করোনা ভাইরাস মহামারির শেষ কবে বিশ্ব জুড়ে এ প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। এর মধ্যেই দেশে সময় ঘনিয়ে আসছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের।
আইন অনুযায়ী আগামী বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের আগে ইউপি নির্বাচন শুরু করতে হবে, আর শেষ করতে হবে জুনের আগেই। বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। ২০১৬ সালের ২২ মার্চ, শুরু হয়ে কয়েক ধাপে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হয় ঐ বছরের ৪ জুন।
আইন অনুযায়ী কোনো ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এই হিসাব অনুযায়ী, আগামী বছরের মার্চে যেসব ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ বছর মেয়াদ হবে, সেসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে, এ বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে। আর যেসব ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ আগামী বছরের জুনের প্রথম দিকেই শেষ হবে, সেসব ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ করতে হবে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে।
ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ ও নির্বাচন শুরুর সম্ভাব্য হিসাব করলে ভোটের এখনো ২ থেকে ১০ মাস বাকি। তবে মেহেরপুরের নবগঠিত দুই ইউনিয়ন মিলে মোট বিশটি ইউনিয়নে এখন থেকেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও সদস্য (মেম্বার) প্রার্থীরা। এই তোড়জোড়ের ব্যাপকতা দেখা যায় এবারের কোরবানির ঈদেও। নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ একাধিক গরু জবাই করে বিলি করেছেন এলাকার ভোটারদের মধ্যে। নানা সমীকরণে ভোটের মাঠে প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকে এমন ভোটারদের বাড়িতে কেউ কেউ গরু কিনেও পাঠিয়েছেন। এখানেই থেমে থাকছেন না সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তাদের তৎপরতা দেখলে মনে হতে পারে, আর কদিন পরেই যেন ভোট। ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে বাড়ি, পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজার ও রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো এখনই প্রায় সরগরম। কোথাও কোথাও শুরু হয়ে গেছে নগদ অর্থের ছড়াছড়ি।
বর্তমান ক্ষমতাসিন দল আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহনের ঘোষণা দিয়েছে। এবারের স্থানীয় নির্বাচনে ইতোমধ্যে দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপিও অংশ গ্রহন করার ঘোষণা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে এবারও দলীয় প্রতিকে নির্বাচন হতে পারে। সে লক্ষ্যে কেউ কেউ উভয় দলের উর্দ্ধতন নেতাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করারও চেষ্টা করছেন। দলীয় সমর্থন ও মনোনয়ন পাওয়ার জন্য অনেকেই এখন থেকেই লবিং শুরু করেছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। অন্য দলের এই তৎপরতা খুব একটা বেশি লক্ষ্য করা না গেলে ক্ষমতাসিন আওয়ামী লীগের একেকটি আসনে একাধিক প্রার্থীর তৎপরতা বেশ চোখে পড়ার মতো।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের বর্তামান চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী থাকবে। জন সমর্থন পাওয়ার জন্য দোড় ঝাপ করছে অনেকেই। তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্থানীয় নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকেই জনপ্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেবে বলে আমি মনে করি।
তবে এই স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মেহেরপুরে বিএনপি হতাশা প্রকাশ করেছে। নির্বাচন এক তরফা হবে বলেও মন্তব্য করে কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি শহিদুল আলম বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে নির্বাচন করার ইচ্ছে খুব একটা নেই। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলীয় প্রতিকে ক্ষমতাসিন দলের বিপক্ষে নির্বাচন করা কঠিন।
স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক বলেন, স্থানীয় নির্বাচনের আমেজ ইতোমধ্যে সব জায়গাতেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে যার মত প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত নির্বাচনে দলিয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্বনয়ে গঠিত কমিটি কয়েকজন প্রার্থীদের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। কেন্দ্র থেকে যাচাই বাছাই করে যোগ্য প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিল। তবে আসন্ন নির্বাচনে আমরা কেন্দ্র থেকে এখনো কোন নির্দেশনা পাইনি।
ক্ষমতাসিন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার জন্য একাধিক ব্যক্তি দোড়ঝাপ করছে, সে তুলনায় বিএনপি’র কোন সাড়া নেই, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক খালেক বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ সংগঠন এবং সুসংগঠিত দল। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দেশ। এই দলের একাধিক প্রার্থী থাকা স্বাভাবিক। তবে এদের মধ্যে থেকে যোগ্য ব্যক্তির হাতেই স্থানীয় নির্বাচনের নৌকা প্রতিক তুলে দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
মেহেরপুর জেলা বিএনপি’র সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন বলেন, বর্তমান সরকারের অধিনে নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠে দাঁড়াতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। বিগত নির্বাচন গুলোতে সচ্ছতা নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। এখন দেখা যাক কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত কি আসে। সে অনুযায়ী স্থানীয় নির্বাচনে আমরা মাঠে থাকবো।
স্থানীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুল হালিম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিটি নির্বাচন সুষ্ঠ হয়েছে। সব দলের অংশগ্রহনে এবারও স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে এখনো নির্দেশনা আসেনি। দবে যোগ্য প্রার্থীদের জন্যই সুপারিশ করা হবে।