মেহেরপুর সদর উপজেলার বিলরুয়াকুলি-রুইমারী খাল পুণঃ খনন কাজ শেষ না হতেই দুই পাড়ের মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ভাটায় । ফলে পাড় ভাংতে শুরু করেছে খালের।
খালটি পুণঃ খননের মাধ্যমে খাল পাড়ের মানুষের সাতার কাটা, গোসল করা থেকে শুরু করে, গৃগস্থালীর সকল কাজ করা হয়ে থাতে খালের পানিতে। দেশীয় মাছ শিকার করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়েও জীবিকা নির্বাহ করছে অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ।
খাল পাড়ের মাটি বিক্রি হলে খালের দুই পাড়ের পানি এসে আবারো খালটি বিলিন হয়ে যেতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
সরকারী সকল নিয়ম নীতি মেনে টেন্ডারের মাধ্যমে এ মাটি বিক্রয় করা হয়েছে বলে জানান মাটি বিক্রেতারা।
মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের তথ্যমতে ৬৪ জেলার অভ্যরন্ত ছোট নদী খাল এবং জলাশয় পুর্ণঃ খনন প্রকল্প (১ম পর্যায়ে) এর আওতায় মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের প্যাকেজ নং-পযঁধ/সবযবৎ -ি১৩ (২০২০-২১) রফ হড়.৫১৪৫৭৪ । ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নাসির উদ্দীন মোল্লা, ৭/১৯ এম এ রহিম রোড, চৌড়হাস কুষ্টিয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি ১ কোটি, ৭২ লক্ষ ১৩ হাজার টাকার চুক্তি মূল্যে কাজ শেষ করে। তবে সিডিউল অনুযায়ী এখনও খালের দুই পাড়ের কৃষি ও বসত ভিটা এলাকার বিভিন্ন স্থানের পানি নিস্কশনের জন্য কিছু কালর্ভাট স্থাপনের কাজ বাকি রয়েছে। তাছাড়াও খালের তিররবর্তী ঘাস ও গাছ রোপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ কাজ শেষ না হতেই যদি খালের দুইপাড়ের মাটি বিক্রি হয়ে যায় তাহলে খালটি ভবিষতে ধসে পড়তে পাড়ে। যার ফলে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। মাটি কাটা শুরু হলে তাৎক্ষনিকভাবে জেলা পানি উন্নয়ন কর্মকর্তা মেহেরপুরকে অবহিত করা হয়। তিনি বলেন, আমি মাটি কাটার অনুমতি দিয়েছি। কোন সমস্যা হলে আমি দেখবো।
খাল পাড়ের মদনা গ্রামের কিশোর আব্দুল্লাহ জানান, আগে এখানে গোসল করতে পারতাম না। খালে নতুন করে মাটি কাটায় আমরা বন্ধুরা মিলে গোসল করি। সাতার কাটি, মাছ ধরি। খুব আনন্দ করি।
খাল পাড়ের বিল্লাল হোসেন জানান, খাল খননের মাধ্যমে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। গৃহপালিত পশুদের গোসল করানো, মাছ পরিবারের সদস্যাদের নিয়ে মাছ ধরে খাওয়া, গরমের সময়ে খালের পাড়ে বসে হাওয়া খাওয়া নানা সুবিধা আমরা ভোগ করি। কিন্তু খনন কৃত মাটি কেটে নিয়ে যেতে চাইলে আমরা বাধা দিই। কিন্তু কোথায় কোথায় তা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছেন আমরা ডিসি অফিস থেকে টেন্ডার নিয়ে মাটি কাটছি।
মাটি কাটার দায়িত্বে নিয়োজিত বিপ্লব হোসেন বলেন, এলাকার কৃষকরা অভিযোগ করেন, বর্ষা মৌসুমে হাজার হাজার বিঘা জমির ক্ষেত পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তারা ডিসি অফিসে অভিযোগ করলে ডিসি অফিস টেন্ডারের মাধ্যমে এ মাটি বিক্রি করেছে। আমরা সরকারের সকল নিয়মনীতি মেনে খালের পাড়ের মাটি সরাচ্ছি।
ঠিকাদার মোঃ নাসির উদ্দীন মোল্লা জানান, মাটির কাজ শেষ করিয়াছি। এখন শুধু ঘাস, গাছ লাগানো ও ইনলেট তৈরী করা বাকি আছে এবং ট্রাস্ক ফোর্স কর্তৃক মাটির পরিমাপও হয় নাই। এমতা অবস্থায় আমি সরেজমিনে গেলে দেখতে পায় খালের দুপাড়ের মাটি স্থানীয় ইটভাটাই প্রায় ২০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। আমার কাজ শেষ না হতেই মাটি বিক্রি কোনভাবে কাম্য নয়। এটা করলে খালের দুপাড় ভেঙ্গে পরবে। এটা ভেবে মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করেছি। মাটি যদি বিক্রয় করিতে হয়, তাহলে আমার খালের পরিমাপ নিয়ে চুড়ান্ত বিল দিয়ে খালটি বুঝিয়ে নিয়ে সরকারী বিধি মোতাবেক টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয় করার অনুরোধ জানাচ্ছি। তা না হলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব।
মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহীনুজ্জামান জানান, সরকারী সকল নিয়ম মেনে আমরা মাটি বিক্রয় করেছি। এখানে কোন প্রকার অনিয়ম করা হয়নি। মেহেরপুর জেলার প্রশাসনসহ সবাই সম্মিলিত ভাবে এ সিদ্ধান্ত। এলাকার অনেকে জানে না। আবার অনেকে কৃষি জমি বাচাঁতে আমাদের নিকট অভিযোগ করেছেন। যার ফলে সরকারী নিয়ম মেনে মাটি সরানো হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বলেন, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী মাটি অপসরাণ করা হচ্ছে।