মেহেরপুর জেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে ১৩ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে। যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৬৬ মেট্রিকটন। প্রতি হেক্টর জমিতে ৪.১ মেট্রিকটন উৎপাদন হবে।
জেলায় গম চাষের লক্ষমাত্রা ছিলো ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া ভাল থাকায় গমের ভাল ফলনের আশা করছেন চাষীরা। গত কয়েক বছর ধরে ব্লাস্ট রোগের কারণে গমের আবাদ কমেছিল জেলায়।
অনুকুল আবহাওয়া ও গত বছরে ভালো মুল্য পাওয়ায় এই বছরে গম চাষে আগ্রহী হয়েছেন জেলার চাষিরা।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় গম চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিলো ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষি বিভাগের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে জেলায় চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে। ব্লাস্ট প্রতিরোধী ও জিংক সমৃদ্ধ উচ্চফলণশীল নতুন নতুন জাতের গম বারি ৩০, ৩৩ ও বিডব্লিউ-৩ জাতের গম চাষ করছেন চাষিরা। গমের ফলন ধরে রাখতে চাষিদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ বলছেন, মেহেরপুর অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া গম চাষের জন্য উপযোগি। গত কয়েক বছর ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ায় কৃষি বিভাগ থেকে এখানকার চাষিদেরকে গম চাষে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। গত বছর ব্লাস্ট প্রতিরোধী ও জিংক সমৃদ্ধ উচ্চফলণশীল গমের নতুন নতুন জাত আবাদ করে কৃষকরা সেই শংকামুক্ত হয়েছেন।
গম চাষি গাংনী উপজেলার ধর্মচাকি গ্রামের লিটন মাহমুদ জানান, এবছর আমার তিন বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে গম চাষ করতে সার, বীজ, চাষ, সেচসহ সব মিলিয়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমিতে ২০ থেকে ২২ মন গম উৎপাদন হবে। গত বছরের মত দাম থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন।
সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের গম চাষি সাহারুল ইসলাম জানান, এবার শীত বেশি পড়াই, গম ভালো হয়েছে। গম চাষ লাভজনক ফসল। এক বিঘা গম জমিতে গমের আবাদ করতে খরচ হয় মাত্র ১৮ খেকে ২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ২০ মন ফলন পাওয়া যায়।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে বারি-৩০ ও ৩৩ জাতের গম আবাদ করেছি। গেল বছর তিনি ২ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছিলেন।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোন প্রাকৃতিক দুূর্যোগ হয়নি। আবহাওয়া এমনটি থাকলে ফলন ভালো হবে এবং চাষীরা লাভবান হবেন।
গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের চাষি সিরাজুল ইসলাম জানান, এবার তিনি ৮ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছেন। গেল বছর আবাদ করেছিলেন ৬ বিঘা। গত বছরে রোগ বালাই ছিলোনা। তাই ফলন ও দাম দুটোই ভাল পেয়েছি। এবার বেশি করে গম চাষ করেছি।
তিনি আরো জানান, গমক্ষেতে কোন রোগ বালাই দেখা দিলে কীটনাশক বিক্রেতারা যা বলেন তাই শুনতে হয়। কোন কৃষি অফিসের লোকজনকে পাওয়া যায় না।
চাষিরা অভিযোগ করে বলেন, কৃষি অফিসের কোন পরামর্শ পাওয়া যায় না। গম ক্ষেতে রোগ বালাই দেখা দিলে কীটনাশক বিক্রেতা চাষিদের একমাত্র ভরসা।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, মেহেরপুরে তাপ, ক্ষরাসহিষ্ণু জমি গম আবাদের জন্য উপযোগী। ব্লাস্ট প্রতিরোধী ও জিংক সমৃদ্ধ উচ্চফলণশীল গমের নতুন নতুন জাত চাষীদের গম চাষে আগ্রহ বাড়াচ্ছে। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রয়েছে। দেশে গমের উৎপাদন বাড়াতে রোগ প্রতিরোধী ও জিংক সমৃদ্ধ উচ্চফলণশীল নতুন নতুন জাতের গম আবাদের চাষিদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।