মেহেরপুরের ভাষা সংগ্রামী গোলাম কাওসার ( চানা) ইন্তেকাল করেছেন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।
আজ শনিবার বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটের সময় তিনি শহরের পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়াস্থ নিজ বাসভবনে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। তিনি সাংবাদিক জিএফ মামুন লাকির পিতা এবং মেহেরপুর পৌরসভার কর্মচারী ছিলেন।
আগামীকাল রবিবার সকাল ১০ টার সময় নিমতলা মসজিদ প্রাঙ্গনে জানাযা শেষে পৌর কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
ভাষা সংগ্রামী গোলাম কাওসার চানার সংক্ষিপ্ত জীবনী
৫২-এর ভাষা সৈনিকদের হত্যার বিরুদ্ধে যে কয়জন মেহেরপুরে প্রতিবাদ ও মিছিল করেছিলেন তাদের মধ্যে গোলাম কাওসার চানা অন্যতম। ভাষা আন্দোলনের সময়ে মেহেরপুরে গঠিত ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।
১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ সালাম বরকত জব্বারদের হত্যার কথা মেহেরপুরে পরের দিন শুনতে পাওয়া যায়। তৎক্ষণাৎ মুন্সী সাখাওয়াত হোসেন ও গোলাম কাউসার চানার নেতৃত্বে ঢাকায় হত্যার প্রতিবাদে মেহেরপুরের রাস্তায় রাস্তায় প্রতিবাদ ও মিছিল করেছিলেন। পাক সরকারের ভাষা আন্দোলনের সময়ে তিনি মেহেরপুর উচ্চ ইংরেজি মডেল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
সম্প্রতি তাঁর একটি সাক্ষাৎকার থেকে জানা গেছে, ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করতে গিয়ে পুলিশের নির্যাতন এমনকি কারাবরণ করতে হয় তৎকালীন উচ্চ ইংরেজি মডেল স্কুলের সাত শিক্ষার্থীকে। স্কুলের ছাত্ররা একুশে ফেব্রুয়ারি ক্লাস থেকে বেরিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল নিয়ে শহরে বের হয়। শিক্ষকরা প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেদিন। ভয়-ভীতি দেখানোর পরও সেই বাঁধার প্রাচীর ভেঙে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন বন্ধ করতে পারেনি। শিক্ষকদের আদেশ অমান্য করে একুশে পালনের অপরাধে ইসমাইল ও নজির হোসেন বিশ্বাসসহ সাতজন ছাত্রকে আটক করে পুলিশ। পরে জামিনে মুক্তি পেলেও স্কুল কমিটির সিদ্ধান্তে তাদের ফোর্স টিসি দেওয়া হয়। তারা সবাই এখন পরপারে।
গোলাম কাউসার চানা ১৯৩০ সাল রতনপুর মিশন হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা তিন কড়ি শেখ, মা জয়তুন নেছা। গোলাম কাউসার চানা ৭১ মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহণ করেছিলেন তবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে রাষ্ট্রের খেতাব আজও পাননি। গোলাম কাউসার চানা রাষ্ট্রীয়ভাবে সেইভাবে মূল্যায়িত না হলেও, প্রতিবছর মেহেরপুর জেলা প্রশাসক এই ভাষা আন্দোলন কারীর হাতে সম্মানসূচক ক্রেস্ট ফুল ও ফল তুলে দেন বলে জানা গেছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তিনি মেহেরপুর পৌরসভায় কর আদায়কারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।