মেহেরপুর ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে জমির মালিকরা। ভুমি অধিগ্রহণ শাখা জমির ন্যায্য দাম দিচ্ছেনা বলে জমি মালিকদের দাবি। সরকারি ভবন নির্মানে জমি অধিগ্রহণে অনেক জমি মালিককে ভূমিহীনে পরিণত করা হচ্ছে। অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছেনা ২০১৭ সালের ভূমি অধিগ্রহণ আইন। জমি অধিগ্রহণ আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৪ ধারায় উল্লেখ আছে জেলা প্রশাসক যৌথ তালিকা প্রস্তুত করে শ্রেনী পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এই আইনে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে কম মূল্যের শ্রেণি দেখিয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। জমির মুল্য নিধারণের সময় মানা হচ্ছেনা কোন কালাকানুন। বাজার মুল্যের চার ভাগের এক ভাগও দেওয়া হচ্ছেনা জমি মালিকদের। ফলে জমির মালিকরা বিভাগীয় কমিশনার খুলনা বিভাগীয় অফিসে আপিল করছে।
মেহেরপুর জেলা শহরের ভূমি অফিস পাড়ার আবদুর রজ্জাক বলেন- আমাদের চাষযোগ্য জমি মাত্র এক একর। পাসপোর্ট অফিসের জন্য ২৫ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ আঞ্চলিক কেন্দ্র নির্মানে বাকি জমিটুকু অধিগ্রহনে চিঠি দিয়েছে। খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করেছি চাষযোগ্য জমিটুকু অধিগ্রহণ করে আমাকে ভূমিহীন না করার জন্য। তিনি বলেন আমাদের চাষাবাদের শেষ জমিটুকু অধিগ্রহণ করা হলে আমরা ভূমিহীন হয়ে যাবো। মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তার আবেদন নিবেদন উপেক্সা করা হচ্ছে।
২২ জেলায় ১টি করে পলেটেকনিকাল ইনস্টিটিউট নির্মান হবার কথা ছিলো। ২১ জেলায় সম্পুর্ন হলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় বন্ধ হয়ে গেছে মেহেরপুর পলেটেকনিকাল ইনস্টিটিউট নির্মান। বাংলাদেশের সব উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মান হলেও, ভুমি অধিগ্রহন জটিলতায় মুজিবনগর মডেল মসজিদের কাজ এখোনো আলোর মুখ দেখিনি। মেহেরপুরে রেললাইন, মুজিবনগর সৃতি কমপ্লেক্স, মেহেরপুর চেকপোস্ট, মুজিবনগর বিশ^বিদ্যালয়সহ অনেক উন্নয়নমুলক কাজ মন্ত্রীসভায় পাশ হয়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠান নির্মানে মেহেরপুরে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে। একই সাথে শুরু হয়েছে জমি মালিকদের মধ্যে সঠিক দাম না পাওয়ার আতংক। ইতোমধ্যে পাসপোর্ট অফিস, ছহিউদ্দনি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট নির্মানে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা শহরের উপকন্ঠে বামন পাড়া মৌজার জমির মালিক আশরাফুল হক বলেন, আমার একবিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আমার পাশের জমি বিক্রয় হচ্ছে প্রায় ১২ লাখ টাকা (শতাংশ) দামে। সরকার আমার জমির মুল্য নির্ধারণ করেছে ৫৭ হাজার টাকা(শতাংশ)। সরকারি নির্ধারিত সর্বনিম্ম মূল্যর চেয়েও কমকরে আমার জমির মূল্য নিধারন করা হয়েছে। এমনকি আমাকে আপত্তি দাখিলের জন্য মাত্র ২৪ ঘন্টা সময় দেওয়া হয়েছে।
বন্দর গ্রামের মোঃ গাউছুল জানান তাদের তিন শরিকের ১২কাঠা জমি সরকার অধিগ্রহন করেছে । কিন্তু কোন টাকা পয়সা দেয়নি। সেই জমির উপর লিচু গাছ ছিলো সেগুলোও দেয়া হয়নি।
মুজিবনগরের তোয়াক্কন নেছা বলেন আমার একমাত্র বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। আমি আমার পরিবার এ নিয়ে মানববন্ধন করেছি ও প্রশাসনের কাছে লিখিতঅভিযোগ করেও আমার প্রতি সুবিচার করা হয়নি।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মো: শামীম হাসান বলেন, আমি এই জেলাতে মাত্র দুই সপ্তাহ আগে যোগদান করেছি। ২০১৭ সালের ভূমি অধিগ্রহণ আইন মেনেই অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। তারপরেও কোনো ব্যক্তি সঠিক মুল্য না পাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্থ হলে আমার কাছে দরখাস্ত দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।