মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় ঝন্টু হোসেন (৩৫) নামের এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ ঊঠেছে।
শনিবার দুপুরে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ঝন্টু মেহেরপুর শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার দিন মোহাম্মদের ছেলে। সে ইউনিলিভার কোম্পানীর এর বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এদিকে, এ ঘটনার পর থেকে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে উত্তেজনা সৃষ্টি করে পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহতের স্বজনরা জানায়, জরুরী বিভাগে প্রায় আধা ঘন্টা রেখে দেওয়ার পর চিকিৎসা শুরু করা হয় ঝন্টুর। তারপর গ্যাসের ইনজেকশন দেওয়ার ৩মিনিটের মাথায় তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
নিহত ঝন্টুর ছোট ভাই মন্টু বলেন, প্রতিদিনের মত শনিবার সে কোম্পানীর কাজে বের হয়। মেহেরপুর সদর উপজেলার রাইপুর গ্রামে পৌঁছালে ঝন্টু মাথাঘুরে মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়াদুদ রহমানকে বার বার অনুরোধ করেও সে ব্যবস্থা নিতে গাফিলতি করে। বার বার বলাতে সে আমাদের সাথে খারাপ আচরন করে বসে থাকতে বলে। এরপর চিকিৎসা শুরু হলে প্রথমে তাকে একটা ইনজেকশন দেওয়া হয়। এরপর ৩ মিনিটের মাথায় সে কালো বর্ণ ধারণ করে মৃত্যুর কলে ঢলে পড়ে ঝন্টু।
স্বজনরা আরো অভিযোগ করেন, ঝন্টুকে হাসপাতালের একজন শিক্ষানবীস সেবিকা তার শরীরে ইনজেকশন দেয়। মৃত্যুর পরেই সেই সেবিকা হাসপাতাল থেকে আত্মগোপন করে।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগী মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনরা হাসপাতালে উত্তেজনা সৃষ্টি করলে তোপের মুখে পড়ে চিকিৎসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) এহসানুল কবির প্রথমে আসতে না চাইলেও পরবর্তিতে তোপের মুখে তিনি আসতে বাধ্য হন। আরএমও আসার পর স্বজনরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সদর থানার ওসি শাহ দারা খানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল হাসপাতালে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঝন্টুকে চিকিৎসা দেওয়া জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ওয়াদুদ রহমান জানান, আমরা রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে গ্যাসের ইনজেকশন সাথে আরও কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। তার হার্টের ইসিজি পরীক্ষা নরমাল পাওয়া যায়। সে অনুযায়ি তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তেমন একটা দেরি হয়নি।
হাসপাতালের আরএমও এসানুল কবির বলেন, প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ভর্তি করানো হয়েছে। তার হার্টের অবস্থা ভালো ছিল। আমাদের ধারনা তার ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যু হতে পারে। ষ্ট্রোকের রোগীকে গ্যাসের ইনজেকশন দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। তিনি আরো জানান, চিকিৎসায় গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক একটি তদন্ত কমিটি করবেন বলে জানতে পেরেছি।
হাসাপাতেলর ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. তাপস কুমার বলেন, রোগীটি ভুল চিকিৎসায় নাকি অন্য কারনে মারা গেলো এটা ফরেন্সিক রিপোর্ট দেখার পর বলতে পারবো। তবে রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ অনুযায়ী গ্যাসের ইনজেকশন দেওয়ার পর সে মারা গিয়েছে কিনা আমরা ক্ষতিয়ে দেখছি।
হাসপাতালের শিক্ষানবিশ কাউকে দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের কোন এখতিয়ার নেই। তারা সিনিয়র স্টাফদের সাহায্য করবে।
মেহেরপুর সদর থানার ওসি শাহ দারা খান বলেন, রোগী মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে হাসাপতাল কর্তৃপক্ষ।
নিজস্ব প্রতিবেদক