মেহেরপর একটি সবজি খ্যাত জেলা। এ জেলার চাষিরা সারা বছরই বিভিন্ন সবজির আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জেলার মানুষের অর্থকরী ফসল বিভিন্ন সবজি। এবছরেও ব্যাপক পরিমাণে সবজির চাষ হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানি হয়। কিন্তু বর্তমানে সবজির বাজার দর খুবই কম। উৎপাদিত সবজির কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলার চাষিরা। পরিবহন ও শ্রমিক খরচের টাকাও উঠছেনা সবজি বিক্রি করে।
ক্রেতা কম থাকায় অধিকাংশ সবজিই নষ্ট হচ্ছে জমিতে। এতে ভালো নেই সবজি চাষি ও বিক্রেতারা। চাষিরা বলছেন, বাজারেও দাম নেই,পাইকারি ব্যবসায়ীরাও আসছেনা। জমিতে নস্ট হচ্ছে বাঁধাকপি ও ফুলকপি।
কৃষি বিভাগ বলছেন, একই সাথে মেহেরপুরসহ সারা দেশের শীতকালের সবজি উঠতে শুরু করেছে তাই এমন দরপতন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে জেলায় এবছর ফুলকপির আবাদ হয়েছে ১ হাজার ১২০ হেক্টর, বাঁধাকপির আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৬০ হেক্টর
এর মধ্যে গাংনী উপজেলায় বিভিন্ন মাঠে ১৬০ হেক্টর ফুলকপি এবং ১৫৫ হেক্টর বাঁধাকপির আবাদ হয়েছে।
মেহেরপুর জেলার সদর বাজারসহ বেশকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে বাঁধাকপি, ফুলকপির ভরা মৌসুম। মাঠে রয়েছে চিচিংগা, করল্লা, টম্যাটো, বেগুন, ঢেঁড়স, আলু, কুমড়া, মিষ্টি কুমড়াসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ সবজি । কিন্তু সবজির তুলনায় ক্রেতা কম। এতে অধিকাংশ কাঁচামাল নষ্ট হয়ে লোকসানে রয়েছেন বিক্রেতারা। গাংনী বাজারের কয়েকজন সবজি বিক্রেতা জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেচাকেনা করতে হচ্ছে। বাজারে সবজির দামও কমেছে, ক্রেতার সংখ্যাও কমেছে। এতে সবজি নষ্ট হচ্ছে। লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসসয়ীহ চাষিদের।
গাংনীর সাহারবাটি গ্রামের সবজি চাষিরা জানান, একবিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করতে খরচ হয়েতে ২৫ হাজার টাকা। সাথে রয়েছে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ।
এখন এক বিঘা জমির ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। এতে ট্রাক ভাড়া ও শ্রমিক খরচের টাকা হচ্ছনা। আগামীতে সবজি চাষ করবেননা বলেই হতাশা ব্যক্ত করেন চাষিরা।
ফুলকপি চাষি সাহারবাটি গ্রামের ইদ্রিস আলী,রুহুল আমীন,জহুরুল ইসলাম,সামিউল আলম জানান,অনেক আশা নিয়ে ফুলকপি ও বাঁধাকপির আবাদ করেছিলাম। ফলনও হয়েছে ভাল। মাঠজুড়ে শুধু কপির জমি দেখা যায়। একেকটি কপির ওজন হয়েছে দেড় থেকে দুই কেজি। এখনও বিক্রি করতে পারিনি। জমিতে অনেক ফুল ফুটে নস্ট হয়ে যাচ্ছে। কোনো উপাই না পেয়ে বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাজারে ৪/৫ টাকা পিচ বিক্রি করতে হচ্ছে। ঢাকা, চট্রোগ্রাম, সিলেট ও বরিশালে পাঠিয়েও কোনমতে ট্রাক ভাড়া হচছে। ঘর থেকে শ্রমিক খরচ দিতে হচ্ছে। সার ও কীটনাশকের দোকান থেকে ধার দেনা করে আবাদ করছি। বিক্রির পর দেনা পরিশোধ করবো। কিন্তুু সে আশায় ভাটা পড়েছে। অনেক টাকা দেনা পরিশোধ করতে হলে সমিতি থেকে ঋন করতে হবে।
কাথুলী গ্রামের সোলাইমান হোসেন বলেন,বাঁধাকপি কয়েক সপ্তাহ রাখা গেলেও ফুলকপি বিক্রির উপযোগী হওয়ার সাথে সাথে বিক্রি করতে হয়।তা নাহলে ফুল ফুটে গেলে বিক্রির অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আমার এক বিঘা জমির ফুলকপির বিক্রি করতে না পারায় জমিতে নস্ট হচ্ছে।
সদর উপজেলার বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের বাঁধাকপি চাষি পারভেজ বলেন, আমার দুই বিঘা জমির বাঁধাকপি বিক্রির উপযোগী হয়েছে। স্থানীয় বাজারে ক্রেতা নেই। পরিবহন খরচ না হওয়ায় বাইরের বাজারেও পাঠাতে পারছিনা। অনেক কপি পাখিতে ঠুকরিয়ে নস্ট করছে। সব খরচ ও শ্রম সবই বৃথা।
পাইকারি ব্যবসসয়ী আবুল বাসরা,আঙ্গুর আলী ও জিয়াউল ইসলাম বলেন, আমরা প্রথম প্রথম চাহিদা অনুমান করে প্রতিবিঘা জমির বাঁধাকপি ৬০ হাজার ও ফুলকপি ৭০ হাজার টাকায় কিনে রেখেছি। এখন আর বিক্রি করতে পারছিনা। ঢাকা,সিলেট,চট্রোগ্রাম, বরিশালে পাঠানো হলেও চালান ঘুরছেনা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃঞ্ষ হালদার বলেন, প্রতিবছর এ মৌসুমে মেহেরপুরে ব্যাপক ভাবে বাঁধাকপি ও ফুলকপির আবাদ হয়। হঠাৎ দরপতন হয়েছে। তবে আমরা বিভিন্ন জেলায় যোগাযোগ করছি সবজি বিক্রির জন্য।