মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া নওদাপাড়া এলাকায় সিঁড়ি ঘরের আড়া থেকে গৃহবধু নাজমা খাতুনের ঝুলন্তা মরদেহ উদ্ধার করেছে সদর থানা পুলিশ।
২ সন্তানের জননী নাজমা খাতুন (৪৬) সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়ার গ্রামের হাফিজুল ইসলাম (তেলা)র স্ত্রী ও একই উপজেলার আলমপুর গ্রামের নাজিম উদ্দীনের মেয়ে। এই ঘটনার পর থেকেই স্বামী হাফিজুল ইসলামসহ তার বাড়ির লোকজন পলাতক রয়েছে।
আজ শনিবার (৫ আগষ্ট) ভোরবেলায় তার ঝুলন্ত মরদেহ তার বাড়ির সিঁড়ি ঘরের আড়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এই ঘটনায় নাজমীন খাতুনের বড় ভাই মনিরুজ্জামান বাদি হয়ে মেহেরপুর সদর থানায় হত্যার অভিযোগ এনে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হাফিজুল ইসলামের প্রতিবেশী সার ব্যবসায়ী মিয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রায় দিনই হাফিজুল ইসলাম তার স্ত্রী নাজমীনকে মারধর করতো। এই ঘটনার আগের দিনে তার স্ত্রীকে বাঁশের লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করেছে বলে শুনতে পেরেছি। এর আগে কয়েক বার সে বাবার বাড়িতেও চলে গিয়েছিল। গ্রামের লোকজন স্ত্রীকে বুঝিয়ে বাবার বাড়ি থেকে আবার স্বামীর বাড়িতে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী রেশেন্নারা খাতুন জানান, এই বাড়িতে গতকাল কোনো মারামারি হয়নি। পরশুদিন মেয়েটাকে মারধর করেছিলো তার স্বামী হাফিজুল ইসলাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী নারী জানান, এতো পরিমান মারে বউটাকে। যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তিনি বলেন আমাদেরও স্বামী সংসার আছে। এভাবে মারধর চোখে দেখা যায়না।
নিহত নাজমার ফুঁফু আসমা খাতুন বলেন, ২০ বছর আগে নাজমার বিয়ে হয়েছে। তার পর থেকেই তার স্বামী কারণে অকারনে নাজমার উপর অমানুষিক নির্যাতন করে। এর আগে একবার মাথায় আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেল। মেরে একবার হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। তারপরেও নাজমা কিছু বলতে দেইনি। বলেছে, আমার দুটো ছেলে মেয়ে আছে ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে সংসার করবো। আমাদের মেয়েটাকে পাষন্ড হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। আমরা এই হত্যা মামলার সঠিক বিচার চাই। লাশের বদলে লাশ চাই।
নিহত নাজমার খালাতো বোন মমতাজ খাতুন বলেন, আমরা গিয়ে লাশ ঝুলতে দেখিনি। আমরা গিয়ে দেখি লাশ মাটিতে শোয়ানো রয়েছে। তার শোয়ার ঘরের মধ্যে দেয়ালে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ, একটি রক্ত মাখা লুঙ্গি পড়ে আছে। যেখানে গলায় ফাঁস দেওয়ার কথা বলছে। সেখানে সামান্য উচু স্থান। ওখান থেকে কোনোভাবে ফাঁশ দেওয়া সম্ভব নয়। কারন পা বেধে যাবে। আমাদের ধারনা তাকে হত্যা করে লাশ ঝোলানো হয়েছে।
চাচাত ভাই নাইমুর রহমান বলেন, আমাদের বোন মারা গেছে। ওই পরিবার থেকে আমাদের ফোন দেওয়ার কথা। অথচ, প্রতিবেশীরা আমাদের বোন মরার খবর দিয়েছেন। ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই তারা লাশ নিচে নামিয়ে রেখেছে। ঘরের যে সিঁড়ি বেয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রতিটি সিঁড়িতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যাচ্ছে। ঘরের মধ্যে দেওয়ালের সাথে রক্তের প্রচুর ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে।
আমাদের ধারনা আমাদের বোনকে পাষন্ড স্বামী নির্যাতনের পর হত্যা করে সিড়ি ঘরের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমাদের বোনকে যেভাবে মেরেছে আমরা তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমাদের দাবী তাকে ফাঁসির দড়িয়ে ঝুলিয়ে এই হত্যকান্ডের চরম বিচার হওয়া উচিৎ।
মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা মরদেহ উদ্ধার করে লাশের সুরোতহাল রিপোর্ট করে মর্গে পাঠিয়েছি ময়না তদন্তের জন্য। ময়না তদন্ত রিপোর্ট এলেই বিষয়টি পরিস্কার হব।