পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে মেহেরপুর জেলায় মোট ৯৩ টি ইটভাটা আছে। এর মধ্যে একটি বাদে সবগুলো ইটভাটা অবৈধ। বছরের পর বছর এটা নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। গত ১৭ মে, ২০২৩ খ্রি তারিখ দৈনিক কালের কন্ঠ ১১ মে মেহেরপুর প্রতিদিন পত্রিকায় “ইট ভাটায় ভ্রাম্যমাণ করাতকল, গাছ উজার” শিরোনামে একটি সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদটি মেহেরপুর পরিবেশ সংক্রান্ত স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট এস, এম, শরিয়ত উল্লাহ্ এর নজরে এলে তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে আদেশ প্রদান করেন।
আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, প্রকাশিত সংবাদ দৃষ্টে ৯৩ টির মধ্যে একটি ব্যতীত সকল ইটভাটা অবৈধভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং আবাসিক এলাকা ও আবাদী কৃষি জমির পাশে ইট ভাটা স্থাপন, কৃষি জমির উর্বর মাটি দিয়ে ইট প্রস্তুত, এমনকি প্রকাশ্যে ইট ভাটার মধ্যে নিষিদ্ধ করাত কল স্থাপন করে বেআইনিভাবে কয়লার পরিবর্তে গাছ-কাঠা দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে মর্মে দেখা যায়।
এমতাবস্থায়, উক্ত সংবাদটি সঠিক হয়ে থাকলে তা পরিবেশ সংরক্ষন আইন, ১৯৯৫, ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রন) আইন, ১৯৮৯, সহ পরিবেশ সংরক্ষন বিধিমালা ও ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রন) বিধিমালার সুস্পষ্ট লংঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আদালত তার আদশে আরও উল্লেখ করেন যে, মেহেরপুর একটি কৃষি প্রধান অঞ্চল। এই জেলায় প্রচুর পরিমান শাক-সব্জি, ফল-মূল এবং ফসল উৎপাদিত হয়। আবাসিক এবং ফসলী জমির পাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইট ভাটার কারনে শুধু যে সাধারন মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে তা নয় বরং কৃষি ও পরিবেশের ব্যপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত এবিষয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে লেখালেখি এবং আলোচনা সমালোচনা হলেও প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তর কোন দৃশ্যমান ও কার্যকর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেনি মর্মে আদালতের গোচরীভূত হয়েছে।
এমনকি আদালত হতে পরিবেশ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়াকে ইতিপূর্বে অবৈধ এবং পরিবেশের দূষণকারী ইটভাটাসমূহের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ প্রদান সত্বেও অদ্যাবধি কোন ইটভাটা বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পরিবেশ আদালতে কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। আদালতের আদেশের পর কয়েকটি ভাটায় অভিযান পরিচালনা করে সামান্য জরিমানার করা হলেও কঠোর ও কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। আদালতের আদেশের পর কয়েকটি ভাটায় অভিযান পরিচালনা করে সামান্য জরিমানার করা হলেও কঠোর ও কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি মর্মে দেখা যায়। ফলে জরিমানা পরিশোধ করে পুনরায় সেসকল ভাটা আইনের বিধান লংঘন করে পরিবেশ দূষণ এবং মানুষের জীবন ও সম্পদের জন্য ক্ষতিকর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
অথচ পরিবেশ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়ার উপপরিচালকের স্বীকৃতমতেই মেহেরপুরের একটি ব্যতীত সকল ইট ভাটা অবৈধ। মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট এবং সরকার পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহন করেছে। পরিবেশ সংরক্ষনের জন্য সরকার পরিবেশ সংরক্ষন আইন, ১৯৯৫ সহ অনেকগুলো বিশেষ আইন ও বিধি প্রনয়ন করেছে। উক্ত আইনের ধারা ৩ এর বিধান অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তর গঠন করা হয়েছে।
অধিদপ্তরকে পরিবেশ সংরক্ষন, পরিবেশগত মানোন্নয়ন এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রন ও প্রশমনের গুরুত্বপুরন দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। বৃহত্তর জেলা পর্যায়ে অধিদপ্তরের কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পরিবেশ সংক্রান্ত আইন ও বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের ক্ষমতা অধিদপ্তরকে প্রদান করা হয়েছে।
সরকার উক্ত আইন ও বিধি সমূহ লংঘনের ক্ষেত্রে কঠোর সাজার বিধান এবং দ্রুত বিচারের নিমিত্ত পরিবেশ আদালত আইন, ২০০০ প্রনয়ন করেছে। উক্ত আইন দ্বারা পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধ দ্রুত বিচারের জন্য পরিবেশ আদালত এবং স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অথচ বিগত ২৩ বছরে মেহেরপুরের পরিবেশ আদালত ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে কোন মামলা দায়ের করা হয়নি মর্মে আদালত তার পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন।
ইতিপূর্বে আদালতের নির্দেশ এবং স্বীকৃতমতে প্রায় শতভাগ অবৈধ ইটভাটা থাকা সত্বেও কোন ইটভাটার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের না করার ঘটনাটি বেশ বিস্ময়কর ও আশ্চর্যজনক। যৌক্তিক কোন কারণ ছাড়া জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সব জেনেশুনেও অবৈধ প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করার ঘটনাটি স্পস্টতই দায়িত্ব অবহেলা বলে আদালত অভিমত প্রদান করেন।
বিধায় জনস্বার্থে The Code of Criminal Procedure, 1898 এর ধারা ১৯০ (১) (গ) অনুযায়ী পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি বিবেচনায় নিয়ে উপপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়াকে এ বিষয়ে তদন্ত ও উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক আগামী ১ জুন আদালতে হাজির হয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করে আদালত।