শেখ মুজিব,মুজিবনগর ও মেহেরপুর যেন একসূত্রে গাঁথা। শেখ মুজিব এই এলাকাকে ভালোবেসে বারবার এসেছেন এবং মেহেরপুরের মানুষও তাকে গভীরভাবে ভালোবেসে তার আহবানে মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মেহেরপুরের মুজিবনগর ছিলো বাংলাদেশের রাজধানী। মুজিবনগরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগরখ্যাত মেহেরপুরকে দ্বিতীয় রাজধানীর মর্যাদা দিতে চেয়েছিলেন। আজ আমরা আলোচনা করবো মেহেরপুরে কতবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এসেছিলেন, জনসভায় কি বক্তব্য রেখেছিলেন এবং মেহেরপুরকে নিয়ে তিনি কি স্বপ্ন দেখেছিলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহ্যবাহী মেহেরপুরের মাটিতে কয়েকবার এসেছিলেন।১৯৫৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম মেহেরপুরে এলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মেহেরপুর পৌরসভার কালাচাঁদ হলের সামনে জনসভা করলেন। পরে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে ৩১ আগষ্ট ১৯৭০ তিনি এলেন মেহেরপুরে। সাথে ছিলেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলী। তিনি পরের দিন ১ সেপ্টেম্বর ভেড়ামারা মিরপুর আমলা খলিসাকুন্ডি, গাংনীসহ বিভিন্ন স্থানে পথসভা শেষে তিনি রাত্রি ৭ টার দিকে কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে’র গণজমায়েতে বক্তৃতা করেন। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। জানা যায় ক্যাপ্টেন মনসুর আলীসহ জাতীয় চার নেতা কুষ্টিয়ার জনসভায় উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কুষ্টিয়া,যশোর ও খুলনা জেলায় সপ্তাহব্যাপী নির্বাচনী সফরে বের হন। ৩১ আগষ্ট ১৯৭০ ঈশ্বরদী বিমান বন্দরে অবতরণ করে মেহেরপুরে উদ্দেশ্যে যাত্রাপথে বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্য রাখেন। বিকেলে মেহেরপুরের শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কের জনসভায় উপস্থিত হন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল, সেই সমাবেশে উপস্থিত থাকার। আমি তখন স্কুলের ছাত্র। শুনলাম বঙ্গবন্ধু আসছেন,তাই ছুটে গেলাম। জনসভার আগে তিনি মেহেরপুরের গণমানুষের নেতা মোহাম্মদ ছহিউদ্দিনের বাসায় কিছুটা বিশ্রাম নিয়েছিলেন। মনে পড়ে মঞ্চ সাজানো হয়েছিল পার্কের বর্তমান মেহেরপুর হলের সামনে। অর্থাৎ সোনালী ব্যাংকের সাথে লাগা কোনাটায়। গোটা চারিক চৌকি দিয়ে সাদামাটা মঞ্চ। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল মঞ্চের সামনে বসে বক্তব্য শোনার। সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমা আওয়ামীলীগ সভাপতি মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রেখেছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক ওবাইদুর রহমান।
সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবেগভরা কণ্ঠে অনেক কথা বলেছিলেন। এতকাল পরেও নেতার দু‘একটি কথা আমার বেশ মনে আছে। তিনি সেদিন দুই ভাইয়ের গল্প বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট ভাই ছিলো সহজ-সরল আর বড় ভাই ছিল খুবই চালাক। তাদের ছিলো একটি গাভী। এই গরু কি ভাবে ভাগ করবে? বড় ভাই ছোট ভাইকে বললো, ‘তুই গরুর সামনের ভাগ দিবি আর আমি পিছনের অংশ।’ গরু এইভাবেই ভাগ হলো। ছোট ভাই গরুকে রাতদিন ভাল ভাবে খাওয়ায় আর বড় ভাই প্রতিদিন পিছনে বসে গরুর দুধ টানে এবং মজা করে দুধ খায়। আমাদের পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের অবস্থা হয়েছে তাই। আমরা ছোট ভাই, আমরা গরুকে খাওয়াই, আর ওরা বসে বসে মজা করে দুধ খায়। এই অবস্থা চলতে পারে না। আমরা এই পরিবর্তন চাই। আগামী নির্বাচনে আমরা ইনাশাল্লাহ এর জবাব দিবো।
