পান-সিদুঁর আর মিষ্টিমুখ করিয়ে চারদিনের আনন্দ শেষে অশ্রুজলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিদায় দিলেন দূর্গা দেবীকে।
সনাতন ধর্মের হাজারো ভক্ত অনুরাগীদের চোখের জলে ভাসিয়ে এবার দেবী দুর্গা ফিরলেন নৌকায়। দেবী দুর্গা এবার কৈলাশ থেকে সপরিবারে মর্ত্যলোকে এসেছিলেন গজে(হাতি)চড়ে।
বুধবার বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা। সন্ধ্যা হতে না হতেই নীল আকাশের বর্ণিল আলোর মাঝেই বেজে উঠলো ঢাকের তাল। সাথে হাজারো নারী পুরুষের উলুধ্বনি আর ধূপের গন্ধ ছড়িয়ে মেহেরপুরের সনাতন ধর্মালম্বীরা মেতে উঠলো প্রতিমা বিসর্জনে।
মনের কলুসতাকে ঝেড়ে ফেলে পৃথিবী হবে সম্প্রীতির ও সুন্দর—এই প্রার্থনায় আগামী বছরের অপেক্ষায় দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
ভৈরব নদ, গাংনীর ভাটপাড়া কাজলা নদী, সেউটিয়ার মড়কাতে, ও মাথাভাঙ্গাসহ বিভিন্ন নদীতে দেবী এলেন, তারপর সমস্ত অশুভ শক্তি নাশ করে নৌকায় চেপে ফিরলেন কৈলাশে।
তেল-সিঁদুর পরিয়ে, পান, মিষ্টি মুখে দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে মেহেরপুর শহরের ভৈরবের তীরে ভিড় করেন হাজারো ভক্ত ও অনুরাগীরা।
প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে শুধু সনাতন ধর্মালম্বীরা নয়, নানা ধর্ম, শ্রেণি, পেশার হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে ভৈরব নদের তীর পরিণত হয় মিলনমেলায় ।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, নবমী পূজা সম্পন্নের পর মর্ত্য ছেড়ে নিজ আলয়ে যাত্রা করেন দেবী দুর্গা।
চণ্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে গত ১ অক্টোবর থেকে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়।
ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল তার সাঙ্গ হলো বুধবার বিজয়া দশমীতে।
পরবর্তী ৪ দিন মেহেরপুর জেলা শহরসহ জেলার ৩৭ টি পূজামন্ডপে পূজা-অর্চনায় ভক্তরা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন।
মেহেরপুর শহরের হালদারপাড়া এলাকার কৈলাশ হালদার ও মেলি রানী বলেন, মাকে হাসিমুখে বিদায় দিতে পারলাম, এটাই আনন্দ।সকলের শান্তি কামনা করেছি মায়ের কাছে। আমরা তো সব সময় এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করি।
প্রতিমা বিসর্জনের পর গাংনী পুজা উৎযাপন কমিটির নেতা ধীরেন কুমার দাশ বলেন, করোনার কারনে দূর্গা পুজা অর্চনা করা সম্ভব হয়নি।দুই বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা দুর্গাপূজা পালন করতে পারলাম।
শাস্ত্রমতে, বিজয়া দশমীর সকালে অঞ্জলির পর থেকে থেকে নগরীর বিভিন্ন মণ্ডপে দেবী দুর্গাকে তেল সিঁদুর আর পান চিনিতে অশ্রু সজল নয়নে বিদায় জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। দুপুর থেকে ট্রাকে কিংবা ভ্যানে করে দেবী দুর্গার প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় নদীর বিভিন্ন স্থানে।