এম এফ রুপক / পাভেল মাহমুদ
মেহেরপুর অঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে টাকা ছাড়া সময় মত পাসপোর্ট মিলছে না। সরকারি নির্ধারিত টাকায় পাসপোর্ট করতে গেলে হয়রানি হতে হচ্ছে গ্রাহকদের। বিভিন্ন ধরণের ভুল আছে বলে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে পাসপোর্ট অফিসে নিয়োজিতরা এমন অভিযোগ করেছে বেশ কয়েকজন গ্রাহক।
আবার অতিরিক্ত টাকা দিলেই কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই হয়ে যাচ্ছে পাসপোর্ট। পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তায় থাকা আনসার, পুলিশ সদস্য ও নিয়োজিত কর্মচারীরাই নিচ্ছে এই অতিরিক্ত টাকা এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। মাসের পর মাস ধরে চলা কর্মচারীদের দুর্নীতি আর সিন্ডিকেটের আধিপত্য এখন যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সৃষ্ট আইন ও উর্দ্ধতন কর্মকর্তার মদদ এবং ইচ্ছাকৃত গ্রাহক হয়রানি যেন নিত্য দিনের কাজ।
এ ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে নতুন করে কেউ পাসপোর্টের জন্য অফিসে গেলে সেখানকার আনসার, পুলিশসহ ভিতরের অনেকেই সেই গ্রাহককে নিজের আয়ত্বে নেওয়ার চেষ্টা করে। কারণ হিসেবে জানা যায়, তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট করে দেওয়া হবে অর্থের বিনিময়ে এমন প্রলোভন দেওয়া হয় গ্রাহকদের। টাকা না দিলে নির্ধারিত তারিখে তো দূরের কথা তার ২-৩ মাসের মধ্যেও আসেনা পাসপোর্ট। প্রিন্টিংএ আছে, করোনার কারণে দেরি হচ্ছে, আগে নিতে চাইলে ঢাকায় গিয়ে নিয়ে আসেন এমন কথা বলে হয়রানি করা হচ্ছে গ্রাহকদের। এমন হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়েই পাসপোর্ট করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাসপোর্ট করতে আসা এক ভুক্তভোগী জানান, সাধারণভাবে পাসপোর্ট জমা দিতে আসলে তারা বিভিন্ন অজুহাতে বিভিন্ন ভুল ধরে বের করে দেয়। কিন্তু অফিসের লোকজনের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দিলে কোনো সমস্যা হয় না, এতো ফর্মালিটি মেইন্টেন করতে হয় না। এ রকম জানার পর হয়রানীর ভয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে এক দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফরম জমা দিয়েছি।
রাধাকান্তপুরের ইব্রাহিম জানান, নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে বাধ্য হয়ে ঢাকা থেকে নিতে হয়েছে। মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বার বার ফেরত আসতে হয়েছে। এক সময় নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্য আমার সাথে দেড় হাজার টাকা দবি করে, দ্রুত পাসপোর্ট এনে দেবে বলে।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে পাসপোর্ট গ্রাহকদের হাতে দেওয়ার সময় বকশিসের নামে নেওয়া হয় কয়েক’শ টাকা।
মেহেরপুর শহরের রাফিউল ইসলাম জানান, গত তিন বছর ধরে আমার পাসপোর্ট পাচ্ছিনা। অফিসে গিয়ে আমার পাসপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে সবাই বিভিন্ন বাহানা শুরু করে। কখনো বলে কুষ্টিয়া যেতে হবে আবার কখনো বলে ঢাকায় থেকে নিয়ে আসেন। কিডনির সমস্যায় ভুগছি দীর্ঘদিন। ভারতে যাবো চিকিৎসা করতে। কিন্তু পাসপোর্টের অভাবে যেতে পারছিনা।
গ্রাহকদের নানা ধরণের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল রবিবার ৩১ জানুয়ারি পাসপোর্ট অফিসে পরিচয় গোপন করে গেলে কথা হয় পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত পুলিশ সদস্য রাকিবের সাথে। নতুন পাসপোর্টের আবেদন করতে হবে জানাতেই তিনি সুযোগটি লুফে নিতে এই প্রতিবেদককে অফিসের পাশে নিয়ে নতুন পাসপোর্ট ও নবায়ন করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বলেন।
তিনি বলেন, নতুন ৫ বছর মেয়াদী এমআরপি পাসপোর্ট করতে অফিস খরচসহ মোট খরচ হবে ৮ হাজার ৫০০ টাকা। সময় লাগবে ২ মাস। ৫ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট নবায়ন করতে অফিস খরচসহ লাগবে ৯ হাজার টাকা। সময় লাগবে ১ মাস। অথচ ৫ বছর মেয়াদী এমআরপি পাসপোর্টে সরকারি ফি ভ্যাটসহ নির্ধারণ করা আছে ৩ হাজার ৪৫০ টাকা এবং ই-পাসপোর্টে সরকারি ফি ভ্যাটসহ নির্ধারণ করা আছে ৪ হাজার ২৫ টাকা।
এ বিষয়ে মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক শাহিনুর রহমান জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।