মেহেরপুর জেলার গ্রামীণ সড়ক গুলো এখন ইটভাটার মাটিবহণকারী ট্রাক্টর, খড়ি বহণকারী বড় বড় ট্রাক, বালি বহণকারী ড্রাম ট্রাক আর ইট বহণকারী লাটা হাম্বা ও ট্রলির দখলে। ফলে গ্রামীণ এসব রাস্তাগুলো দিন দিন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বেপরোয়া ভাবে ইটভাটার মাটি ও ইট বহনকারী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে রাস্তাগুলো যেমন খানা-খন্দের সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি, সামান্য বৃষ্টিপাত এমনকি ঘন কুয়াশা হলেও কর্দমাক্ত হয়ে পড়ছেৃ রাস্তাগুলো। বেপরোয়াভাবে এই যানবাহনের কবলে পড়ে মাঝে মধ্যেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। আর সেখান থেকে অনেকে মুত্যুবরণ পঙ্গুত্ব বেড়েই চলছে।
মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার এলজিইডির গ্রামীণ রাস্তাগুলোর একই অবস্থা।
এলাকার স্যোসাল মিডিয়া থেকে শুরু করে স্থানীয়, জাতীয় দৈনিক বা অনলাইন মিডিয়াগুলোতে ব্যাপকভাবে লেখা লেখি হলেও জেলা প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের কোনো নজরও পড়ছেনা।
অথচ, সরকার এসব ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তাগুলো মেরামতের জন্য প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকা ব্যায় করছে। রাস্তা মেরামতের কিছুদিন পরই আবারও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গাংনী উপজেলার গাংনী-ধানখোলা হয়ে চান্দামারী রাস্তা, পূর্বমালশাদহ মালশাদহ-হাড়িয়াদহ রাস্তা, পশ্চিম মালশাদহ-তেঁতুলবাড়িয়া রাস্তা, হিন্দা-তেঁতুলবাড়িয়া রাস্তা, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের জোড়পুকুরিয়া থেকে বামন্দী পর্যন্ত, বামন্দী-মুন্দা রাস্তা, বাওট-মহম্মদপুর রাস্তা, হিজলবাড়িয়া-সাহারবাটি রাস্তা, বাঁশবাড়িয়া-চিৎলা রাস্তা, বামন্দী-মটমুড়া হয়ে বেতবাড়িয়া রাস্তা, সদর উপজেলার উজুলপুর-কুলবাড়িয়া রাস্তা, চাঁদপুর-ফতেপুর রাস্তা, গোভিপুর-হরিরামপুর, যাদবপুর বাড়িবাকা রাস্তা, মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালি-ভবানীপুর মহাজনপুর সড়কগুলো ইটভাটার দখলে থাকায় এসব রাস্তাগুলো এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন গ্রামের জনসাধারণের চলাচলের জন্য উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের পাকা হেয়ারিং বন্ড ও কাঁচা রাস্তা গুলোর একই অবস্থা।
এলজিইডির গ্রামীণ রাস্তাগুলো সরকারী ভাবে ধারণ ক্ষমতা ১৫টনের বেশী বোঝাই পরিবহন করা নিষেধ থাকলেও কেউ তা মানেনা ইটভাটা মালিকগুলো।
গাংনী উপজেলার হিজলবাড়িয়া মৌজায় অবস্থিত এসএইচবিসি (ইট ভাটা) র ম্যানেজার সেকেন্দার আলী এলজিইডির রাস্তার উপর দিয়ে সব সময় ট্রাক্টর দিয়ে মাটি ও ইট পরিবহন করায় জন সাধারনের চলাচলের ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে স্বীকার করেছেন। তবে তিনি জানান, সড়ক দিয়ে সরকারী অফিস যদি মাটি আনা নেয়া বন্ধ করে দেই তাহলে আমরা ইটভাটাও বন্ধ করে দেবো। তিনি দাম্ভিকতার সাখে বলেন আমরা সরকারকে ভ্যাট ট্যাক্্র দিচ্ছি। আর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরও ম্যানেজ করতে হয়। আপনারা (সাংবাদিকরাও) আসবেন ব্যবস্থা করে দেবো।তিনি আরও বলেছেন, আইন আইনের যায়গায় থাকবে, আর ইট ভাটা ইট ভাটার স্থানেই থাকবে। কারোর কিছু করার নেই।
ভাটা মালিক (মা ব্রিকস) ইয়ারুল ইসলাম ও রতন আলী বলেন, যদিও সরকারী ভাবে নিষেধ আছে তারপরও করার কিছু নেই আমাদেরকেও তো চলতে হবে।
মালশাদহ হিজলবাড়িয়া হয়ে পলাশিপাড়া পর্যন্ত ঝুকিপূর্ণ এ রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক, ইজিবাইক, আলগামন, সাইকেল, মোটরসাইকেল ও ভ্যানসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন চলাচল করে থাকে।প্রতিদিন হাজার হাজার টণ মাটি বহণ করায় ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
মটমুড়া ইউনিয়নের বাওট বাজার হইতে মটমুড়া হয়ে মোহম্মদপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ৭-৮কিঃ মিঃ পাকা রাস্তার দু পাশে প্রায় ৫ টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার কারণে পিচ ও খোয়া উঠে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে কর্দমাক্ত ও ধুলো-বালিতে পরিণত হয়েছে।
গাংনী উপজেলার গাংনী থানার মোড় হতে ধানখোলা পর্যন্ত সড়কে আধাকিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে তিনটি ইটভাটা। শুস্ক মৌসুমে রাস্তাটিতে ধুলোই আর সামান্য বৃষ্টি হলে কাদাই চলাচলের অযোগ্য থাকে সারা বছর জুড়ে। অথচ, এখান থেকে গাংনী উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় মাত্র এক কিলোমিটার দুরে।একই অবস্থা পূর্ব মালশাদহ থেকে হাড়িয়াদহ পর্যন্ত রাস্তায় মাত্র কয়েক শ গজের মধ্যে রয়েছে পাশাপাশি দুটি ইটভাটা। এরাস্তাটিরও বেহাল দশা থাকে বারোমাস।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মেহেরপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান জানান, জেলার ৩৬২ কি.মি. পাকা ও কাঁচা সড়ক রয়েছে। এসব সড়কে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী রাস্তা গুলোতে ১৫টন এর বেশী লোড দেওয়া নিষেধ থাকলেও কেউ তা মানছেনা। জেলার এসব রাস্তাগুলো মেরামতের জন্য কোটি টাকা ব্যায় করা হয়েছে। এবছরও এসব রাস্তাগুলো মারাত্বক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। রাস্তাগুলো মেরামতের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলেই কাজ শুরু করা হবে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বলেছেন, যেসব রাস্তাগুলো বেশী খারাপ অবস্থায় আছে সেসব রাস্তাগুলোর ব্যাপারে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।তিনি বলেছেন, প্রশাসনিকভাবেই এসব ইটভাটা মালিকদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়া রাস্তাগুলোর ব্যাপারে সঠিকভাবে তথ্য দেওয়ার জন্যও আহবান জানান।