দীর্ঘ সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সম্মেলনে বর্তমান জনপ্রশাসন প্রতি মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন দোদুল সভাপতি ও এম এ খালেক সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছিলেন।
আগামীকাল সোমবার (১৬ মে ) দীর্ঘ সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হবে মেহেরপুর জেলা আওয়মীলীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল। এই ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। ইতোমধ্যে উপজেলা ও ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন শেষ হয়েছে। জেলা সম্মেলনকে ঘিরে একদিকে মেহেরপুর জেলায় নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। নেতৃত্বের সমর্থনে ব্যানার-ফেস্টুন, বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে শহর জুড়ে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পদ পদবীর সমর্থনে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। বিভিন্ন নেতার অনুসারীরাও নিজ নিজ নেতার সমর্থনে ফেসবুকে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। গোটা জেলার নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। দলীয় প্রার্থী ছাড়াও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গভীর আগ্রহে সম্মেলনকে নজরদারী করছেন। সম্মেলনে বর্তমান সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে একাধিক নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। এবারের সম্মেলনে কে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হবেন এ নিয়ে তৃণমূল থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা চলছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
এছাড়া উপস্থিত থাকবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাহাউদ্দীন নাসিম এমপি, আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, পারভীন সুলতানা ঝর্ণা এমপি, কল্পনা এমপিসহ সহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
কাউন্সিলে ভার্স্যুয়ালে যুক্ত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বর্তমান জেলা কমিটির নেতারা বলেছেন, আওয়ামীলীগের নেতৃত্বের প্রতিযোগীতা থাকলেও কোনো গ্রপিং নেই। ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী কার্যকরী কমিটি উপহার দিতে চান। এজন্য সম্মেলনকে ঘীরে নানা কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে বর্তমান কমিটির সভাপতি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন দোদলুল এমপি হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবেই দেখছেন অনেকে। এছাড়া জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মান্নানের নাম শোনা গেছে।
সভাপতি প্রার্থী মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটির বিগত দিনের সাংগাঠনিক কার্যক্রমের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, বর্তমান সভাপতি মন্ত্রীর দায়ীত্ব পালন করেছেন ঠিকমত। সাংগাঠনিক দায়ীত্ব পালন করেননি কখনো। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কোনো সাংগাঠনিক কার্যক্রম দলীয় নেতা কর্মীদের চোখে পড়েনি বিগত দিনে। দলীয় কার্যক্রমের কোনো নিয়মনীতিরও তোয়াক্কা করেননি বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী আরও অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন পরে জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল হতে যাচ্ছে। এত বড় একটা কর্মসূচী। অথচ, এই কাউন্সিলকে সফল করার জন্য এখন পর্যন্ত জেলা কমিটির পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তুতি সভা করেনি। কাউন্সিলকে সফল করতে বিভিন্ন উপকমিটি যেমন, খাদ্য উপ কমিটি, সংবর্ধণা উপকমিটিসহ আরও কয়েকটি উপকমিটি করার কথা। অথচ, জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে কোনো ধরণের প্রস্তুতিই নেয়া হয়নি। তারপরেও কেন্দ্রীয় নেতারা আসছেন। তাদের বিষয়টি মাথায় রেখে এই ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলকে কালারফুল ও সফল করার জন্য আমরা নিজেরাই নানা ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বলেন, আমি জেলা আওয়ামীলীগের দায়ীত্ব পালন করার সময় দলের সকল নিয়মনীতি পালন করে শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছি। এবার আমি মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের দায়ীত্ব নিয়ে দেশ নেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবো।
ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের সভাপতি প্রার্থী মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেছেন, মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগ একটি দূর্বল ও ব্যর্থ কমিটি ছিল। বিগত দিনে কমিটির কোনো কার্যক্রম চোখে মেলেনি। এছাড়া কমিটিতে প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের ১৭ জন এবং বিএনপি জামায়াতের ৬ জন লোককে অন্তর্ভুক্ত করেছেন তিনি। আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক কোনো কার্যক্রমও দৃশ্যমান ছিলনা। সেই ২০০৩ সালের কমিটির লোকজনকে নিয়েই আবার হতে যাচ্ছে জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল। কে সভাপতি ও সম্পাদক হবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ দুটি মূলত আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার আস্থার উপর নির্ভর করে থাকে। নেত্রীর কাছে যারা আস্থাভাজন, তাদেরকেই জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়ীত্ব দেবেন তিনি।এক্ষেত্রে আমার সাংগাঠনিক কার্যক্রমের বিবেচনা করে আগামীতে মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগকে গতিশীল করতে আমাকে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়ীত্ব দেবেন বলে আমি মনে করি।