এই সমাবেশ সম্পর্কে দৈনিক ইত্তেফাক,আজাদ,অবজারভারসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় তিন কলাম হেডিংয়ে বলা হয়েছিল,‘মেহেরপুরের বিরাট জনসভায় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবের বক্তৃতাঃ একটানা শোষণের ফলে বাংলা আজ ভিখারীতে পরিণত হইয়াছে’। রিপোর্টে বলা হয়,‘আজ অপরাহ্নে মেহেরপুর ময়দানে এক বিশাল জনসভায় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান জনগণকে সতর্ক করিয়া দিয়া বলেন, গত ২৩ বৎসর যাবৎ বাংলাকে শোষণ করিবার জন্য বাংলার এক শ্রেণীর মীরজাফর ও বিশ্বাসঘাতক দায়ী। তাহারা গদি, পারমিট ও লাইসেন্সের জন্য বারবার বাংলার স্বার্থকে বিসর্জন দিয়াছে।
তিনি বলেন,দীর্ঘদিনব্যাপী শোষণের ফলে এককালের সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরপুর বাংলা আজ ‘ভিখারী বাংলায়’পরিণত হইয়াছে। বাংলার মানুষ আজ অনাহারের শিকারে পরিণত হইয়াছে।’
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়,‘ প্রবল বারিপাত উপেক্ষা করিয়া বিপুল জনতা সাগ্রহে তাহাদের প্রিয় নেতার বক্তৃতা শ্রবণ করেন।’
অবজারভার পত্রিকায় হেডিং ছাপা হয় ‘ঝযবরশয গঁলরন
‘Sheikh Mujib says- Elactions will be a referendum on Six points’
wi‡cv‡U© ejv nq, `MEHERPUR Aug 31:- Sheikh Mujibur Rahman,President of Awami Leagug deiterated today that the coming general election on December 7 would be a referendum of East Pakistan were in favour of regional autonomy on the basis of Six points programme, reports APP.’
১৯৫৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস। মেহেরপুরে এলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।মেহেরপুর পৌরসভার কালাচাঁদ হলের সামনে জনসভা হলো। সভায় সভাপতিত্ব করেন মেহেরপুরের জননেতা মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন।
শেখ মুজিবুর রহমান তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সেই সভায় বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ। জানা যায়,১৯৫৭ সালে চতুর্থ সম্মেলনের আগে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন মওলানা ভাসানী। ১৯৫৭ সালে ১৩ জুন আরমানিটোলার নিউ পিচকার হাউসে এবং পরদিন গুলিস্তান সিমেনা হলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রতিনিধিদের ভোটে মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
অনলাইন পত্রদূত পত্রিকায় প্রয়াত ননী গোপাল ভট্টাচার্য্য লিখেছেন,‘১৯৫৮ খৃষ্টাব্দ, সেপ্টেম্বর মাসের প্রায় শেষশেষি। শেখ মুজিবুর রহমান মেহেরপুরে এক জনসভায় করতে এলেন। স্থানীয় পৌরসভার কালাচাঁদ হলের সামনে জনসভা হলো। ছোট্ট শহরে হাজার হাজার লোকের স্বত:র্স্ফূত সমাবেশ। সভাস্থল ছেড়েও রাস্তার বহুদুর পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য। তখন তো এ অঞ্চলে মাইকের এমন ব্যাপক ব্যবহার ছিল না। তাই মাইকে জনসভার আহ্বানে শেখ মুজিবুরের টানে দলে দলে যেন মানুষের ঢল নামলো। জনপ্রিয়তার শীর্ষে জন-মন-নন্দিত শেখ মুজিব ভাষণ দিতে উঠলেন। জলদগম্ভির সেই প্রাণ মাতানো আহ্বান- “ভায়েরা আমার”। এই আহ্বানের মধ্যে কেমন যেন একটা আন্তরিক মাধুর্য লুকিয়ে আছে, যা হৃদয়কে স্পর্শ করে। তার ভাষণে সুপ্ত প্রাণ দীপ্ত হয়ে ক্ষিপ্ত মন মানসে কেমন এক আবেগ সঞ্চার করে যেন যা একমাত্র প্রাণখোলা, আন্তভোলা তার ভাষণেই সম্ভব।’
তিনি তার বক্তব্যে বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তান একদিন সার্বভৌমত্ব লাভ করবেই, সেদিন আর বেশী দুর নয়। সেদিন এক অসাম্প্রদায়িক সর্ব সাধারণের গ্রহণযোগ্য সংবিধান রচিত হবে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই ভাববে এদেশ, মাটি, এ সোনার বাংলা তাদের সবার। সামনে এমন একটা দিন আসছে, যেদিন আমরা মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান, সব বাঙালি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐ জালেমদের বিরুদ্ধে লড়বো আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার ছিনিয়ে আনবো।
