মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) স্বদেশ কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়মসহ একাধিক অভিযোগ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন সাধারণ গ্রাহক ও কর্মচারীরা।
অভিযোগের একটি অনুলিপি মেহেরপুর প্রতিদিন কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযোগকারীদের অভিযোগের কিছুটা সত্যাতা পাওয়া গেছে। মেহেরপুর প্রতিদিন এ সকল অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। যেগুলো পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হবে।
অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, স্বদেশ কুমার ঘোষ মাগুরা পল্লী বিদ্যুতে থাকাকালীন আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম শেখরের আশ্রয় এবং প্রশ্রয়ে মাগুরাতে তিনি ত্রাসের রাজত্ব করেছেন এবং মেহেরপুরে এসে তৎকালীন জনপ্রশাসন মন্ত্রীর সাথে তাল মিলিয়ে দুর্নীতির রাজত্ব করেছেন।
বর্তমানে তিনি বিভিন্ন মিটিং মিছিলে বর্তমান সরকারের সমালোচনা করছেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের গুণগান করছেন যার প্রমাণ মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সকল অফিসাররা। তথাকথিত পবিস-আরইবি আন্দোলনের সময় তিনি চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর ডিসি অফিসে দলবল নিয়ে স্মারকলিপি দেন এবং আরইবির বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্বুদ্ধ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার সাধারণ চাষীদের নিকট হতে দুর্নীতিবাজ স্বদেশ কুমার ঘোষ গত চার মাসে অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগকারীরা উল্লেখ করেছেন। বামুন্দি অফিস এবং গাংনী অফিসের মাধ্যমে বিনামূল্যে চাষীদের ট্রান্সফরমার দিয়ে ওই অর্থ তিনি নিজে গ্রহণ করেছেন।
এজিএম জেরিন, পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদার তাজুল ও মোজাম্মেলের মাধ্যমে জিএম সাধারণ কৃষকের মাঝে থেকে টাকা নিতেন। এজিএম জেরিনের অপকর্মের শেষ নেই তারপরেও তাকে ইএমসি দপ্তরে রেখে জিএম সাহেব দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইতিপূর্বে তাঁর বিরুদ্ধে আরইবিতে একাধিকবার অভিযোগ গেলেও জিএম তাঁর প্রভাব খাটিয়ে ও তদন্ত কমিটিতে ভয় দেখিয়ে সঠিকভাবে তদন্ত করতে দেননি।
গত চার মাসে বামুন্দি অফিসে ৮৫টি ট্রান্সফরমার বিনামূল্যে কৃষকের মাঝে দিলেও প্রতিটি ট্রান্সফরমার হতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা করে এজিএম হানিফ স্যার এবং জিএম স্যার আত্মসাৎ করেছে। এজিএম হানিফ স্যার চাকরি জীবনে দুর্নীতির কারণে এর আগেও শাস্তি প্রাপ্ত হয়েছে দিনাজপুর সমিতিতে আর স্বদেশ কুমার প্রতিটি সমিতিতেই দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন।
বর্তমানে ঠিকাদার তাজুল ও মোজাম্মেল, এজিএম জেরিন ও জিএম স্যার মিলে গ্রাহকের নিকট হতে অবৈধভাবে অর্থ নিয়ে অনুমোদন ব্যতী রেখে লাইন নির্মান করছে। এতে সহযোগীতা করছেন গাংনী অফিসের ডিজিএম। তিনি বর্তমানে ঢাকা পবিসে বদলী হয়েছেন।
প্রতিটি অফিসে গ্রাহক ট্রান্সফরমার ক্রয় না করলে জামানাতের টাকা নেওয়া নিষেধ থাকলেও গাংনী ও বামুন্দি অফিসের জন্য তা ছিল ব্যতিক্রম। এজিএম জেরিন এই অপকর্মগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন।
সমিতি স্টোর হতে বিনামূল্যে কাট আওট সরবরাহ করা হলেও ঠিকাদারের মাধ্যমে প্রতিটি কাট আওট-এর জন্য কৃষকের কাছ থেকে ৫হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। এই টাকার ভাগ পায় এজিএম জেরিন ও জিএম।
শিল্প গ্রাহক এর ক্ষেত্রে টাকা দিতে গ্রাহক অস্বীকৃতি জানালে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বছরের পর বছর আবেদন পেন্ডিং রাখা হয় জিএম এর নির্দেশে। অথচ টাকার বিনিময়ে অনুমোদন ছাড়াই সংযোগ হচ্ছে।
সেচ নীতিমালা না মেনে সমিতিতে ট্রান্সফরমারের ঘাটতি থাকলেও টাকার বিনিময়ে ট্রান্সফরমার সরবরাহ, গাংনী জোনাল অফিসের আওতায় সেচ নীতিমালা না মেনে টাকার বিনিময়ে কমান্ডিং এরিয়ার মধ্যে সংযোগ প্রাদান করেন।
সমিতির রেস্ট হাউসে বসে মদ ও মেয়ে নিয়ে অসভ্যতা করার অভিযোগও উঠেছে জিএম এর বিরুদ্ধে। এ কাজে সহযোগিতা করেন দুই এজিএম।
মিটার ও সার্ভিস তাঁর আরইবি হতে সাপ্লাই করলেও সংশ্লিষ্ট এজিএম টাকার বিনিময়ে কাট আওট, সার্ভিস তাঁর, মিটার দিয়ে থাকেন।
সমিতির নতুন সভাপতি একজন আওয়ামী লীগের দোসর হওয়ার পরও পুনরায় তাকেই পরিচালক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মেহেরপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মোজাহিদুল ইসলাম মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও গত মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিলে তার নাম রেখে দিয়েছিলেন জিএম। এছাড়া তিনি যোগসাজশ করে যুবলীগ নেতা পেরেশানের কাজিনকে পুনরায় সভাপতি করেছেন। যার মাধ্যমে তিনি পুরোনাদের দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎকে চালানো চেষ্টা করছেন। এছাড়া কৃষক ও সাধারণ গ্রাহকদের যে অভিযোগ আছে তা সুষ্ঠ তদন্ত করলে সত্যতা পাওয়া যাবে তিনি মন্তব্য করেন।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) স্বদেশ কুমার ঘোষ মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন আরইবি নিয়ণÍ্রণ করেন। এখানে আমরা শুধু দাপ্তরিক কাজ করি। তবে সরকারের নির্দেশনায় সারাদেশেও কোথাও নির্বাচন না হওয়ায় পুনরায় পুরোনা কয়েকজন সদস্য হয়েছে। তাদের ভোটেই সভাপতি নির্বাচত হয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র করে এসকল অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। পূর্বের কিছূ ভুলক্রুটি হয়ে থাকলেও সামনে যাতে এগুলো না হয় সেদিকে ব্যবস্থা নিবেন বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।