রুপালী খাতুন, মেহেরপুর শহরের মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা। ১০ দিন আগে করোনা পজেটিভ হয়। পজেটিভ হওয়ার ৬দিন পর্যন্ত বাড়িতেই আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ভর্তি হন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে। থেমে থেমে অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট থেকে অক্সিজেন দিয়ে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। রুপালী খাতুনের যন্ত্রণার এ কথা গুলো বলছিলেন তার ভাতিজা শাহেদ আলী। তিনি গতকাল বুধবার দুপুরে খাবার হাতে করে করোনা ওয়ার্ডের পাশে অপেক্ষা করছিলেন।
রুপালী খাতুনের মত করোনা ওয়ার্ডের রেড জোনে গতকাল দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন ৫৪ জন। উপসর্গ নিয়ে হলুদ জোনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫১ জন। চারদিন হলুদ জোনে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন মুজিবনগর উপজেলার যতারপুর গ্রামের এমদাদুল হক। হাসপাতালে গেটে ইজিবাইকে ওঠার সময় কথা হয় তার সঙ্গে। হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
গতকাল বুধবার দুপুরে প্রায় ঘন্টাখানেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড, রন্ধন শালা, সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টসহ বিভিন্ন স্থান সরেজমিন পরির্দশন করা হয়। সরেজমিনে অন্য দিনগুলোর চেয়ে গতকালের চিত্রটি ছিল সহনীয়। গতকাল দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে কেউ মারা যায়। আগের দিন করোনা পজিটিভ হয়ে একজন এবং উপসর্গে ২ জন মারা গিয়েছিলেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১০০ বেডর বিপরীতে চিকিৎসক দরকার ৪২ জন সেখানে রয়েছেন ২৪ জন। ৪র্থ শ্রেণীর জনবল ৪৩ জনের বিপরীতে রয়েছেন ১৬ জন। এদের মধ্যে ৭জন চিকিৎসক করোনা ওয়ার্ডের দায়িত্বে রয়েছেন। ৭জনের মধ্যে একজন করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে রয়েছেন।
হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র নার্স রিপনা খাতুন জানান, অন্যদিনের তুলনায় আজকের চিত্র মোটামুটি ভালো। গত ৩০ জুন থেকে গতকাল পর্যন্ত করোনা পজিটিভ হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১২২ জন। মারা গেছেন ৮ জন। আজ চারজন গুরতর অবস্থায় রয়েছেন।
হাসপাতালের আরএমও মোখলেসুর রহমান জানান, বর্তমানে যারা পজিটিভ হয়ে রেড জোনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের মধ্যে চারজন গুরতর রয়েছেন। তবে করোনা রোগীরা দ্রুত অবস্থা করে ফলে সবসময় অতিরিক্ত নজরে রাখতে হচ্ছে।
বর্তমানে যে ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হচ্ছে এটা খুব বিপদজনক। তিনি আরো জানান, ৭জন চিকিৎসক করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাদের মধ্যে একজন করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে রয়েছেন। ফলে ৬জনকে দিয়ে করোনা ওয়ার্ড চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, খুব ভয়ানক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এ এক কঠিন যুদ্ধ। এ যুদ্ধে সকলের সহযোগীতা চাই। মেহেরপুরে বর্তমানে অ্যান্টিজেন টেস্ট ও জিন এক্সপার্ট রিপোর্ট হচ্ছে। আরটি পিসিআর ল্যাব না থাকায় কুষ্টিয়ায় জট লেগে যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে মেহেরপুরেও আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপন করা প্রয়োজন হয়ে দাড়িয়েছে।