প্রয়াত ননী গোপাল ভট্টাচার্য্য লিখেছেন,‘সভা শেষে আওয়ামী ছাত্রলীগের সে সময়ের মহকুমা সভাপতি ইসমাইল হোসেন আমাকে খুঁজে বার করে ছহিউদ্দিন ভাইয়ের সামনে হাজির করলো। ছহিউদ্দিন ভাই আমাকে একান্তে গোপনে ডেকে নিয়ে যা বললেন তার মমার্থ হলো, মুজিব ভাই গোপনে হিন্দু ছাত্রদের সাথে কিছু আলোচনা করতে চান। তাই সন্ধ্যার মধ্যেই পুলিশ তথা ডিএসবি’র নজর এড়িয়ে, আমি যেন কিছু হিন্দু ছাত্রদের নিয়ে গিয়ে দেখা করি। আমরা সকলে কাসারীপাড়ায় মেন রোড থেকে যে রাস্তাটি বাবুয়া বোসের বাড়ির দিকে গেছে, ঠিক তার বাঁ দিকে ব্রজেন কবিরাজ মহাশয়ের বাড়িতে সন্ধ্যায় গিয়ে মুজিব ভাইকে সশ্রদ্ধ নমস্কার জানালাম। ছহিউদ্দিন ভাই আমাদের সকলের পরিচয় করিয়ে দিলেন। ঘরে দু’খানা মাদুর পাতা। দক্ষিণ দিকের মাদুরের উপর একটা বেড়শীট পাতা, একটা বালিশটা মুজিব ভাই কোলের উপর নিয়ে বসে আছেন। একটা মোটা মোমবাতি জ্বলছে। এই প্রথম অতি কাছে থেকে সামনা-সামনি দেখলাম। চেহারা, দোহারা স্বাস্থ্যবান, ঈষৎ শ্যামলা, ব্যাক ব্রাশ করা কালো চুল, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, মুখের বাহার কালো গোফজোড়া তার। মুজিব কোটসহ পরনে সাদা পাজামা পাঞ্জাবী। ঈষৎ ভাঙ্গা জলদগম্ভীর কন্ঠস্বর।
মুজিব ভাই বললেন, যাক শোন, যার জন্য তোদের এখানে ডাকা। আমি জানিরে, পাকিস্তানী শাসকেরা হিন্দুদের ওপর নানাভাবে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে, ওরা ওদের পা চাটা দোসরদের মদদ দিয়ে দিয়ে লেলিয়ে দিচ্ছে। তাই তো শত শত হিন্দু এদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে নিজেদের সাত পুরুষের জন্ম ভুমির মায়া ছেড়ে। তাদের আহাজারি চিরদিনের জন্য জন্মভিটা ছাড়ার করুন আর্তি আমার মনে বড় বাজে। জানিস, আমি আমার এ সোনার বাংলাকে প্রাণের চেয়েও ভালবাসি। যে সব হিন্দুরা দেশ ছেড়ে যাচ্ছে, তাদের বুক ফাটা কান্নাই প্রমাণ করে, তারা এদেশ কত্তো ভালবাসে। আমার মন বেদনা কেউ বুঝবে না। বিভিন্ন অবস্থার চাপে পড়ে তারা হয়তো বা এদেশে ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে।
এক আবেগে বলতে লাগলেন “তোরা আমায় কথা দে, এদেশ ছেড়ে চলে যাবি না। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশ আমাদের। তোদের শপথ করে বলতে পারি, এ অমাবস্যা থাকবে না, নতুন সূর্ষ উঠবেই। আর তোরাই আনবি – নব নবীনের জয়গান। গেয়ে সেই অরুণদীপ্তি নতুন প্রভাত।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এঅঞ্চলের সহজ-সরল মানুষগুলোকে ভালোবেসে ছিলেন। তাইতে বার বার এই মাটিতে এসেছেন। এঅঞ্চলের মানুষও তাকে প্রাণের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্যরা শপথ নিয়েছে। গঠিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নতুন সরকার।
বঙ্গবন্ধুর নামানুসারে বৈদ্যনাথতলার নাম মুজিবনগর করা হয়। মুজিবনগর শুধু ঐতিহাসিক স্থানই নয়, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং রাষ্ট্র গঠনের ভূমিও। যুদ্ধ করে বিজয়ী হওয়া প্রতিটি দেশের এমন একটা জায়গা থাকে, যেটি মানুষের আবেগের সঙ্গে যুক্ত। যেমন আমেরিকার ফিলাডেলফিয়া গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে চিহ্নিত।
১৭ এপ্রিল ১৯৭১ এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এই স্থানের নাম ‘মুজিবনগর’ নামকরণ করেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত মুজিবনগর ছিল সরকারের রাজধানী।