সাবেক মহাজনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাউর রহমান নান্নু বলেছেন, জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটি দলীয় কোন্দলকে জিইয়ে রেখে দলের সাংগাঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে দিয়েছে। সভাপতি ও সম্পাদক বিরোধী পক্ষকে দমণ পিড়নের চেষ্টা চালিয়েছে। বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচন, মহাজনপুর, বাগোয়ান ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীদের বিপরীতে ভোট করেছেন প্রতিমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, তার বিরোধী হওয়ায় মেহেরপুর পৌর সভার উন্নয়নও থমকে দিয়েছেন তিনি।
জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, প্রতিযোগীতা থাকবে। প্রতিহিংসা নই। একটি গ্রহণযোগ্য সম্মেলন উপহার দেবে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এটা সকলে প্রত্যাশা করছেন। তিনি আরও বলেন, পদের জন্য বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে মতামত ব্যক্ত করছেন। দলের সভানেত্রী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটিই হবে।
বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম,এ খালেক ছাড়াও এপদে প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আসলাম শিহির ও মেহেরপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য পত্নী লাইলা আরজুমান বানু।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক বলেছেন, সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন শেষ হয়েছে। আগামী ১৬ মে জেলা আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলকে ঘিরে নেতা কর্মীদের মাঝে উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আমাদের মাঝে প্রতিযোগীতা রয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিহিংসা নেই। আমরা সবাই একত্রিত হয়ে সম্মেলনকে সফল করতে কাজ করে যাচ্ছি। সম্মেলনে জনসংখ্যার ভিত্তিতে কাউন্সিলর নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান এম এ খালেক।
জেলা কমিটি কিভাবে গঠণ করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কমিটি ভোটের মাধ্যমে হবে নাকি সমঝোতার ভিত্তিতে হবে তা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত জানাবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামীলীগের কয়েক জন নেতা জানান, মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের উপজেলা, পৌর, ও বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটির কাউন্সিলে প্রতিমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করতে পারলেও এবার জেলা কমিটির কাউন্সিলে করবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। সেক্ষেত্রে জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন সভাপতি ও সম্পাদক। আসতে পারেন নতুন মুখ।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম বলেন, বিগত সাত বছরে যে কমিটি মেহেরপুর জেলাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের রাজনৈতিক কোনো যোগ্যতা ছিলন। তারা মাত্র দুটি সভা করেছে। কিন্তু সেখানে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ২০১৪ সালে দুটি উপজেলার কমিটির কাউন্সিল করেছে। তাতেও প্রচুর অভিযোগ। ২০০৩ সালের সেই উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি দিয়ে ঠেলাগুজা করে এই কাউন্সিল করতে চাচ্ছেন বর্তমান কমিটি। জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি তিনি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দায়ীত্ব পালন নিয়ে ব্যাস্ত। কোনো ধরণের সাংগাঠনিক কার্যক্রম না থাকায় জেলা আওয়ামীলীগ স্থবির হয়ে পড়েছে। তারা সরকারে থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করার কথা ভেবেছে। দলের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবেনি। তাই দলকে সুসংগঠিত করার লক্ষে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা ও অসম্প্রদায়ীক সমাজ গড়তে আমরা যারা ছাত্রলীগ করতাম আবারও মাঠে নেমেছি। নেতাকর্মী, কাউন্সিলর ও কেন্দ্রীয় নেতারা চাইলে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হতে চাই আমি। তিনি আরও বলেন বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের স্বজনপ্রীতি এবং আত্মীয়করণের ফলে দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী বাদ পড়ে যাওয়ায় বর্তমান কমিটি একটি দূর্বল কমিটিতে পরিণত হয়েছে। আগামী দিনের যে চ্যলেঞ্জ ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্য শেখ হাসিনা আজকে দেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এজন্য একটি শক্তিশালী সংগঠণ প্রয়োজন। মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী সংগঠন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেবো এই আশা ব্যক্ত করছি।