সারাদেশের ন্যায় মেহেরপুরেও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে গতকাল সোমবার দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দিয়ে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে।
মেহেরপুর ভৈরব নদে ‘দুর্গা মা কি, জয়। মহামায়া কি, জয়।’ একের পর এক এমন জয়ধ্বনি, ঢাক-ঢোল, কাঁসর ও ঘণ্টা বাজিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
সন্ধ্যা থেকে মেহেরপুর শহরের শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, শ্রী শ্রী হরি ভক্তি প্রদয়িনী পূজা মন্দির, নায়েব বাড়ির রাধামাধব মন্দির, মালোপাড়া ও হালদারপাড়া মন্দির, বামনপাড়া মন্দির গুলো থেকে আনা ৮টি প্রতিমা ভৈরব নদে বিসর্জন দেওয়া হয়। এ সময় অনেক ভক্ত কান্নায় ভেঙে পড়েন। সৃষ্টি হয় হৃদয় বিদারক দৃশ্যে ।
গতকাল সোমবার সকাল থেকেই দেবী বিসর্জনের লগ্ন শুরু হয়। ফলে সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে নামে ভক্তদের ঢল। এসময় মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি, মন্ত্রপাঠ, উলুধ্বনি, অঞ্জলি, নাচ, সিঁদুর খেলা হয়। মুখরিত হয়ে ওঠে মণ্ডপ প্রাঙ্গণ। ধান, দুর্বা, মিষ্টি আর আবির দিয়ে দেবীকে বিদায় জানান ভক্তরা।
সকালে দেওয়া হয় দর্পণ ঘট বিসর্জন। এমনই আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুর্গতিনাশিনী দেবী বাবার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে গেলেন স্বামী গৃহে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অসুর শক্তি বিনাশকারী দেবী বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে সব অপশক্তির বিনাশ হবে। শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে যাবে সবখানে।
প্রতিমা বিসর্জনের সময় মেহেরপুর ভৈরব নদের দুই পাড়ে হাজারো ভক্ত ও দর্শনার্থীরা ভিড় জমান। অনেকে প্রতিমা বিসর্জনের সময় নৌকায় করে নদীতে আনন্দ-উৎসব করেন। আবার অনেকে মায়ের বিদায়ের বিরহে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মুজিবনগর প্রতিনিধি জানান, করোনা সচেতনতায় সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে মুজিবনগরে ৬ টি পূজা মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
সোমবার বিকেল থেকে মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর, কোমরপুর, মোনাখালী, দারিয়াপুর-খাঁনপুর, রতনপুর ও বল্লভপুর পূজা মণ্ডপের প্রতিমা ্ন ভৈরব নদীতে বিসর্জন দেয়া হয়।
এদিকে বিকেল থেকে সাজ সাজ রবে দেবীর অভয়বাণী ধারন করে পায়ে হেটে, রিক্সায় চড়ে নেচে-গেয়ে এগিয়ে চলতে থাকে দুর্গা পূজার শোভাযাত্রা। ট্রাকে অথবা ভ্যানে পথে পথে শত শত মানুষের সাধুবাদ ও কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিসর্জন স্থলে। যেখানে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়, উচ্ছ্বাসের মাত্রা আরও তীব্রতর হয় সেখানেও।
উচ্ছ্বাস দেখতে সে স্থানগুলোতে নামে হাজারো মানুষের ঢল। পর্যায়ক্রমে ঘাটে প্রতিমা নামানোর সময় ঘণ্টা, উলুধ্বনি ও ঢাক-ঢোলের আনন্দ-উল্লাসে বিসর্জন স্থল পায় ভিন্ন মাত্রা। প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে ফিরে আসার দৃশ্য শোকাবহ আর প্রতিমা বিসর্জন দিতে যাওয়ার সময় উল্লাসের চিত্রই যেন পাল্টে যায় ক্ষণিকের মধ্যে। আনন্দ-উল্লাসের এ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে উপস্থিত দর্শনার্থীদের কড়ানাড়ে এক অন্য চিন্তা। অন্যের বিশ্বাসের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেবীকে বিসর্জন দিতে পেরে খুশি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।