সাংবাদিকদের প্রধান প্রশ্ন ছিল সরকারের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোথায়? জবাবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। তাঁর সঙ্গে আমাদের চিন্তার (বিস্তর) যোগাযোগ রয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগরখ্যাত মেহেরপুরকে দ্বিতীয় রাজধানীর মর্যাদা দিতে চেয়েছিলেন। তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে লিখিত নির্দেশ দিয়েছিলেন মুজিবনগরকে মূল্যায়নের। ’৭৫ এ সপরিবারে নিহত হওয়ার কারণে তার সেই স্বপ্ন অধরা থেকে গেছে। বঙ্গবন্ধু মেহেরপুরের মুজিবনগর আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিধ্বস্ত দেশ গড়তে গিয়ে তিনি সময় করতে পারেননি।
সম্প্রতি মেহেরপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘মুজিববর্ষে শতঘণ্টা মুজিবচর্চা’ ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ভাষাসৈনিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তাই বলেছেন,বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগরখ্যাত মেহেরপুরকে দ্বিতীয় রাজধানীর মর্যাদা দিতে চেয়েছিলেন। তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে মুজিবনগরকে মূল্যায়নের জন্য লিখিত নির্দেশ দিয়েছিলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি এঅঞ্চলের মানুষের ভালোবাসর আরেক নিদর্শন মেহেরপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘মুজিববর্ষে শতঘণ্টা মুজিবচর্চা’ শীর্ষক আয়োজন। এই মহতি আয়োজনটি ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি,মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান, প্রফেসর হাসানুজ্জামান মালেক,এডভোকেট পল্লব ভট্টাচার্য ও অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম শাহীনসহঅন্যরা বিশেষ ভুমিকা রাখছেন। এই আলোচনায় দেশের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও বিশিষ্ট ব্যক্তি অংশ নিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেহেরপুরের গণমানুষের নেতা ছহিউদ্দিনকে সবসময়ে বলতেন,‘আমার রাজধানীর এমপি ছহি’। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মুজিবনগরে একাধিকবার এসেছেন এবং মেহেরপুরের মানুষের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি মেহেরপুর ও মুজিবনগরের উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেছেন, মেহেরপুরের মানুষের জন্য আমি সাধ্যমত চেষ্টা করবো। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও মেহেরপুরের কৃতী সন্তান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের আন্তরিক চেষ্টায় মুজিবনগরে হচ্ছে স্বাধীনতা সড়ক ও চেকপোস্ট, হচ্ছে রেলপথ, হচ্ছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক প্রকল্প। মেহেরপুরের মানুষ বর্তমান সরকারের প্রতি খুশি। তারা এই সব প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন চ্য়া। মেহেরপুরের মানুষের প্রত্যাশা মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর কুষ্টিয়ার মানুষের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মেহেরপুর,কুষ্টিয়া,চুয়াডাঙ্গা,ঝিনাইদহ,মাগুরা ও রাজবাড়ী নিয়ে করতে হবে মুজিবনগর বিভাগ। এই বিভাগের সদর দপ্তর হবে কুষ্টিয়ায়।
মেহেরপুরের মানুষের দাবি,মেহেরপুরকে দ্বিতীয় রাজধানীর মর্যাদা দিতে হবে এবং ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে রাস্ট্রীয়ভাবে জাতীয় শপথ হিসেবে পালন করতে হবে।
সূত্র
১। ইতিহাসের পাতা থেকে মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস
ছহিউদ্দিন ডিগ্রি কলেজ,মেহেরপুর
২।অনলাইন পত্রদূত পত্রিকা
৩।অবজারভার ও দৈনিক ইত্তেফাক ২ সেপ্টেম্বর ১৯৭০ সাল
৪. ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন লেখা
লেখক: মুহম্মদ রবীউল আলম, লেখক-সাংবাদিক, মেহেরপুরের সন্তান