ঘর ভাড়া দিতে না পারায় সিরাজুল ও নার্গিস খাতুন নামের এক দম্পতিকে ঘর থেকে বের করে দেন বাড়ি মালিক। পরে উপায় না পেয়ে কাজলা নদির ধারে শ্মশান ঘাটে সরকারি জমিতে পাট খড়ি দিয়ে খুবড়ি ঘর বানিয়ে থাকতে শুরু করেন এই দম্পতি। সেখানেই এক চোখ নষ্ট অসহায় সিরাজুল ইসলাম চা বিক্রি করে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছিল। ঘটনাটি মেহেরপুর সদর উপজেলার যুগিন্দা গ্রামের। অসহায় ওই দম্পতি একটি ঘর পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন।
আজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেই শ্মশান ঘাটে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। এবং তাৎক্ষনিক শ্মশান ঘাট থেকে নিজ পকেট থেকে গাড়ি ভাড়া দিয়ে তাদের নিয়ে এসে রঘুনাথপুর আশ্রয়নের ১৪৬ নম্বর একটি সেমি পাকা ঘর প্রদান করেন তাদের।
জানা গেছে, সিরাজুল ও নার্গিস দম্পতি মেহেরপুর সদর উপজেলার যুগিন্দা গ্রামের বাসিন্দা। বারাবরই তাদের কোন জমিজায়গা নেই। গাংনী উপজেলার একটি ঘরে মাসিক ২ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে তারা বসবাস করতেন। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তারা দুজনেই বিয়ে করে শশুর বাড়িতে বসবাস করেন। অসহায় দম্পতি রাস্তার ধারে ভ্রাম্যমান চা বিক্রিতা হিসেবে কাজ করে সামান্য কিছু টাকা আয় করেন। যা দিয়ে তাদের সংসার চালানোই দায়। এমতাবস্তায় ঘর ভাড়ার টাকা দিতে না পারায় ঘর মালিক তাদের বের করে দেন।
এ বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার এক চোখ নষ্ট। আরেক চোখে হালকা দেখতে পাই। টুকটাক চা বেচে কোন রকম সংসার চলে। ঘর ভাড়া দেবো কোথায় থেকে। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুক্রিয়া ইউএনও স্যার আমাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন আর রোদ বৃষ্টি আমাদের গায়ে পড়েব না। আমরা পাকা ঘরে থাকবো। সিরাজুলের স্ত্রী নার্গিস খাতুন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সরকারি ঘরটা না পেলে হয়তো আমরা পৃথিবীতে আর বেচে থাকতাম না। কারন এভাবে মাঠে মাঠে রাত কাটিয়ে জীবন চলতে পারে না।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী নাজিব হাসান বলেন, অসহায় ওই দম্পতির বিষয়টি আমাদের নজরে এলে, আমরা ঘটনাস্থলে যায় এবং সেখানে গিয়ে তাদের সাথে সাথে নিয়ে এসে রঘুনাথপুর আশ্রয়নের একটি ঘর তাদের উপহার দেয়া হয়। ইউএনও আরও বলেন, বর্তমান সরকার ভূমিহীনদের বিনামূল্যে জমিসহ ঘর দিচ্ছে। ইতিমধ্যে মেহেরপুরে অনেক অসহায় পরিবার ঘর পেয়েছে। তবে জেলার সব তথ্য হয়তো আমাদের কাছে আসে না। কোন না কোন মাধ্যমে এ ধরনের তথ্য আমাদের কাছে আসলে আমরা অবশ্যই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখি।