এম এফ রুপক
মোবাইল ফোনভিত্তিক অর্থ আদান-প্রদানের পরিষেবা ‘বিকাশ’ এর নাম করে প্রতারণার নতুন ফাঁদ পেতে বসেছে একটি অসাধু চক্র। মানুষের না জানার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিকাশ এজেন্টরাও এমন প্রতারণার শিকার হয়েছে। আবার কোন সময় লটারী বেধেছে বলেও টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।
এ ধরণের ঘটনা মেহেরপুরেও ঘটেছে বেশ কয়েকটি। অনেকেই লোক লজ্জার ভয়ে চুপ করে আছে আবার অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়ে গিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। এ বিষয়ে মেহেরপুর সদর থানায় প্রায় ডজন খানেক সাধারণ ডায়েরীও করেছে ভুক্তভোগীরা।
কখনো কখনো বিকাশের ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে গ্রাহকের পাসওয়ার্ড জেনে তুলে নেওয়া হচ্ছে গ্রাহকদের টাকা আবার কখনো বিকাশ এ্যাপস এর মাধ্যমে গ্রাহকদের মোবাইল নম্বরে যাওয়া ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) কৌশলে জেনে নিয়ে তুলে নিচ্ছে টাকা।
এমনি ঘটনা সম্প্রতি ঘটেছে সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামে, খলিলুর রহমানের ছেলে জহিরুল নামের এক কিশোর এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। জহিরুল জানায়, প্রথমে আমাকে ফোন করে বলে আপনার নম্বরে ১ লাখ টাকার লটারী বেধেছে। আপনি আমাদের এই নম্বরে ৩০ হাজার টাকা বিকাশ করলে আপনি সাথে সাথে পেয়ে যাবেন ১ লাখ টাকা।
যদি আমাদের কথা বিশ^াস না হয় আপনি আমাদের ১ হাজার টাকা দেন দেখেন ৩ হাজার পাবেন। এমন কথা শুনে আমি ১ হাজার টাকা বিকাশ করি। তার কিছুক্ষণ পর ৩ হাজার টাকা পেয়ে যাই। পরে আমি পাশের গ্রাম চকশ্যানগরে যাই এবং সেখানের একটি বিকাশ এজেন্টের কাছে গিয়ে বলি এই নম্বরে ৩০ হাজার টাকা বিকাশ করতে। আমার কাছে কোন এতো টাকা ছিল না সেজন্য ঐ এজেন্টকে বলি টাকা বিকাশ করেন আমি দিয়ে দিচ্ছি। দোকানদার পরিচিত থাকায় টাকা দিয়ে দেয়। পরে আর সেই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারিনি।
একই ঘটনা ঘটেছে গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতারণ শিকার ঐ যুবক জানান একই কায়দায় আমার সাথেও নিয়েছে ৯০ হাজার টাকা।
বিকাশের ম্যানেজার পরিচয় দিয়েও টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি। এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের এক চামড়া ব্যবসায়ী টুটুল। হারিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা। টুটুল জানান, +৮৮০১৮৪৩৬৩০১৮১ নম্বর থেকে ফোন করে বিকাশের ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে মামুন শাহেদ নামে একজন জানায়, অবৈধ আর্থিক লেনদেন রোধে সমস্ত পার্সোনাল বিকাশ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অ্যাকাউন্টে কোন টাকা থাকলেও তা তিনি আর তুলতে পারবেন না। এখন গ্রাহকদের সুবিধার্থে তারা ফোন করে গ্রাহকের তথ্য মিলিয়ে অ্যাকাউন্টটি আবারো চালু করে দেয়ার কাজ করছেন।
এই পর্যায়ে গ্রাহককে একটি কোড নম্বর (*৩৩*০০০#) দিয়ে ওই প্রতারক বলে, আপনি এটা ডায়াল করে দেখুন, আপনি নিজেই দেখতে পাবেন, অ্যাকাউন্টে বন্ধ হয়ে যাবার তথ্যটি।
যদিও সেই কোড ডায়াল করলে কিছুই দেখতে পাওয়া যায় না। পরে ওই প্রতারক বলে, ওই গণমাধ্যম কর্মীর পাসওয়ার্ডটি জানতে চায় এবং বলে যে পাসওয়ার্ডটি আসলে তাদের কাছে রয়েছে, শুধু গ্রাহকের পরিচয় কনফার্ম হওয়ার জন্য এটি জানতে চাওয়া হচ্ছে। এইভাবে আমি তাদের পিন নম্বরটা দিয়ে দিই তাৎক্ষণিক আমার একাউন্টে থাকা ব্যবসায়ীক ২৯ হাজার টাকা উধাও।
একই ধরণের প্রতারণার শিকার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন সদর উপজেলার বন্দর গ্রামে শাহিন নামের এক কলা ব্যবসায়ী। পরে তার সাথে খারাপ আচরণ করে ফোন কেটে দেয় ঐ প্রতারক।
সরদ উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের বিকাশ এজেন্ট মহিবুল। প্রতারকদের কাছে ওটিপি বলে হারিয়েছেন ৮০ হাজার টাকা। তাকেও বলা হয়েছিল একাউন্ট ভেরিপাই করা হচ্ছে। নতুন ব্যবসায়ী হিসেবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই পড়েছেন বড় ধরনের লোকসানের মুখে।
বিকাশের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ওই ধরণের কোনো কর্মকাণ্ড তারা পরিচালনা করছেন না। এই সব প্রতারণা থেকে বাঁচতে বিকাশ কর্তৃপক্ষ ৪টি সতর্কতামূলক বার্তা দিয়েছেন। এসব অনুসরণ করলে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
১. নিজের বিকাশ একাউন্টের পিন নম্বর ও একাউন্ট ব্যালান্স কখনো কাউকে বলবেন না। এমনকি +১৬২৪৭ বা এই ধরণের নম্বর থেকে ফোন করলেও পিন নম্বর কিংবা পিন নম্বরের যোগফলও বলা যাবে না।
২. ফোনে কেউ যদি আপনাকে ভুল করে টাকা পাঠানোর কথা বলে ফেরত চায়, আগে একাউন্ট ব্যালান্স চেক করুন।
৩. কারো প্ররোচনায় লটারী জেতার মিথ্যা আশায় কোনো লেনদেন করবেন না।
৪. ফোনে শুধু কারো কথা শুনে পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে কারো নির্দেশনায় কোনো নম্বর বা কোড ডায়াল করবেন না বা টাকা পাঠাবেন না।
এ বিষয়ে মেহেরপুর সদর থানায় ওসি শাহ দারা খান জানান, গত বছর প্রায় ডজন খানেক বিকাশ প্রতারণার সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তবে এ ধরণের টাকা উদ্ধার করা খুব কঠিন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বসে এরা প্রতারণা করে। তবে বর্তমানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ধরণের প্রতারক দের আইনের আইতাও আনার চেষ্টা চলছে।