বাড়ি থেকে শুরু করে চাষাবাদে পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। পৌরবাসী লাইনে পানি পাচ্ছেনা, মাঠে সেচযন্ত্রে পানি উঠছেনা। ছাদবাগানে তাপে গাছ মারা যাচ্ছে। ওপরবৃষ্টি ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব নয় এমন অভিমত সব শ্রেণির মানুষেরই। এক ঠিলি পানি তুলতে নলকূপ চাপতে চাপতে হয়রান হয়ে পড়ছে মানুষ। বাড়ির নলকূপ নতুন করে গভির করে বসিয়েও পানি পাওয়া যাচ্ছেনা।
গ্রীষ্মের শুরু থেকেই বিভিন্ন বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নলকূপে পানি না উঠায় হাজার হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা সুপেয় পানির সংকটে পড়েছেন। পাশাপাশি চলতি সেচনির্ভর আবাদে সেচ যন্ত্রে পানি কম উঠায় জমি সেচ দিতে দীর্ঘক্ষণ সময় লাগছে এবং সেচ খরচও বাড়ছে। কৃষকেরা সংকট মোকাবেলায় বাধ্য হয়ে রাত জেগে সেচযন্ত্র চালিয়ে পানি দিয়ে ফসল রক্ষার চেষ্টা করছেন।
মেহেরপুর পৌর পানিশাখা সুত্রে জানাগেছে- পৌর এলাকায় ৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। পানির চাহিদা ১২ হাজার ঘনমিটার। বর্তমানে পানি সরবরাহ হচ্ছে ৩৫০০ ঘণমিটার। যা ১৫শ গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে পারে। ফলে রেশনিং পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ করতে হচ্ছে। মাইকিং করে পৌরবাসীর কাছে সাময়িক সমস্যার কারণে দুঃখ প্রকাশও করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এদিকে পানির দুরাবস্থার কারণে জারভর্তি পানির দামও বাড়িয়ে দিয়েছে পানি ব্যবসায়ীরা। মেহেরপুর শহরে ২০ লিটারের ড্রিংকিং ওয়াটারের একজার পানি এতদিন বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকায়। পানি সংকটে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে দাবিতে বর্তমানে প্রতিজার পানির দাম নেয়া হচ্ছে ৩৫ টাকা।
কৃষি নির্ভর মেহেরপুর জেলায় ৫৮ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে সেচনির্ভর চাষাবাদ হচ্ছে। চাষাবাদে ৪৬ হাজার সেচ পাম্প রয়েছে। সেচযন্ত্রে যে পরিমান পানি উঠছে তাতে চাষাবাদ করা কঠিন বলে কৃষকরা জানান। একবিঘা জমিতে যেখানে তিনঘন্টায় সেচ দেয়া যায়। সেখানে ছয় থেকে সাত ঘন্টা সময়ে সেচ দিতে হচ্ছে। সেচ দিয়েও জমিতে পানি ধরে রাখা যাচ্ছেনা। পরদিন ফের সেচ দিতে হচ্ছে। কারণ তাপদাহে আবাদি জমি শুকিয়ে যাচ্ছে।
মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ এলাকায় অগভীর নলকূপে পানি উঠা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এ উপজেলার প্রতি ১০টি নলকুপের মধ্যে ৫টিই অকেজো হয়েছে। খাবার পানি, গোসলের ও গৃহস্থলীর কাজের জন্য পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলার পুকুর ও জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে।
সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের রমজান আলী বলেন, পানির সংকটে আমরা কোন কাজই ঠিকমত করতে পারছি না। খাওয়ার পানি সংকটে সেই সাথে অসহনীয় তাপদাহে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। একই গ্রামের সফুরা খাতুন বলেন, টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে আবাদি জমিতে সেচের গভির নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সুর মিলিয়ে শেফালি খাতুন বলেন, পরের বাড়ি ক‘বারই বা যাওয়া যায়। বার বার পানি আনতে যাওয়াতে কথাও শুনতে হচ্ছে।
একই ইউনিয়নের শালিকা গ্রামের মজিদ বলেন, ৭ ফুট নিচে মাটি খুড়ে পাম্প বসিয়েছি। এতে মোটমুটি পানি উঠছে। তবে দু-একদিন এমন তাপদাহ থাকলে আর হয়তো পানি পাবো না।
মেহেরপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দীন জানান, পরিবেশগত নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত পানির স্তর গড়ে ৪০ থেকে ৭০ ফুট গভীরে। বেশিরভাগ এলাকায় এ স্তরে পৌঁছালেই পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ এলাকায় অস্বাভাবিকভাবে নীচে নেমে যাওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাত হলেই পানির স্তর স্বাভাবিক হবে।