেলে কারো কিছু করার নেই।’
মেহেরপুর সদর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালে জরুরী বিভাগে সমস্যা হয়েছে জানতে পেরে আমাদের টিম সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।’
তবে অভিযুক্ত গাইনি কনসালটেন্ট সোনিয়া আহমেদ বলেন, চিকিৎসায় কোন অবহেলা করা হয়নি। বৃহস্পতিবারে আমার আদালতে মামলার দিন থাকায় হাসপাতালে ডিউটি করতে পারিনি। বাচ্চা সম্পূর্ণ স্স্থু ছিলো। কিন্তু রোগীর হাই রিস্ক ছিলো। যে কারণে রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মৌখিক রেফার্ড করা ছিলো। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাউকে জানিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বলা লাগে না। আমাদের রেজ্টিার খাতায় লেখা থাকে।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক জমির মো. হাসিবুস সাত্তার বলেন, ‘তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হাসপাতালের আরএমও কে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার গাইনি কনসালটেন্ট আদালতে গিয়েছেন বলে ছুটি নিয়েছেন বললেও তিনি হাসপাতাল থেকে কোন ছুটি নেননি কিংবা কাউকে জানাননি।