এক ব্যবসায়ীকে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদ ও বাণিজ্য মেলা বন্ধের দাবীতে দোকানপাট বন্ধ রেখে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে বাণিজ্য মেলা বন্ধ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যৌথ ব্যবসা সমিতির নেতারা।
জানা গেছে, গতকাল শনিবার দুপুরে মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মেলার স্টল তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে মেহেরপুর ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী দেখতে আসেন এবং মেলার আয়োজকদের কাছে জানতে চান স্কুল মাঠে মেলার অনুমোদন দিয়েছেন কিনা। এ নিয়ে মেলার আয়োজক কমিটি ও ব্যবসায়ীদের সাথে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। এক পর্যায়ে এক ব্যবসায়ী লাঞ্চিত করার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে দুপুর পৌনে তিনটার দিকে মেহেরপুর শহরের বড় বাজার এলাকায় দোকানপাট বন্ধ রেখে চার রাস্তার মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীরা।
খবর পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাইরুল ইসলাম, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন রওশন, মেহেরপুর সদর থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিনসহ সেনাবাহিনী ও পুলিশের একাধিক টীম ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহবান জানান। পরে বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনায় বসেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
মেহেরপুর বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান দিপু জানান, চলমান এসএসসি পরীক্ষার সময় জেলা প্রশাসকের অনুমোতিক্রমে মেহেরপুর সরকারি বালক বিদ্যালয় মাঠে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলা আয়োজন করে স্বপ্ন চুড়া নামের একটি সংগঠন। যা মেহেরপুরের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ মেলার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ বিষয়ে মেলার আয়োজকদের এক সদস্য একজন ব্যবসায়ীর ওপর হামলা করে। মেলা বন্ধ ও হামলাকারীকে গ্রেফতার করতে এ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ। মেলা বন্ধ না হলে আরও বড় কর্মসূচির ঘোষনা দেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, মেলাটি প্রথমে স্টেডিয়াম মাঠে হওয়ার কথা ছিলো। সেখানে ক্রীড়ামেদিরা বাঁধা হয়ে দাঁড়ান। তারা জেলা প্রশাসককে স্বারকলিপি দেওয়াসহ মানববন্ধন করেন। পরে সেখান থেকে মেলাটি মেহেরপুর সরকারি বালক ফুটবল মাঠে নিয়ে যান আয়োজকরা। গতকাল শনিবার স্কুল মাঠে চলছিলো মেলার স্টল বসানোর কাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২০২৪ সালের ২৩ জুন তারিখের ‘মেলা পরিপত্র ২০২৪’ থেকে জানা গেছে স্থানীয়ভাবে বাণিজ্যমেলার আয়োজন করতে হলে স্থানীয় জেলা প্রশাসক স্খাণীয় চেম্বার অব কর্মাসের অনুমোদন সাপেক্ষে মেলার অনুমিত দান করবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে, মেহেরপুর চেম্বার অব কমার্স সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর বাণিজ্যমেলা করার জন্য কোন সংগঠণ মেলার করার আবেদন করেনি।
পরিপত্রের ২(খ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, জেলা প্রশাসকগণ সংশ্লিষ্ট নিবন্ধিত এসোসিয়েশন/চেম্বারের সুপারিশের ভিত্তিতে ও স্থানীয় পুলিশ বিভাগের মতামত গ্রহণ করে পরিপত্রের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের শর্তাবলি পরিপালন সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট জেলার মধ্যে অনধিক ১ (এক) মাসের জন্য বাণিজ্য মেলা আয়োজনের অনুমতি প্রদান করতে পারবেন। পরিপত্রের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের (চ) ধারায় বলা আছে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে মেলা করা যাবে না।
স্বপ্নচুড়া ফাউণ্ডেশনের সভাপতি আশিকুর রহমান শিশির বলেন, ব্যবসায়ীরা মেলা বন্ধ করার জন্য হুমকি দেন। মেলার পরিচালনার ম্যানেজারের সাথে সাথে তারা কথাকাটি করে এবং দীর্ঘক্ষণ এ ধরণের ঘটনা ঘটতে থাকলে স্থানীয়দের সাথে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীরা মেলা স্থলে অনেক বাঁশসহ সরঞ্জামাদি ভাংচুর করেছে। ব্যবসায়ীদের সাথে আমাদের কোন বিরোধ হয়নি।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু অন্যান্য জেলায় স্কুল মাঠে মেলা হচ্ছে সে হিসেবে আমরা জেলা প্রশাসকের আবেদন করেছি, তাই জেলা প্রশাসক আমাদের স্কুল মাঠে অনুমতি দিয়েছেন।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ সাংবাদিকদের জানান, স্বপ্নচুড়া ফাউন্ডেশন নামের একটা সংগঠনকে আগামী ২ মে থেকে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গতকাল শনিবার রাতে মেহেরপুর ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে মেহেরপুর যৌথ ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দরা যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে আজ রবিবার জেলা প্রশাসকের সাথে মিটিংয়ে যদি বাণিজ্য মেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত না হয়, তবে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসায়ীরা। মেহেরপুর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান দিপুর বরাত দিয়ে মেহেরপুর প্রতিদিনকে এ তথ্য জানিয়েছে ব্যবসায়ী রাশিদুল ইসলাম রনি।
মেহেরপুর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান দিপুর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, হোটেল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহবায়ক শামিম হোসেন, তহবাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহবায়ক আব্দুস সামাদ, সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান, মেহেরপুর জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ মোমিন, জেলা পরিবেশক সমিতির আবুল হাশেমসহ ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দরা।
উল্লেখ্য, স্বপ্নচুড়া ফাউণ্ডেশনের ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-জনতা এ মেলার অনুমতি নিয়েছে। আগামী ২ মে থেকে মেলা শুরু হওয়ার কথা। এরমধ্যে এসএসসি দাখিল ও সমমনা পরীক্ষা চলছে, শেষ হবে আগামী ১৩ মে।