দীর্ঘ ১২ বছর মেহেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন নেই। বেশ কয়েকবার প্রস্তুতি নেয়া হলেও তা সম্ভব হয়নি। শেষবার ২০১৭ ও ২০২০ সালে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত মামলা জটিলতায় সেটাও ভেস্তে গেছে। দীর্ঘদিন খেলাধুলা না থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে জেলা ক্রীড়াঙ্গন।
১২ বছর ধরে সরকারি কর্তাদের দিয়েই চলছে মেহেরপুর ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম। ফলে ধীর ধীরে গতি হারিয়ে ফেলছে মেহেরপুর জেলার ক্রীড়াক্ষেত্র। যদিও চলছে খেলোয়াড়দের অনুশীলন। তবে, একটি সূত্রের দাবী এই ক্রীড়া ফেডারেশনে নির্বাচিত কমিটি না আসার পেছনে দায়ী সংগঠকরা।
নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করলেই নির্বাচনকে সামনে রেখে অ্যাডহক কমিটির লোকজন দৌড়ঝাপ শুরু করে। খেলার উন্নয়নে কোনো কার্যক্রম দেখা মেলেনা।
মেহেরপুর ক্রীড়া চক্রের শেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০০৮ সালে। তারপর ২০১২ সালে নির্বাচন হওয়ায় কথা থাকলেও সেটা আর হয়নি। শেষ নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সালাহ উদ্দীন আহমেদ আবলু। বিভিন্ন সময়ে বরাদ্দকৃত অর্থ তছনছ করার অভিযোগ উঠলে সালাহ উদ্দীন আহমেদ আবলুকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কালো তালিকা করে তাকে বাদ দিয়ে নির্বাচন দিতে গেলে সে মামলা করে। সেই মামলার অযুহাতে আটকে রয়েছে নির্বাচন।
একটি সূত্র জানায়, জেলা ক্রীড়া সংস্থার মোট সদস্য সংখ্যা ১০৯ জন। তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দীন আহমেদ আবলুকে বাদ দিয়ে ১০৮ সদস্যের নাম ঘোষণা করে প্রশাসন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আবলু।
পরে তাকে বাদ রেখে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠণ করে। আগের ১০৮ সদস্যের তালিকা বাদ রেখে পরে ৬৬ সদস্যের একটি ভোটার তালিকা তৈরী করে প্রশাসন। এই ১৫ সদস্যের এ্যাডহক কমিটির বিরুদ্ধে মামলা করেন আবলু।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন সংগঠক বলেন, সরকারিভাবে সেসব খেলাধুলা হওয়ার কথা থাকলেও কোনোরকম নয় ছয় করে কিছু খেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে, প্রায় ৬ বছর যাবৎ আয়োজন করা হয়নি ক্রিকেটলীগ। এছাড়া স্থানীয়ভাবে খেলাধুলার আয়োজন করার কথা থাকলেও কমিটির কারণে সেই খেলাগুলো করানো হয়না। শহরের ইয়োলো ক্রীড়া চক্র, ব্রাইট স্টার ক্রীড়া চক্র ও ক্লাসিক ক্রিকেট টীমের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, মেহেরপুর থেকে সব ধরণের খেলা ধুলা প্রায় উঠে গেছে। মেহেরপুরে মামলা জটের কারণে, ক্রীড়া পরিষদের নির্বাচন হয়না। জেলার একজন প্রতিমন্ত্রী থাকলেও তার কোনো ভূমিকাও নিতে দেখা যায়নি। সরকারি আমলারা তাদের নিজের মত করে চালাচ্ছে ক্রীড়া সংস্থাটি।
গতকাল বিকাল পর্যন্ত মেহেরপুর স্টেডিয়ামে থাকলেও কোনো খেলোওয়ারের দেখা মেলেনি। শুধুমাত্র অফিস সহায়ক আসাদুল ইসলাম স্বপনকে পাওয়া গেছে। অফিস পাহারা দিচ্ছিলেন তিনি।
আসাদুল ইসলাম স্বপন বলেন, আমাকে যেভাবে চালায় সেভাবেই চলতে হবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন না হওয়াতে আমাদেরও সমস্যা। কারণ, কোনো সমস্যার কথা সরকারি কর্মকর্তাদের সব সময় বলা সম্ভব হয়না। কিন্তু ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদককে বলা সম্ভব হয়।
মেহেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্য ও মেহেরপুর পৌর সভার প্যানেল মেয়র শাহীনুর রহমান রিটন বলেন, প্রায় ১২ বছরের কাছা কাছি মেহেরপুর ক্রীড়া সংস্থা ক্রিকেট লীগের কোনো আয়োজন করতে পারেনি। এছাড়া কমিটির নির্বাচনও প্রায় ১২ বছর হয়নি। একটা অবৈধ কমিটি দিয়ে চলছে ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম। আমি মনে করি রাজনৈতিক কারণেই ১২ বছর যাবৎ কমিটির নির্বাচন হয়নি। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, সাধারণ সম্পাদকের অর্থনৈতিক কেলেংকারির জন্যই যদি ১২ বছর যাবৎ কমিটি গঠণ করা সম্ভব না হয় তাহলে বেআইনী কমিটি দিয়ে কিভাবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাটি ভরাট, গ্যালারী তৈরী, রং করণ ও মার্কেট নির্মাণ হয়েছে। এই কমিটির এখতিয়ার আছে কিনা জানতে চান তিনি।
শাহিনুর রহমান রিটন আরো বলেন, জেলা প্রশাসক এবিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারেন। কমিটি না থাকার কারণে মেহেরপুর জেলাবাসি বিভিন্ন ক্রীড়া থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন।
মেহেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা সব সময় সচল রাখা উচিৎ। কারন, ক্রীড়াঙ্গণের মডেল রোল প্লে করে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। জেলা ক্রীড়া সংস্থা সচল করতে সব ধরণের ব্যবস্থা করা হবে।