সবজি ভান্ডারখ্যাত মেহেরপুরের বাজারে সবজির দামে এখন আগুন। মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন শ্রেণীর মানুষদের সবজি ক্রয় করে খাওয়া এখন দুস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে সবজির খুচরা বাজারে আগুন থাকলেও উৎপাদিত সবজির দাম পাচ্ছে না কৃষকরা। পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে সবজির দামের পার্থক্য কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
মেহেরপুর জেলার সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। আবহাওয়া এবং মাটির গুণাগুণের কারণে প্রায় সব ধরনের সবজি এই এলাকায় আবাদ হয়। কিন্তু উৎপাদিত সবজির সঠিক দাম না পেয়ে হতাশ এখানকার কৃষকরা। তবে পাইকারি বাজার থেকে মাত্র ৪/৫ কিলোমিটার দূরের মেহেরপুরের খুচরা বাজারে সবজির দামের পার্থক্য দেখা যায় কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে। উৎপাদন করে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না কৃষকরা।
গতকাল শুক্রবার গাংনী উপজেলার বামন্দী বাজারে সবজি বিক্রয় দামের আগুন লেগেছে, টমেটো প্রতি কেজি ১২০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পালং শাক প্রতি কেজি ৮০টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, গোল আলু প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, লাল শাক ৩ আটি ২০ টাকা. পুই শাক প্রতি কেজি ২০ টাকা, করল্লা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মাটির তলের আলু প্রতি কেজি ১২০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, পেপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, শিম প্রতি কেজি ১৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, পেয়াজ প্রতি কেজি ৯০ টাকা, রসুন প্রতি কেজি ২৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, কুমড়ার জালি ১ পিচ ৩০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৪০ টাকা, উস্তি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৪০ টাকা, আদা প্রতি কেজি ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শুধু সবজি বাজার নয়, মাছের বাজারেও দাম চড়া। এখন ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। তারপরেও ইলিশ কিনে খাওয়ার সামর্থ নিম্ন আয়ের মানুষদের দুঃস্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে। জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪ শ থেকে ৫ শ টাকা কেজি দরে। এছাড়া আধা কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ৭ শ থেকে ৮ শ ও ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২ শ টাকা কেজি দরে। বড় সাইজের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩ শ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা কেজি দরে। ছোট পোনা বিক্রি হচ্ছে ২শ টাকা কেজি দরে। ছোট সাইজের পাঙ্গাস এবং সিলভার মাছ বিক্রি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। বড় সাইজের সিলভার বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি দরে। অন্যান্য মাছের দামও আকাশ চুম্বি দাম।
গাংনী উপজেলা শহরের আরজ আলী বলেন, বাংলাদেশের ৬০, ভাগ সবজি মেহেরপুর জেলায় উৎপাদন হয় সেইখানে সবজির যদি এত দাম হয় তাহলে সাধারণ মানুষ কিভাবে জীবন যাপন করবে?
ছাতিয়ান গ্রামের মামলত হোসেন বলেন, আমাদের জেলাতে প্রচুর পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। সেই জেলার মানুষ যদি এতো দাম দিয়ে সবজি কিনে খেতে হয়, তাহলে কিভাবে হবে। তিনি আরও বলেন, ৩শ টাকা নিয়ে সবজি বাজার করতে এসেছি। কয়েকটি সবজি কিনে টাকা ফুরিয়ে গেছে। এখন কিভাবে বাজার করবো।
বাওট গ্রামের দিন মজুর রফিকুল ইসলাম বলেন, মুনিস খেটে ৫শ টাকা পেয়েছি। এই টাকা দিয়ে বাজার করবো কিভাবে। সবজি বাজারে গেলেই টাকা ফুরিয়ে যাবে। অন্যান্য বাজার করবো কিভাবে।
এদিকে সবজি ব্যবসায়ী জিয়ারুল ইসলাম বলেন, আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা আড়তে যেভাবে কিনছি সেভাবেই বিক্রি করছি। আমাদেরও তো লাভ থাকতে হবে। এখন আড়তে দাম বেশি। তাই আমরাও বেশি দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। আরেক ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান বলেন, আড়তদারদের ধরলেই ভাল হবে। কারন, দাম ওখান থেকেই বেশি হচ্ছে।
সাহারবাটি গ্রামের সবজি চাষী ইয়ানুর রহমান ও মহিবুল ইসলাম বলেন, আমরা সবজি আড়তে নিয়ে গেলেই দাম পাচ্ছিনে। অথচ, একই সবজি হাটে গিয়ে দাম ৪/৫ গুন বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজার মনিটারিং না থাকার কারনে এভাবে উচ্চমুল্যে সবজি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তারা।
সবজির বাজারে এই উচ্চ মুল্য নিয়ন্ত্রণ করতে স্থানীয় প্রশাসনের বাজার মনিটরিং করা খুব জরুরি বলে মনে করেন ক্রেতারা।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দিকা সেতু বলেন, অতিদ্রুতই বাজার মনিটারিং করা হবে। বাজার মনিটারিং এর সময় অসলগ্ন কিছু পেলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।