বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে যে অপমান করা হয়েছে, তা ইতিহাসে বিরল এবং কল্পনারও অতীত। এ ধরনের ঘটনা আমাদের জাতীয় মানসিকতা ও অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যারা এ ধরণের অপকর্ম করছে, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা অতীতে ভুল করেছেন এবং এখনও ভুল করছেন। কিন্তু সংশোধন হওয়ার জন্য এখনো সময় আছে।
আজ রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনার প্রতিবাদে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আব্দুল মালেক এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আপনারা বিভিন্ন সময়ে বিপ্লবের কথা বলেন, পরিবর্তনের কথা বলেন, যা ভালো। আমরাও চাই দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আসুক। কিন্তু আপনাদের সাহস কোথা থেকে আসে, যে আপনারা আমাদের দেশের নাম পরিবর্তন করবেন? আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মানবেন না, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করবেন, বিজয় দিবস ও জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন? সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেবেন? এই ধৃষ্টতা আপনাদের কোথা থেকে হলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছনা বন্ধ করুন। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের সম্মান নষ্ট করার অধিকার কারও নেই।
একটি বিশেষ দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই দেশে নাকি মাত্র দুটি সংস্থা দেশপ্রেমি সেনাবাহিনী এবং তারাই। আর বাকি কেউ দেশপ্রেমিক নয়! এই দুঃসাহসের উৎস কী? এমন চিন্তাধারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঘাত করে এবং জাতিকে বিভক্ত করার অপচেষ্টা চালায়।
আমাদের আহ্বান, মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান করতে শিখুন। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস, বিজয়ের গৌরব, এবং সংবিধান রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এটি শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নয়, সমগ্র জাতির মর্যাদার বিষয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ পাতানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওউমেদীন মাষ্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমজাদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা গুরুদাস হালদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান টুটুল এবং কিতাব আলী।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম বলেন, আজ যারা কানু ভাইকে জুতার মালা পরিয়েছেন, তাদের পিতাদেরও মুক্তিযোদ্ধা হওয়া উচিত ছিল। আমার বিশ্বাস, যারা আজ এমন কাজ করতে সক্ষম, তাদের পিতারা যদি মুক্তিযোদ্ধা হতেন, তবে তারা হয়তো তাদের পিতাদের গলাতেও জুতার মালা পরাত। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা কানু ভাইকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে যেভাবে হেনস্তা করা হয়েছে, তা আমাদের স্বাধীনতার ওপর আঘাত এবং স্বাধীনতাকে অপমান করার শামিল।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এমন আচরণের প্রেক্ষিতে আমাদের কেবল প্রতিবাদ, শোক এবং নিন্দা জানানোর ক্ষমতাই অবশিষ্ট রয়েছে। আমরা কি সেই বাংলাদেশে বসবাস করছি, যে বাংলাদেশের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম?
মানবন্ধন কর্মসূচির আগে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স থেকে একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসন কার্যালয় প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। র্যালিতে জেলার মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন।